শহীদুজ্জামান সেলিম। অভিনয় জগতের এক অনন্য নাম। মঞ্চ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ওটিটি- সব মাধ্যমেই তাঁর বিচরণ। চার দশকের শিল্পী জীবনে বারবার অভিনয়ে নিজেকে ভেঙে নতুনভাবে পর্দায় তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন। সম্প্রতি তিনি টিভি নাটকের নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনের পর তিনি সংগঠনের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে এনে একে শক্তিশালী ও গতিশীল করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলমগীর কবির
প্রশ্ন: ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর আপনার অনুভূতি কী?
শহীদুজ্জামান সেলিম: ডিরেক্টরস গিল্ডের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, এজন্য আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে যোগ্য মনে করা হয়েছে, তাই এই জয় এসেছে।
প্রশ্ন: আপনার সংগঠন নিয়ে প্রথম পরিকল্পনা কী?
শহীদুজ্জামান সেলিম: আমি সংগঠনকে শক্তিশালী, গতিশীল এবং সুসংহত অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। নির্মাতাদের মর্যাদা ও তাঁদের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এছাড়া নতুন নির্মাতাদের গুণগত মান উন্নয়নের জন্য কাজ করতে চাই।
প্রশ্ন: পূর্ববর্তী কমিটির কার্যক্রম নিয়ে আপনার কী মতামত?
শহীদুজ্জামান সেলিম: গত কিছু সময় ধরে স্থবিরতা ছিল, তবে সেটা কাটানোর জন্য আমরা দক্ষ সংগঠন গড়ে তুলতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমরা ৪৪ জন, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি, সবাই সংগঠনকে ভালোবাসি এবং একসঙ্গে কাজ করে সংগঠনকে শীর্ষে নিয়ে যেতে পারব।
প্রশ্ন: অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি হওয়ার অভিজ্ঞতা ডিরেক্টরস গিল্ডের কাজে কীভাবে কাজে লাগবে?
শহীদুজ্জামান সেলিম: অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এখন, নির্মাতাদের সংগঠনের সভাপতি হিসেবে, আমার চিন্তাভাবনা নির্মাতার দৃষ্টিকোণ থেকে হবে। ১৮ বছর নির্মাতা হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা, এখন সংগঠনের উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে চাই।
প্রশ্ন: নির্বাচিত হওয়ার পর ডিরেক্টরস গিল্ডকে কীভাবে এগিয়ে নিতে চান?
শহীদুজ্জামান সেলিম: আমার লক্ষ্য হবে, সংগঠনকে একটি সুসংহত এবং কার্যকরি অবস্থানে নিয়ে যেতে। সিনিয়র নির্মাতাদের সঙ্গে নতুন নির্মাতাদের যোগাযোগ স্থাপন করে ইন্ডাস্ট্রিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে চাই।
প্রশ্ন: অভিনয়ের কাজের পাশাপাশি সংগঠন পরিচালনা কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে?
শহীদুজ্জামান সেলিম: টাইম ম্যানেজমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি আগেও একসঙ্গে অনেক দায়িত্ব পালন করেছি। অভিনয়ের কাজ ও সংগঠনের কাজ একসঙ্গে চালানো আমার জন্য কোনো সমস্যা হবে না।
প্রশ্ন: অভিনয়ের মাধ্যমে কখনো নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন?
শহীদুজ্জামান সেলিম: নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা অনেকের কাছ থেকেই শুনি। কিন্তু আমি শুধু অভিনয়ের জন্য যা করার, সেটাই করি। নিজেকে যে ছাড়িয়ে যেতে হবে, সেটা কখনোই ভাবি না। আসলে ভালো বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্র পেলে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রশ্নটা থাকে না। তখন চরিত্রের প্রতি সৎ থেকে কাজ করলে ফলটা আসে।
প্রশ্ন: এই যে চরিত্রকে নিজের মতো করে আবিষ্কার করা, এটা কীভাবে আয়ত্ত করেন?
শহীদুজ্জামান সেলিম: এটা নিজস্ব চর্চা ও ভাবনার বিষয়। চর্চা থেকেই ভেতরের প্রবৃত্তিগুলো বের হয়। গানের রেওয়াজের মতো এই চর্চা অপরিহার্য। আবার কেউ মনে করেন, কারও অভিনয় দেখে শেখা যায়। এটা আমার কাছে মনে হয় না। দেশ-বিদেশের অনেকের অভিনয় দেখে ভালো লাগে। হলিউডের আল পাচিনো, রবার্ট ডি নিরো, ভারতের কমল হাসান এমন আরও অনেকেই আছেন। তাঁদের অভিনয়ে আমি মুগ্ধ হই। কিন্তু অভিনয় নিজের মতো করি।
প্রশ্ন: একটা সময় অভিনয়শিল্পীরা মঞ্চ বা কোনো স্কুলিংয়ের মধ্য দিয়ে এসেছেন। কিন্তু এখন অনেকে সে অর্থে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই অভিনয়ে আসছেন। এই বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
শহীদুজ্জামান সেলিম: অভিনয়টা যাঁর যাঁর ভেতরের বিষয়। আমি এখনো থিয়েটার করি। অন্যরা করছেন কি না, ধারণা নেই। কিন্তু এখন স্কুলিংয়ের সুযোগ অনেক বেশি। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। কেউ অভিনয় না জেনেই আসছে। এসব অভিনেতা জনপ্রিয়ও হন। আবার কালের স্রোতে হারিয়েও যান। টিকে থাকার জন্য সার্বক্ষণিক চর্চাটা জরুরি।