ইউএস ইমিগ্রেশন কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছে নতুন নাগরিকত্ব পরীক্ষা ২০২৫ ‘নাগরিকত্ব সিভিক্স টেস্ট’। আগামী অক্টোবর মাস থেকে কার্যকর এ পরীক্ষা নাগরিকত্ব প্রার্থীদের জন্য আরো বিস্তৃত ও কঠোর মূল্যায়ন নিশ্চিত করবে। নতুন পরীক্ষার মূললক্ষ্য প্রার্থীদের মার্কিন ইতিহাস, সরকার এবং নাগরিক নীতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান নিশ্চিত করা, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান, আইন ও সমাজের মূলনীতি বুঝে যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, যারা ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ প্রকাশিত ফেডারেল রেজিস্ট্রার নোটিশের ৩০ দিন পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করবেন, তাদের জন্য এ পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হবে। পরীক্ষায় মোট ১২৮টি সম্ভাব্য প্রশ্নের একটি ব্যাংক থেকে ২০টি প্রশ্ন বাছাই করা হবে। প্রার্থীদের অন্তত ১২টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে হবে। আগের পরীক্ষার তুলনায় এটি একটি বড় পরিবর্তন, যেখানে আগে ১০টি প্রশ্নে ৬টি সঠিক উত্তর যথেষ্ট ছিল। নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষক প্রার্থী পাস বা ফেল হলে পরীক্ষাটি থামবে, যা পরীক্ষার সময় সাশ্রয় করবে এবং ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করবে।
৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং ন্যায্যভাবে ২০ বছর ধরে স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিনকার্ডধারী) প্রার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত পরীক্ষা চালু থাকবে, যেখানে ২০টি বিশেষ নির্বাচিত প্রশ্নের মধ্যে ১০টি প্রশ্ন করা হবে এবং ৬টি সঠিক উত্তর দিতে হবে। ইউএসসিআইএসের মুখপাত্র ম্যাথিউ ট্র্যাগেসার বলেন, আমেরিকান নাগরিকত্ব বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র নাগরিকত্ব এবং এটি শুধু তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকা উচিত যারা আমাদের জাতীয় মূল্যবোধ ও নীতি সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করতে ইচ্ছুক। নতুন পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হবে যে নাগরিকত্ব প্রার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের সমাজে সম্পূর্ণরূপে অন্তর্ভুক্ত এবং দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম।
২০১৮ সাল থেকে ইউএসসিআইএস প্রার্থীদের জন্য নাগরিকত্ব পরীক্ষা আরো কার্যকর করার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০০৮ সালের পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্ন থাকলেও, ২০২০ সালের সংস্করণে তা ১২৮টি প্রশ্নে উন্নীত করা হয়। ২০২০ সালের পরীক্ষায় ২০টি প্রশ্নে ১২টি সঠিক উত্তর প্রয়োজন ছিল। নতুন ২০২৫ পরীক্ষায় ২০২০ সালের কাঠামো বজায় থাকলেও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নাগরিকত্ব পরীক্ষা প্রার্থীদের ইংরেজি দক্ষতা, মার্কিন ইতিহাস ও সরকারের নীতি সম্পর্কে জ্ঞান যাচাই করার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ইউএসসিআইএস নিশ্চিত করছে যে নতুন পরীক্ষা ন্যায়পরায়ণ, মানসম্মত এবং প্রার্থীদের যথাযথ প্রস্তুতি ও সহায়তা নিশ্চিত করছে। ইউএসসিআইএসের ওয়েবসাইটে ২০০৮ সালের স্টাডি গাইড সাময়িকভাবে রাখা হবে, যাতে যারা সে সময়ের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন তাদের জন্য সুবিধা থাকে।
২০২৫ নাগরিকত্ব সিভিক্স টেস্ট কার্যকর হবে ২০ অক্টোবর ২০২৫ থেকে। এর আগে যারা আবেদনপত্র দাখিল করেছেন বা ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করবেন, তারা ২০০৮ সালের পরীক্ষায় অংশ নেবেন। নতুন পরীক্ষায় প্রার্থীরা আরো বিস্তৃত প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন, যা মার্কিন ইতিহাস, সংবিধান, সরকার ও নাগরিক দায়িত্ব বিষয়ে তাদের জ্ঞান যাচাই করবে। ইউএসসিআইএসের ডিরেক্টর জোসেফ এডলো পূর্বে উল্লেখ করেছেন, ‘বর্তমান পরীক্ষা অনেকটা সহজ। নাগরিকত্ব প্রার্থীদের জন্য আরো চ্যালেঞ্জিং এবং বিস্তারিত পরীক্ষা প্রয়োজন। নতুন নীতিমালার অংশ হিসেবে প্রার্থীদের ‘ভালো নৈতিক চরিত্র’ যাচাই করা হবে। এটি শুধু অপরাধমূলক কার্যকলাপের ভিত্তিতে নয়, বরং প্রার্থীর সামগ্রিক সামাজিক আচরণ ও অন্তর্ভুক্তি বিবেচনা করবে। এছাড়া প্রতিবেশী তদন্ত এবং আবেদনপত্রের আগে পাঁচ বছরের সময়কাল অন্তর্ভুক্ত থাকবে, যা প্রার্থীর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক আচরণ আরো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করবে।
নতুন পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত নীতি পরিবর্তনগুলো হলো অবৈধভাবে ভোট দেওয়া, ভোটে নিবন্ধন বা নাগরিকত্ব সম্পর্কিত মিথ্যা দাবি করা প্রার্থীদের নাগরিকত্বের যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করা। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের সঙ্গে এটি সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা আইনানুগ অভিবাসীদের একজাতীয় আমেরিকান পরিচয় নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে।ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায়, নাগরিকত্ব পরীক্ষা প্রায় ১৯০০ সালের গোড়া থেকেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯০৮ সালে স্থানীয় আদালত এবং অভিবাসন সংস্থা প্রার্থীর সংবিধানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা যাচাইয়ের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ১৯৩০-এর দশকে তৎকালীন ইমিগ্রেশন এবং ন্যাচারালাইজেশন সার্ভিস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার প্রক্রিয়ার মানসম্মত ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়েছিল। ১৯৪০ সালের ন্যাশনালিটি অ্যাক্ট নাগরিকত্ব পরীক্ষার আওতায় সংবিধান ও মার্কিন সরকারের জ্ঞানের গুরুত্ব আরো সম্প্রসারিত করেছিল।
২০২৪ সালের আর্থিক বছরে প্রায় ৮ দশমিক ১৮ লাখ বিদেশি নাগরিক মার্কিন নাগরিকত্ব অর্জন করেছেন। এর মধ্যে মেক্সিকানরা শীর্ষে (১.০৭ লাখ, ১৩ শতাংশ) এবং ভারতীয়রা ৪৯ হাজারের বেশি (৬ শতাংশ)। নতুন পরীক্ষা নিশ্চিত করবে যে প্রার্থীরা কেবল মৌলিক জ্ঞানেই নয়, বরং আইন, সংবিধান ও নাগরিক দায়িত্বের ব্যাপক ধারণা অর্জন করবে। ২০২৫ নাগরিকত্ব সিভিক্স টেস্ট প্রবর্তনের মাধ্যমে প্রার্থীদের ওপর চাপ এবং প্রস্তুতির প্রয়োজন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে। ২০টি প্রশ্নের মধ্যে কমপক্ষে ১২টি সঠিক উত্তর দিতে হবে, যা আগের ১০ প্রশ্নের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ কঠিন। ফলে প্রার্থীদের মার্কিন ইতিহাস, সরকার ও নাগরিক নীতি সম্পর্কে গভীর ও বিস্তৃত জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজন হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষক প্রার্থী পাস বা ফেল করার সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার সময় সীমিত থাকবে, যা সাক্ষাৎকারের সময় কমানো এবং প্রার্থীর মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে, নতুন পরীক্ষার প্রভাব মার্কিন সমাজে একজাতীয় পরিচয় নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। যারা নাগরিকত্ব অর্জন করবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও সংবিধান সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকবে এবং নাগরিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন। এটি স্থানীয় ও ফেডারেল সরকারে অংশগ্রহণ, ভোটাধিকার প্রয়োগ এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
অন্যদিকে নতুন পরীক্ষার কঠোরতা কিছু প্রার্থীর জন্য অতিরিক্ত চাপ এবং অসুবিধার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যারা ইংরেজিতে দুর্বল, প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ সীমিত বা অভিবাসনের আগে রাজনৈতিক বা সামাজিক দুর্যোগে আক্রান্ত ছিলেন, তাদের জন্য পরীক্ষা আরো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। প্রার্থীর নৈতিক চরিত্র যাচাই এবং প্রতিবেশী তদন্তের মতো নীতিও বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। সমালোচকরা মনে করছেন, এটি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও গোপনীয়তার সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়া নতুন পরীক্ষার কঠোরতা নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আগত বা সীমিত শিক্ষিত প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বৈষম্যের ঝুঁকি বৃদ্ধি করতে পারে। ফলে নতুন নাগরিকত্ব নীতি দেশের অভ্যন্তরীণ বৈচিত্র্য এবং অভিবাসী অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়ার ওপর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলতে পারে।