২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:১৫:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন জুয়েল রানা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৪-২০২৩
বাসের ধাক্কায় প্রাণ হারালেন জুয়েল রানা জুয়েল রানা


জুয়েল রানা। বয়স মাত্র ৪৩। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, বন-জঙ্গল, জেলজলুম খেটে স্বপ্নে দেশ আমেরিকায় এসেছিলেন। এই পথ ভঙ্গুর জেনেও বহু বাংলাদেশি লাখ লাখ টাকা খরচ করে আমেরিকায় আসেন। সেভাবেই স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসেছিলেন মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুরের সন্তান জুয়েল রানা। মাত্র সাত মাস আগে ১৫ লাখ টাকা খরচ করে তিনি আমেরিকায় আসেন। আমেরিকায় এসে স্বপ্নযাত্রার শুরুতেই নিউইয়র্ক পাবলিক স্কুল বাসের ধাক্কায় মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারালেন জুয়েল রানা। মৃত্যু শুধু জুয়েলের হয়নি, মৃত্যু হয়েছে তার স্বপ্নের, মৃত্যু হয়েছে তার পরিবারের স্বপ্নের। জুয়েলের সঙ্গে তার স্বপ্নকেও কফিনে বন্দি করে দেশে পাঠানো হয়। গত ২৬ এপ্রিল নামাজে জানাজা শেষে তার লাশ বাংলাদেশে পাঠানো হয়। গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে তার লাশ পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হবে।

জানা গেছে, জুয়েল রানা বিদ্যুৎচালিত সাইকেলে (ইলেকট্রিক স্কুটার) ডেলিভারি কাজের সময় ২০ এপ্রিল অর্থাৎ ঈদের আগের দিন বিকাল সোয়া ৫টায় কুইন্স বুলোভার্ড এবং জ্যাকসন অ্যাভিনিউতে দুর্ঘটনার শিকার হন।

স্কুল বাসের ধাক্কায় ছিটকে পড়েন জুয়েল। সাইকেলটি চাকার নিচে পড়ে দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জ জেলা সদরের বাংলাবাজার এলাকার জজ মিয়ার সন্তান জুয়েলের এক শিশুপুত্র ও কন্যা, স্ত্রী এবং মা-বাবা, ভাইবোন রয়েছেন দেশে। 

যুক্তরাষ্ট্রস্থ মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির সাবেক সভাপতি শাহাদৎ হোসেন জানান, ঘাতক বাস ড্রাইভারের বিরুদ্ধে মামলার জন্যে ইউএস সুপ্রিম কোর্টের খ্যাতনামা অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরীকে নিয়োগ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী এ সংবাদদাতাকে জানান, তদন্তসাপেক্ষে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবো। ক্ষতিপূরণ আদায়ের চেষ্টাও করা হবে। 

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে জুয়েল ঢাকার গুলিস্তান এলাকার একটি মোবাইল মেরামত দোকানে মেকানিক্স ছিলেন। নিউইয়র্কে একটি স্টোরের কাজের পাশাপাশি ডেলিভারিম্যানেরও কাজ নিয়েছিলেন স্বজনের কাছে বেশি অর্থ প্রেরণের অভিপ্রায়ে। 

উল্লেখ্য, গত সাত বছরে নিউইয়র্ক সিটিতে কমপক্ষে ৮ বাংলাদেশি ডেলিভারিম্যানের প্রাণ গেছে গাড়ির ধাক্কায় কিংবা দুর্বৃত্তের হাতে। সবাই দালালকে মোটা টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।  

পুুলিশ জানায়, জুয়েল সাইকেল চালিয়ে লং আইল্যান্ড সিটির জ্যাকসন অ্যাভিনিউ ধরে দক্ষিণে যাওয়ার সময় ইন্টারসেকশনে কুইন্স বুলেভার্ডগামী (পূর্বদিক) স্কুল বাসের ধাক্কা খান। বাসের ড্রাইভার সজোরে ধাক্কা দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানায়। সঙ্গে সঙ্গে ছিটকে পড়েন জুয়েল। স্কুটার বাসের চাকায় পিষ্ট হয়। সে সময় কংক্রিটের রাস্তায় রক্তাক্ত জুয়েল মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলেন। হয়তো তখনো বেঁচে ছিলেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা উল্লেখ করেন। সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স এসে জুয়েলকে নিউইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়েন ওয়েল কর্নেল মেডিকেল সেন্টারে নেয়। কিছুক্ষণ পর হাসাতালের জরুরি বিভাগেই জুয়েলের মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি..রাজেউন)। তদন্ত কর্মকর্তারা আশপাশের সিসিটিভি পরীক্ষার পর জুয়েলের ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন যে, বাসটি গ্রিন লাইট অতিক্রম করছিল। অন্যদিকে জুয়েল রেড লাইটে ছিলেন। পুলিশের মতে মৃত্যুর জন্য জুয়েলই দায়ী। তবে জুয়েলের ঘনিষ্ঠজনেরা তা মানতে রাজি নন। তারা আইনি লড়াই চালাবেন। এদিকে জুয়েল রানার লাশ পাঠানোর জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে অকুস্থলেই দাঁড়িয়ে ছিলেন ৫৪ বছর বয়সী বাস ড্রাইভার। পরবর্তীতে তাকে পরীক্ষা করা হয়, তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন কি না। পরীক্ষার রিপোর্ট তাৎক্ষণিকভাবে জানায়নি নিউইয়র্কের পুলিশ। 

উল্লেখ্য, কুইন্সের এই ইন্টারসেকশনটি ২০১৪ সাল থেকেই মরণফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত। গত তিন বছরে এখানে ১০৩টি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ১০ সাইকেলচালকসহ আহত হয়েছেন ৪৭ জন। এর মধ্যে পথচারী ছিলেন চার জন। গাড়ির প্যাসেঞ্জার ৩৩ জন আহত হয়েছেন ঐ দুর্ঘটনার সময়।

শেয়ার করুন