২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৩৩:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


গভীর সমুদ্রে অনুসন্ধানের কাজ পাচ্ছে মার্কিন কোম্পানি
ক্ষমতাধর দেশকে বাগে আনতে মহা কৌশলী সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
ক্ষমতাধর দেশকে বাগে আনতে মহা কৌশলী সরকার


দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি বিশ্বকে নিজেদের কব্জায় আনতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্ধুত্ব বজায় রাখার কূটনৈতিক তৎপরতা। এর পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করে অর্থনৈতিকভাবে আরো সমৃদ্ধ হতে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা। আর এসব লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী দুই সপ্তাহে তিন দেশ সফর শুরু করেছেন। এছাড়াও রয়েছে দেশে নিজেদের রাজনৈতিক প্রভাব অক্ষুন্ন রেখে বিদেশের শক্তিশালী বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোকে নাগালে রাখার নানাবিধ কৌশল গ্রহণ ও তার বাস্তবায়ন। 

বিশ্বে ক্ষমতাধরদের কাছাকাছি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরে আছেন। সেখান থেকে তিনি যাবেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে এধরনের সফরকে কূটনৈতিক মহল খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। টানা দুই সপ্তাহের এই সফর নানা কারণে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই তারা মনে করেন। বলা হচ্ছে বিশেষ করে এবারের জাপান সফর দ্বিপক্ষীয় অর্থনীতি ও ভূ-রাজনীতির জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 

শুরুতেই জাপান সফর 

ইতিমধ্যে জাপান পৌঁছে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্টিজেন্ট। জাপান সফরে বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বার্থ বিশেষভাবে রক্ষা করবেন সরকার প্রধান। অনেকে মনে করেন নির্বাচনের বছরে এ সফরের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ক্ষমতাধরদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টাই প্রধানমন্ত্রীর মূল টার্গেট।  যদিও বলা হচ্ছে জাপান সফরকালে টোকিওর সঙ্গে আটটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘দুই প্রধানমন্ত্রীর (বাংলাদেশ ও জাপান) উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হতে পারে। তিনি আরও জানান, এই সফরকালে কৃষি, মেট্রোরেল, শিল্প উন্নয়ন, জাহাজ রিসাইক্লিং, শুল্ক সংক্রান্ত বিষয়, মেধা স্বত্ব, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। গত মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ প্রস্তাব দেন। এরই মধ্যে জাপান বাংলাদেশের জন্য ১২৭ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব অনুমোদন করে। বাংলাদেশ চায় ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে যুক্ত অন্য দেশগুলোর মতো জাপানের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত থাকতে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের কৌশলগত অংশীদারিত্ব উন্নীত করতে। জাপান এরই মধ্যেই খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে। এই কৌশলগত অংশীদারিত্বের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সম্প্রসারণের আওতায় সমরাস্ত্র কেনাকাটার বিষয়টি থাকায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রাডারসহ অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং সামরিক প্রযুক্তি নয়; বরং পেট্রোল বোটের মতো নিরাপত্তা সামগ্রী ক্রয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে। 

সবচে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র সফর 

জাপান সফর শেষ করেই প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফর। ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছে আগামী ১ মে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে ৫০ বছরের অংশীদারিত্ব উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক সেমিনারে এক অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছরের অংশীদারিত্বের প্রতিফলন” শীর্ষক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করবেন। একই দিন শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে এক একান্ত বৈঠকে যোগ দেবেন। সেমিনারে বাংলাদেশের উন্নয়নের জয় যাত্রা ও বিগত পাঁচ দশকে দেশে বিশ্বব্যাংকের কার্যক্রম তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে। এর আগে ২৯ এপ্রিল বিকেলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। আগামী ২ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ‘ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা একান্ত বৈঠকে যোগ দেবেন। পরে ইউএস চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুজান পি ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। একই দিনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়ালের আমন্ত্রণে মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথে একটি ‘উচ্চ পর্যায়ের নির্বাহী’ রাউন্ড টেবিলে মূল বক্তা হিসেবে যোগ দেবেন। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গের সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সবশেষ যুক্তরাজ্য সফর 

জাপান যুক্তরাষ্ট্র শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শেষ সফর করা দেশ যুক্তরাজ্য। ৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য কমনওয়েলথ দেশের রাজা ও রাণী হিসাবে তৃতীয় চার্লস এবং তার পতœী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেকে যোগদানের জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ওয়াশিংটন ত্যাগ করবেন। প্রায় ১৩০ জন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান ব্রিটিশ রাজার আসন্ন রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন, যা ৭০ বছর পর হতে চলেছে। সফরকালে কমনওয়েলথ মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ মন্ত্রীও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এসব সফরের মাধ্যমে সরকার দেষ ও জাতির গৌরবজ্ঝল দিকেকে যেমন একদিকে তুলে ধরা হবে তেমনি তাদের শাসনামলে বাংলাদেশের অগ্রগতিকেও আরো প্রকাশ্যেই নিয়ে আনবে। কেনো কি কারণে বাংলাদেশে এধরনের সরকারের ধারাবাহিকতা রযেছে সিটি তুলে ধরা হবে। তাই টানা পনের দিনের সফরে আসল আসলে বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজে মার্কিন কোম্পানি

বিশ্ববাণিজ্যে পণ্যের এক-চতুর্থাংশ মালপত্র বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে যায়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে জ্বালানি তেল ও এলএনজির নিরাপদ করিডোর বঙ্গোপসাগর। দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টি অনেকটাই নির্ভর করে বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর বঙ্গোপসাগরের ওপর। আর এমনই বাস্তবতায় জানা গেছে, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ পাচ্ছে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিল। কোম্পানিটি সাগরের ১৫টি ব্লকে এই অনুসন্ধান চালাতে চায় বলে সরকারের কাছে লিখিত প্রস্তার জমা দিয়েছে বলে ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। পত্রিকাটি দাবি করেছে ইতোমধ্যে প্রানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবের ব্যাপারে নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন। তবে মার্কিন কোম্পানিটির সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করার আগে তার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের। ওই পত্রিকায় এব্যাপারে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, এক্সন মবিলের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। আমরা এ প্রস্তাবের ব্যাপারে ইতিবাচক আছি। প্রধানমন্ত্রীও এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে বলেছেন। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করবে। তিনি বলেন, অনুসন্ধান শেষে যদি সবকিছু ফলপ্রসূ হয়, তাহলে এক্সন মবিলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তি (পিএসসি) করা হবে। এজন্য পিএসসিকেও ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। 

অন্যদিকে  প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, সব ঠিকঠাকমতো চললে চলতি বছরেই মার্কিন কোম্পানিটির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা দেয় নানা বিতর্ক। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েই সমঝোতা করা হবে।

আসলে কি হতে যাচ্ছে..

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে  শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিলের কাজ পাওয়া আর প্রধানমন্ত্রীর টানা ১৫ দিনের তিন ক্ষমতাধর সফর একই সূত্রে গাথা। এমন ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট প্রভাব পড়বে বলেই মনে করেন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার। অন্যদিকে  বাংলাদেশে অংশগ্রণমূলক জাতীয় নির্বাচন দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ‘ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরার কথা আর কোথাও শুনিনি- বলে মন্তব্য করেন জাপানি রাষ্ট্রদূত রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। সেটা নিয়ে কম হৈ চৈ হয়নি। ফলে এসব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের তর্জন-গর্জনে সরকার বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই ক্ষমতাধর তিন রাষ্ট্রের ভূমিকা বর্তমান সময়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারও মনে করে। আর একারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেই বসেন আমেরিকা চাইলে যেকোনও দেশের ক্ষমতা উল্টাতে-পাল্টাতে পারে। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান, আমেরিকা আর যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে টানা পনের দিনের সফর একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি এক্সন মবিলের কাজ পাওয়ার বিষয়টিও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আর এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলিতে মাঠের রাজনীতি আসলে কোনদিকে যায় তা দেখার অপেক্ষায় সবাই।

শেয়ার করুন