নিউইয়র্কে এক ধরনের চা পাওয়া যায়, যা ঈদ-পার্বণে পান করতে হয়। চায়ের দেশ সিলেটে কিন্তু অনেক রকম চা আছে। রেগুলার চা, সাতরঙ চা ইত্যাদি। গেন্ডারিয়ার জসীমের জটিল চায়ের দোকানে পাওয়া যায় পাঁচ মিশালি চা, পুদিনা পাতার চা, মরিচের চা, তেঁতুল চা- এমনি নানারকম চা। আবার অফিস-আদালতে এক রকম চা পাওয়া যায়, যার দাম রকমভেদে কয়েক হাজার টাকা। হাতের মুঠোয় কয়েকটি হাজার টাকার নোট চেপে ধরে কর্তাব্যক্তিকে চুপিসারে দিয়ে বলা হয়- স্যার, এটা দিয়ে চা খাবেন। নির্বাচনের সময় একধরনের চা পাওয়া যায়। এর নাম ভোটের চা। এই সময় এককাপ চা দিয়ে ভোটারদের মন খুশি করার চেষ্টা করা হয়।
তারপর?
ভোট শেষ। চা-ও শেষ!
অফিসে অনেক কর্তাব্যক্তি আছেন, যাদের শুধু চায়ের টাকা দিয়ে খুশি করা যায় না। শুধু চায়ে মন ভরে না, সঙ্গে টা-ও চায়। বিস্কুট-টিস্কুট এই আর কি!
আপনারা আবার অন্যকিছু ভাববেন না যেন!!
আপনারা কি ভেবেছেন আমি শুধু শুধু চা নিয়ে এতক্ষণ কথা বলেছি? আসলে তা নয়।
ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় অর্থাৎ চাঁদরাতে ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে একটি রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় একজন টিভি সাংবাদিক (!) এসে রেস্টুরেন্টের স্বত্বাধিকারীর কানে কানে কি যেন বলে চলে গেলেন। জানতে চাইলাম, তার সঙ্গে কানে কানে কি কথা হলো! বললেন, তিনি চা খেতে চাইলেন। বললাম, এককাপ চা দিলেই তো পারতেন? তিনি হেসে বললেন, এই চা সেই চা নয়, অন্য চা! ঈদের বিশেষ চা! নিশ্চয়ই আপনাদের ব্যাখ্যা করে বলতে হবে না, সেই বিশেষ চা-টি কী!
এবার আপনাদের চা নিয়ে একটা গল্প শোনাই।
বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছে। ছেলে বাবাকে জিজ্ঞেস করলো বাবা বিশ্বকাপ কি? বাবা বিরক্ত হয়ে জবাব দিলো বিশ্বকাপ মানে বড়কাপ। ছেলে বললো, আমাদের চায়ের কাপের চেয়ে বড়? হ্যাঁ বড়। ছেলে বায়না ধরলো। কাঁদতে লাগলো এ্যা এ্যা আমি ওই বড় কাপে চা খাবো।
তা খাবেন, নাকি এই বড় কাপে এক কাপ চা!!
ডিম বিক্রি করছে বিউটি পার্লার!
ব্যবসার প্রসারের জন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হচ্ছে বিজ্ঞাপন। এতে অভিনবত্বের মাত্রা যত বেশি, বিজ্ঞাপনের সার্থকতাও ততটাই বেশি। সম্ভবত সে ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নিউইয়র্কের একটি পরিচিত স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড তাদের প্রতিটি শাখায় ৩.৩৭ ডলারে একডজন ডিম বিক্রির ঘোষণা দিয়ে শহরে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
স্কিন কেয়ার কোম্পানিটির নাম- দ্য অর্ডিনারি। নিউইয়র্কে যখন একডজন ডিমের দাম ৮ থেকে ১২ ডলার, তখন তারা একডজন ডিম ৪ ডলারের কমে বিক্রির ঘোষণা দেয়। তারা আরো জানায়, প্রত্যেকে এই দামে দুই ডজন ডিম ক্রয় করতে পারবেন। সস্তায় তাদের এই ডিম বিক্রির সময় মূলধারার সব সংবাদপত্র ফলাও করে প্রচার করেছে।
ইকোনমিক টাইমস নামের একটি পত্রিকা শিরোনাম করেছে- স্কিন কেয়ার ব্র্যান্ড সেলিং এগ অ্যান্ড ইট ইজ নট এন এপ্রিল ফুল জোকস। তাদের দুটি শাখা ২৬ প্রিন্স স্ট্রিট-নোলিটা এবং ৪৭৫ ফিফথ অ্যাভিনিউ-ফিফথ অ্যাভিনিউ, ক্রেতাদের বিপুল ভিড় লক্ষ করা গেছে।
এমনি আরেকটি বিজ্ঞাপন দিয়েছে পাকিস্তানের একটি কমিউনিটি সেন্টার। অভিনব এ বিজ্ঞাপনে ব্যাপক সাড়া পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘দম থাকলে ময়দানে আসো, দ্বিতীয় বিয়ে করে দেখাও।’ অর্থাৎ পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরের ওই কমিউনিটি সেন্টারে একাধিক বিয়ে করছেন এমন পুরুষের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যারা দ্বিতীয় বিয়ে করছেন তাদের জন্য মোট খরচের ৫০ শতাংশ, তৃতীয় বিয়েতে ৭৫ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে। আর যারা চতুর্থ বিয়ে করছেন তাদের কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া ও খাবারের জন্য কোনো টাকাই পরিশোধ করতে হবে না।
তবে এই অফারের ক্ষেত্রে শর্তও জুড়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। শর্তটি হলো, দ্বিতীয় বা তার বেশি বিয়ে করলেও কমিউনিটি সেন্টারটি বুকিং করতে হবে প্রথম স্ত্রীকে। যদি প্রথম স্ত্রী হল বুকিং না করেন, তাহলে এই অফার পাওয়া যাবে না। বিজ্ঞাপনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। বুকিংও আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে কমিউনিটি সেন্টারটির।
নিউইয়র্ক সিটির সবকটি রেস্টুরেন্টে খেতে চান!
আপনি চাইলেই নিউইয়র্কের সব রেস্টুরেন্টের খাবার টেস্ট করতে পারবেন। তবে এজন্য আপনাকে সময় দিতে হবে। গুগলের তথ্য অনুসারে নিউইয়র্কে মোট ১৭ হাজার ৬১৯টি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যদি প্রতিটি রেস্টুরেন্টে তিনটি আইটেম দিয়ে একবেলা করে খান, তাহলে মোট সময় লাগবে ২২ বছর ৯ মাস। আর প্রতিদিন একটা রেস্টুরেন্টে খেলে সময় লাগবে ৭২ বছর। গুগলের তথ্য অনুসারে নিউইয়র্ক সিটিতে ১৭ হাজার ৬১৯টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। পাঁচটি বরোর মধ্যে ম্যানহাটনে সবচেয়ে বেশি রেস্তোরাঁ। যার সংখ্যা ৬ হাজার ৪১৮, ব্রুকলিনে ৪ হাজার ৮৪৫, কুইন্সে ৩ হাজার ৩৯৪, ব্রঙ্কসে ২ হাজার ৭৮ এবং স্টেটেন আইল্যান্ডে ৮৮৪টি রেস্তোরাঁ রয়েছে।
নিউইয়র্ক স্টেটের তথ্য অনুসারে, ২০২০ সালে নিউইয়র্ক সিটির জনসংখ্যা ছিল ৮.৮ মিলিয়ন। যার অর্থ নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতি ১ হাজার বাসিন্দার জন্য দুটি রেস্তোরাঁ রয়েছে। নিউইয়র্ক সিটিতে ১ হাজার ৮৯৭টি বার এবং পাব রয়েছে যেখানে স্পোর্টস বার, ককটেল বার, ওয়াইন বার এবং অন্যান্য জনপ্রিয় বিভাগ রয়েছে।
ম্যাকডোনাল্ডস, হোয়াইট ক্যাসেল, ওয়েন্ডি’স এবং অন্যান্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের ৩৫৯টি ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ রয়েছে নিউইয়র্কে। এ সিটিতে সবচেয়ে বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে মেক্সিকান খাবারের, যার পরিমাণ ১ হাজার ৩৭৩টি। এরপর রয়েছে চাইনিজ (১,১৮৮), ইতালীয় (৫৬২), আমেরিকান (৩৫০) এবং জাপানি (৩১২) খাবার।
এক জরিপে দেখা যায়, স্প্যানিশ রেস্তোরাঁগুলো সর্বোচ্চ স্কোর পায়। এসব রেস্তোরাঁর গড় রেটিং সর্বোচ্চ ৪.৮৩ শতাংশ। এর পরেই আছে থাই রেস্টুরেন্ট। এদের রেটিং ৪.৬৭ শতাংশ এবং ভারতীয় রেস্তোরাঁর রেটিং হচ্ছে ৪.৫৪ শতাংশ।
নিউইয়র্কের ফরাসি রেস্তোরাঁগুলো সবচেয়ে ব্যয়বহুল। প্রতি খাবারের গড় দাম ১৯.৭৯ ডলার। তারপর রয়েছে সাউদার্ন (১৯.৩০ ডলার), থাই (১৯.২১ ডলার) এবং স্প্যানিশ খাবারের গড়মূল্য (১৮.৯৯ ডলার)।
নিউইয়র্ক সিটিতে রেস্তোরাঁয় ডেলিভারি করতে গড় সময় লাগে ২৪ মিনিট। এতে খাবার তৈরির সময় বিবেচনা করা হয় না এবং একটি রেস্তোরাঁয় ডেলিভারি করতে গড় সময় কত সময় লাগে তা বিবেচনা করা হয়। তবে উইকেন্ডে ডেলিভারি সময় দ্রুত হয়। যা গড়ে ২২.৫ মিনিট। অন্যদিকে কর্মদিবসে ডেলিভারি সময় ধীর হয়, যার পরিমাণ গড়ে ২৮.৪ মিনিট। নিউইয়র্ক সিটিতে রেস্তোরাঁর ৭১.২ শতাংশ ডেলিভারি অর্ডার উইকেন্ডে হয়।
নিউইয়র্ক সিটির রেস্তোরাঁগুলোতে উইক ডে এবং উইকেন্ডে ডেলিভারি অর্ডার খাবার প্রস্তুত করতে গড়ে ২৭ মিনিট সময় লাগে।
নিউইয়র্ক সিটিতে ১ হাজার ৭৪৪টি কফিশপ এবং ৯৫৬টি ক্যাফে রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- স্টারবাকস, ডানকিন এবং অন্যান্য জনপ্রিয় চেইন স্টোর। এছাড়াও নিউইয়র্ক সিটিতে ৩৩৩টি বাবল টি-শপ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের হালাল খাবার বিক্রি করে এমন হোটেল-রেস্তোরাঁর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার; যেখানে মালয়েশিয়ান থেকে মেক্সিকান সব মেন্যুর হালাল খাবার কিনতে পাওয়া যায়।
নিউইয়র্ক ৬ এপ্রিল ২০২৫