১৯ এপ্রিল ২০২৫, শনিবার, ০৫:০০:০১ পূর্বাহ্ন


সাত বছরের রেকর্ড : ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ অভিবাসী গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৩-২০২৫
সাত বছরের রেকর্ড : ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ অভিবাসী গ্রেফতার ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্ট একজন অভিবাসীকে গ্রেফতার করছে


২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন কর্মকর্তারা আগের সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসী গ্রেফতার করেছে। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) এর তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন দেশটির অভিবাসন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ডিএইচএস এর তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির প্রথম ২২ দিনে যত অভিবাসী গ্রেফতার হয়েছে, তা গত সাত বছরে কোনো এক মাসে হয়নি। ফেব্রুয়ারির প্রথম ২২ দিনে ৩১ হাজার অভিবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটি গত সাত বছরে কোনো এক মাসে সর্বোচ্চ। অভিবাসন নীতি কঠোর করতে ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুত দক্ষিণ সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের আমলে চালু হওয়া আশ্রয় ও মানবীক সহায়তা কর্মসূচি বাতিল করেছে এবং দেশের অভ্যন্তরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে।

একের পর এক অভিযান চালিয়ে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস ) কর্মকর্তারা শুধু গ্রেফতারই করেননি, বরং আটক কেন্দ্রগুলোর ধারণক্ষমতাও পূর্ণ করে ফেলেছেন। ডিএইচএস জানিয়েছে, বর্তমানে আটক কেন্দ্রে ৪৭ হাজার ৬০০ অভিবাসী বন্দি রয়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ। যদিও প্রশাসন দাবি করছে, তারা কেবল অপরাধীদের টার্গেট করছে, কিন্তু বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইসের ধরপাকড় ক্রমশ আরো নির্বিচার হয়ে উঠছে। ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসন আটক ও গ্রেফতারের কৌশলে পরিবর্তন এনেছে, যার ফলে ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সম্পর্কও নতুনভাবে রূপ নিচ্ছে।

ন্যাশনাল ইমিগ্রেশন প্রজেক্টের আইনজীবী গ্রেসি উইলিস বলেন, আগে বোঝা যেত কোন অভিবাসীরা ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন পুরো বিষয়টিই অনিশ্চিত। তিনি আরো জানান, যদিও উভয় দলীয় প্রশাসনই কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছে, তবে বাইডেন প্রশাসনের সময়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল, কোনো ধরনের অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প প্রশাসন সেই নীতি বদলে দিয়েছে এবং নির্বিচারে অভিবাসী গ্রেফতার করছে।

প্রথম সপ্তাহ থেকেই আইস বিপুল শক্তি নিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। ব্যালিস্টিক ভেস্ট পরিহিত আইস এজেন্টদের পাশাপাশি এফবিআই, মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (ডিইএ) ও ইউএস মার্শালদের দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকা ঘিরে ফেলে অভিযান পরিচালনা করতে। ট্রেন দে আরাগুয়া গ্যাং সদস্যদের ধরার অজুহাতে বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালানো হলেও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আইসের আসল লক্ষ্য মূলত অপরাধী নয়, বরং সাধারণ অভিবাসীরা।

ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যতম প্রধান সিদ্ধান্ত ছিল বাইডেন আমলের নির্দেশনা বাতিল করা, যেখানে আইসকে কেবল জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এমন অভিবাসীদের আটক করতে বলা হয়েছিল। ট্রাম্প এখন যে কারো অবৈধ অভিবাসন অবস্থা পেলেই তাকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন। ১২ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অপরাধমূলক রেকর্ডবিহীন অভিবাসীদের গ্রেফতারের হার ২২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত আইস আটক কেন্দ্রে থাকা অভিবাসীদের মাত্র ৬ শতাংশের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল না, কিন্তু ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ সেই হার বেড়ে ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। আইসের ধরপাকড়ের নতুন কৌশল সম্পর্কে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডেভিড হাউসম্যান বলেন, তাদের লক্ষ্য যত বেশি সম্ভব গ্রেফতার করা, ফলে তারা খুব বেশি বিচার-বিবেচনা করছে না। তাছাড়া অভিবাসীদের মধ্যে ভয় ছড়ানোও এই নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য। ওবামা প্রশাসনের সাবেক আইস প্রধান জন স্যান্ডওয়েগ জানান, ট্রাম্প প্রশাসন শুধু বড় সংখ্যায় অভিবাসী বহিষ্কার করতে চাচ্ছে আর এজন্য অপরাধমূলক রেকর্ডবিহীন ব্যক্তিদেরই সহজ টার্গেটে পরিণত করেছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, প্রকৃত অপরাধী বা গ্যাং সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দাগিরি ও তদন্তের প্রয়োজন হয়, যা সময়সাপেক্ষ। কিন্তু অবৈধ অভিবাসীদের নির্বিচারে ধরে ফেলা সহজ এবং দ্রুত করা যায়।

অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করেছে এবং মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করেছে। বিশ্লেষণ বলছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে আইসের গ্রেফতার হওয়া ৭৮ শতাংশ অভিবাসীর হয় সামান্য অপরাধমূলক রেকর্ড ছিল, নয়তো একেবারেই কোনো অপরাধ ছিল না। কিন্তু এখন গ্রেফতার অভিযান আরো নির্বিচার হয়ে উঠেছে।

নতুন এই কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা বেড়েছে। অভিবাসী অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এভাবে নির্বিচারে অভিবাসীদের লক্ষ্যবস্তু করার ফলে অনেক নিরপরাধ মানুষও গ্রেফতার ও বহিষ্কারের শিকার হতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্ট করেছে যে, তারা এই নীতি চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।

শেয়ার করুন