২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১০:৫৭:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিদ্যুৎতে বিএনপির নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৮-২০২২
বিদ্যুৎতে বিএনপির নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি?


দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় শৃংখলা ফেরাতে কুইকে রেন্টাল ও বিদ্যুৎ খাতে বিশেষ আইন বাতিল করবে বলে জানিয়েছে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান দেন। গত ১৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওই কথা বলেন। তিনি বলেন,‘ বিএনপি নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনসহ এ সংক্রান্ত সব কালাকানুন বাতিল করা হবে। রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন বন্ধ করা হবে। স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে।

চাহিদা অনুযায়ী পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘উৎপাদন ও চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন অতিদ্রুত স্থাপন করা হবে। বাপেক্স ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দেশীয় খনিজ ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একইসঙ্গে দেশীয় প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, বঙ্গোপসাগরে সম্ভাবনাময় গ্যাস-পেট্রোলিয়াম ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ উত্তোলনে দ্রুত কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে টেকসই ও নিরাপদ করতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভর জ্বালানিনীতি গ্রহণ করা হবে। বিশেষ জোর দেওয়া হবে জল-বিদ্যুৎ উৎপাদনে। খালেদা জিয়া প্রণীত বিএনপির ভিশন-২০৩০ তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ঘোষিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

মির্জা ফখরুলের এ নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তব সম্মত সেটা নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সরকারের কুইক রেন্টালের মাধ্যমে অধিকাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনকে চ্যালেঞ্জ করে যে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা তিনি বলেছেন। তবে এটা ঠিক, বিএনপি এটা সময়োপযোগী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন। বিশেষ করে দেশে শতভাগ বিদ্যুৎতায়নের ঘোষণা দেয়ার পরও যেভাবে আবারও পুরানো দিনে ফিরেছে বিদ্যুৎ। লোড শেডিংয়ে অস্থির।

 সেখানে বিএনপির থেকে এ প্রত্যাশা আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু যদি ধরেও নেয়া হয়, আগামী নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি ক্ষমতা পেল। তখন কী ওই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারবে? কারণ বিদ্যমান কুইক রেন্টাল পদ্ধতি এড়িয়ে কিভাবে ওই প্লানগুলো সম্পাদন করে শতভাগ বিদ্যুৎ মানুষের মাঝে বিতরণ করবেন। অবশ্য এ ব্যাপারে তার বিস্তারিত রূপরেখা- তিনি বলেননি। 

সংক্ষিপ্ত আকারে যা বলেছেন তা হলো-  

১.স্বচ্ছ প্রতিযোগিতামূলক আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে।

২. দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে টেকসই ও নিরাপদ করতে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা কমিয়ে ক্রমান্বয়ে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ নবায়নযোগ্য শক্তি নির্ভর জ্বালানিনীতি গ্রহণ করা হবে।

৩. জল-বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিশেষ জোর দেওয়া হবে ।

৪. খালেদা জিয়া প্রণীত বিএনপির ভিশন-২০৩০ তে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে ঘোষিত পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। 

এদিকে গত ২১ মার্চ ২০২২ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রর উদ্বোধন করেন। সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে আসে শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা। দেশের প্রতিটি জনপদে, প্রতিটি ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করল সরকার সে ঘোষণা দেয়া হয়। এই অনন্য সাফল্য উদযাপনে আলোয় ঝরনাধারায় উদ্ভাসিত হয় সন্ধ্যায় রাজধানীর হাতিরঝিল। হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটারে আড়ম্বর আয়োজনের আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। এবং রাতের অন্ধকার সরিয়ে আতশবাজির বর্ণিল ছটায় গোটা হাতিঝিল ও তার আশপাশ পরিষ্ফুটিত হয়। 

সে সময় বলা হয়েছে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুতায়ন হয়েছে সব শহর, গ্রাম, চর, দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। স্বাধীনতার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনগোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের সুবিধা পেয়েছিল। এরপর গত এক যুগে বাকি ৫৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎসংযোগের আওতায় এসেছে। এক যুগে এ অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিববর্ষ পূর্তিতে দেশের সব নাগরিককে বিদ্যুতের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল সরকার। 

ওই সময় বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে-  বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা গত ১২ বছরে পাঁচ গুণ বেড়েছে। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরো ১৩ হাজার ২১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় আছে। ভারত থেকে বর্তমানে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু সাধারণ শহর বা গ্রাম এলাকার বাইরে দুর্গম চরাঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছে গেছে বিদ্যুতের আলো। সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবল টেনে সংযোগ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎলাইনের। আবার পার্বত্য অঞ্চলের যেসব স্থানে বিদ্যুতের লাইন নেওয়া দুঃসাধ্য সেখানে সোলার প্যানেল বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎসেবার বাইরে কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও নির্দেশনায় এক যুগে যে গতিতে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ঘটেছে তা অভাবনীয়।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে এখানে কোন সিস্টেমে ভুল ছিল, যা বিএনপি সরকারে এসে পরিবর্তন করে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। 

আসলে বিদ্যুৎ নিয়ে তেলেসমতি যুগ যুগ ধরে। সাধারণ মানুষ এগুলো আর শুনতে চায়না বুঝতেও চায়না। বিগত প্রতিটা সরকারের আমলেই বিদুৎতে মানুষ কষ্ট পেয়েছে। যদিও এবার বলা হচ্ছে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। কিন্তু মূল কথা কুইকরেন্টাল কখনই টেকসই ব্যবস্থা নয়। দেশের রিজার্ভ খরচ করে প্রতিযোগিতার মার্কেট থেকে জ্বালানি ক্রয় করে সেখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিতরণ কখনই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। ওটা হতে পারে সাময়িক। কিন্তু সে কুইকরেন্টাল এখন মড়ার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ জ্বালানি সংগ্রহ করে দিলে তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দিবে। না দিতে পারলে নেই। কিন্তু শত শত কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বসে বসে রাজস্ব কোষাগার থেকে নিয়ে যাচ্ছে কুইকরেন্টালওয়ালারা। 

শতভাগ বিদুৎতায়নের পর এখন প্রচন্ড লোড শেডিং, নজীরবিহিন ঘোষণা দিয়ে এলাকাভিত্তিক লোড শেডিং করন। এখন শিল্পাঞ্চলেও প্লান করে সময় দিয়ে লোডশেডিং করার ঘোষণা দেশের শিল্প কলকারাখান  ও উৎপাদন ব্যাহত হবে এটাতে সন্দেহ নেই। যা রপ্তানীতে সিডিউল বিপর্যয় ও অর্ডার হারানো এমনকি কাংখিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে বলেই মনে করা হচ্ছে।   

তবে আশার কথা শুনিয়েছেন বিদুৎ প্রতিমন্ত্রী। সহসাই এ সঙ্কট কেটে যাবে। মানুষও তাই আশা করছে। এসময়ে প্রায় সত্তর হাজার কোটির টাকার মত রাজস্ব কোষাগার থেকে ভর্তুকি দিয়ে পাওয়া বিদ্যুৎ এখন যদি দুই যুগ আগের স্থানে ফিরে যায়। তাহলে এরচেয়ে কষ্টের আর কিছু থাকবে না, বাংলাদেশের গরীব দুঃখি মানুষের।


শেয়ার করুন