৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১০:৫৭:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


জাতীয় না তত্ত্বাবধায়ক সরকার
জাতীয় সংসদ নির্বাচন কার অধীনে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৩
জাতীয় সংসদ নির্বাচন কার অধীনে


চার মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তা ভিক্টোরিয়া ন্যুল্যান্ড, ডোনাল্ড লুর সফরকে কেন্দ্র করে চারদিকে ভাসছে নানান গুঞ্জন। কেন আসছেন। কোন বিষয়ে কার কার সঙ্গে কথা বলবেন তারা। কী হতে পারে নির্দেশনা। অ্যাফেক্টও হবে কতটা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কী সেগুলো মানবে। পছন্দ না হলে বিএনপিই বা কী করবে। জটিল সব হিসাব-নিকাশ। তবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে আলোচনা এখন প্রতিনিয়ত- কার অধীনে নির্বাচন। জাতীয় সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার। না কীভাবে পরিচালিত হবে এ গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটি। কারণ সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনটাও হওয়া চাই অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। অন্তত ২০১৪ ও ২০১৮ সনের প্রেক্ষাপট চিন্তা করে। 

আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ফরম্যাট কী- বর্তমান পরিস্থিতিতে কন্টিনিউ হবে, নাকি নিরাপেক্ষ তত্ত্বাবধায়কের অধীনে হবে ওই নির্বাচন। এ নিয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয়, এখন এ ব্যাপারে বিবৃতি দিচ্ছে রাশিয়া। চীন তো আগ থেকেই রয়েছে এ প্রক্রিয়ায়। কথা বলছে, ইরানের বিভিন্ন মাধ্যমও। সব মিলিয়ে নির্বাচন পূর্ব সময়টা অতিবাহিত হতে যাচ্ছে জটিল এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। 

দেশের অভ্যন্তরে বিএনপি ও সমমনা দলসমূহ কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার পুরোনো সিদ্ধান্তে অটল। ওই প্রক্রিয়ায় না হলে, তারা কোনো নির্বাচনেই যাবে না। আবার ক্ষমতাসীনরাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। দেশের চলমান ধারাতেই আস্থা ও প্রস্তুতি তাদের। এ বিষয়ে কোনোরকম সংলাপ-টংলাপেরও ধার ধারবে না তারা, পরিষ্কার করে বলছে বারবার। ফলে সমঝোতার কোনো লক্ষণই নেই। সব মিলিয়ে এক অনিশ্চিত যাত্রা। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা জোটের। সে ধারা বিশ্লেষণ করলে, মূলত বিএনপি ও তাদের সমমনাদের দাবির সঙ্গে অনেকাংশে মিলে যায়।

এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে মার্কিনিরা এতোদূর এগিয়েছে যে, তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাসহ সুষ্ঠু ভোট প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে তাদের দেশে বাংলাদেশিদের সফর করতে একটি ভিসানীতিও প্রণয়ন করেছে। সুষ্ঠু ভোটে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হবে ওই ভিসানীতি। এটা তাদের অঙ্গীকার। ফলে তাদের ওই চিন্তাধারা বা প্ল্যানের দ্বিমত নিয়ে আসে এবং সেটা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে, তাহলে মার্কিনিদের একধরনের লড়াই সেটা মনস্তাত্ত্বিক হোক আর যে ধরনের হোক, সেটাও তো শুরু হয়ে যাবে নতুন করে- বাংলাদেশ ইস্যুতে।  

বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ কেন্দ্র করে যে দুই ধারা চলছে বিশ্ব, সে দুই পক্ষ ক্রমশ সরব হয়ে উঠছে বাংলাদেশ ইস্যুতেও। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য এটা ভয়ানক একটা ইস্যু।

এদিকে সহসাই ঢাকা এসে পৌঁছেছেন ওই মার্কিন চার শীর্ষ কর্মকর্তা। এছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মার্কিনিদের প্রত্যাশার সঙ্গে মিল রেখে কথা বলছেন। 

এমন প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীন দল থেকেও বেশ রিয়্যাক্ট হচ্ছে। বিপক্ষে সহসাই একদফা আন্দোলনে নামার মহড়ায় বিএনপিসহ তাদের সমমনা জোটের। সব মিলিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত হওয়ার একটা প্রেক্ষাপট ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে।  

গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনের 

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নানা পদক্ষেপ, পরমার্শের পাশাপাশি চার মার্কিন শীর্ষ কর্মকতার বাংলাদেশ সফরের খুব বেশি সময় আর বাকি নেই। এদের কেউ কেউ ভারতে পৌঁছে গেছেন আঞ্চলিক শান্তি সমৃদ্ধি বৃদ্ধির আলোচনা করতে। এমনি মুহূর্তে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি কিছু কথাবার্তা বলেছেন, যাতে গভীর দৃষ্টি এখন সচেতন মহলের। কেননা যে অভিযোগগুলো হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন, সেটা মোটেও বাংলাদেশ ও এ দেশের জনগণের জন্য সুখকর নয়। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, পর্যবেক্ষণের নামে বিদেশিদের কেউ কেউ নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ‘বানচাল’ করতে পারে। এটা তার সন্দেহ হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বিদেশিরা তৎপর হলেও সরকার চাপ অনুভব করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আর প্রেশার-ট্রেশার আমাদের নাই। কারণ, আমরা আমাদের নিজেদের তাগিদে নির্বাচন করছি।’ গত শনিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ডিকাব টকে তিনি এসব কথা বলেন।

এতে প্রতিটি বড় অংশীদার রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। নির্বাচন পর্যবেক্ষণের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, আমেরিকান বলেন, যেই আছেন আমরা প্রত্যেককে স্বাগত জানাবো। আমাদের আসলে লুকানোর কিছু নেই। তারা এসে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। কিন্তু তারা যদি মাতব্বরি না করে ভালো সাজেশন থাকে, আমরা স্বাগত জানাবো।’

ড. মোমেন বলেন, ‘অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট। তাদের কেউ কেউ হয়তো নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করবে। সেটা যদি করেন, তাহলে দেশের অমঙ্গল ডেকে আনবেন। আপনাদের, আমাদের সবার জন্য অমঙ্গল ডেকে আনবে। সে ব্যাপারে আপনারা সজাগ থাকবেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়া যাতে তারা ধ্বংস না করে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন রকম লোক আসতেছে, আমরা তাদেরকে ওয়েলকাম জানাচ্ছি। তারা আসুক, দেখুক। আমি আশা করি, তারা তখন সার্টিফিকেট দেবে যে এটা একটা মডেল ইলেকশন। আমরা আশা করছি, আমাদের ইলেকশনটা বিশ্বে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। অন্যের পীড়াপীড়িতে নয়, আমার নিজেদের তাগিদে। আমি দেখতে চাই আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে কি না। আমার গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে আমি থাকবো না।

অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সবদলকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। যারা আসবেন না, সেটা তাদের নিজেদের ব্যাপার। কোনোদিন ভারতে সন্ত্রাসী দল নির্বাচনে আসে না, আমেরিকায় (নব্য) নাৎসি দল অ্যালাউ না। ওই দল আসেও না। আমাদের এখানেও সন্ত্রাসী দল থাকতে পারে, তারা না এলেও নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে না। আমরা চাই, নির্বাচনে সবাই অংশগ্রহণ করবে। তবে সন্ত্রাসী দল না এলে কোনো অসুবিধা নাই।

রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে এক প্রশ্নে মোমেন বলেন, সংলাপ, কার সঙ্গে সংলাপ? আমেরিকাতে কি কোনো সংলাপ করে? ওখানের প্রেসিডেন্ট কি নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করেন? ইংল্যান্ডের প্রাইম মিনিস্টার কি পদত্যাগ করেন? এগুলো সব অবান্তর। এগুলোর রীতি দুনিয়ার আর কোথাও নেই। পাকিস্তানে বোধহয় কিছুদিনের জন্য ছিল। সংবিধান অনুযায়ী আমরা আমাদের দেশে স্বচ্ছ, সুন্দর নির্বাচন করব।

চীন প্রসঙ্গ 

চীন থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার যদি আমার জিডিপি হয়ে থাকে, ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন হচ্ছে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ- ১ শতাংশের কম। কোনোভাবেই আমরা চীনা ঋণের ফাঁদে পড়ি নাই। কারও ধারণা, আমরা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আছে, আমরা বোধহয় চীনা গোষ্ঠীর সঙ্গে এক হয়ে যাচ্ছি। এবং জোর করে আমাদেরকে চাইনিজ গোষ্ঠীর মধ্যে।  মোমেন বলেন, আমরা একটা ভারসাম্যপূর্ণ, স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলি। আমরা কারো লেজুড় না, চীনের আমরা লেজুড় না। কিন্তু বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে, আমরা চীনের দিকে ধাবিত হয়ে যাচ্ছি। সুতরাং আমরা কোনো দিকে ধাবিত হতে চাই না, আমরা কারো লেজুড় হতে চাই না।

ইন্দো-প্যাসিফিক জোন প্রসঙ্গ 

ড. মোমেন বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক দিয়ে অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্য হয়, ৮৬ শতাংশ এদিক দিয়ে যায়। আর এই ব্যবসার কারণে গণচীন হচ্ছে রাইজিং স্টার। এটা খুব বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেকের ইচ্ছা এদেরকে ‘কনটেইন’ করা। ‘কনটেইন’ করার একটা উপায়, যদি সমুদ্রপথের ব্যবসাটা বাধাগ্রস্ত করা যায়। আমরা ইন্দো-প্যাসিফিকে সবার জন্য অবাধ, নিরাপদ, ইনক্লুসিভ, আইনসম্মত চলাচল চাই। আমরা এটাতে স্বচ্ছ। এবং আমাদের সঙ্গে অন্যান্য অনেক দেশ এমন চায়। জাপানও একই রকম চায়, ভারতও তাই চায়।’

গণতন্ত্র, মানবাধিকার গুম-এগুলো ভাঁওতাবাজি 

ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশ এখন কৌশলগত অবস্থানে। একই সঙ্গে দেশটির দ্রুত উন্নয়নের কারণে বাংলাদেশ অনেকের চক্ষুশূল হয়ে গেছে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সে কারণে বিভিন্ন অজুহাত আমাদের কাছে তুলে ধরা হয়। আমরা অনেকে সেই অজুহাতে বিশ্বাসও করি। যেমন- গণতন্ত্র, মানবাধিকার, গুম এগুলো সবকিছু একটা ভাঁওতাবাজি।

মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে চান। আর একের পর এক লোক এসে সফর করছেন, আমাদের মধ্যে যে গ্যাপ সেটা দূর করার জন্য এটা ভালো। অপপ্রচারে আর হবে না। চীন আমাদের বন্ধু, উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনেক কাজ করতেছে। সৌদি আরব, ইউএই, যুক্তরাজ্য প্রত্যেকটা দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগের থেকে ভালো হয়েছে।

শেয়ার করুন