২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


কংগ্রেসম্যানদের ম্যানেজ করতে গণহারে টেক্সট মেসেজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে এক, অন্তরে আরেক
দেশ রিপোর্ট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৮-২০২৩
কংগ্রেসম্যানদের ম্যানেজ করতে গণহারে টেক্সট মেসেজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে এক, অন্তরে আরেক ১৪ জন কংগ্রেসম্যান


বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ভাগ্যবান। কারণ তিনি পুরোপুরি রাজনীতিবিদ না হয়েও আওয়ামী লীগের মতো সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের অনেক যোগ্য নেতা থাকার পরও তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। এটা তার জন্য সৌভাগ্য ছাড়া আর কি হতে পারে। বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশি রাষ্ট্রদূত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বেশ সক্রিয়। তাদের প্রচেষ্টা


. কে আব্দুল মোমেনের পাঠানো টেক্সট মেসেজ

বাংলাদেশের আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য হোক। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচন দেশে এবং প্রবাসে নানা ধরনের বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতরা পরিষ্কার জানিয়ে গিয়েছেন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না। এমনকি বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র জাপানের রাষ্ট্রদূতও বলেছিলেন তিনি প্রথম শুনছেন দিনের ভোট রাতেই শেষ হয়ে গিয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা কাজ শুরু করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের উচ্চপদের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দও বাংলাদেশ সফর করছেন। তারা সরকারি দলের প্রতিনিধি এবং বিরোধীদলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে লাগাতার বৈঠক করছেন। তাদের মিশন একটাই বাংলাদেশের আগামী সংসদ নির্বাচন যেন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়।

বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ তাদের জোট দীর্ঘদিন থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলন করে আসছেন, অন্যদিকে সরকারি দল কোনোভাবেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন মেনে নিচ্ছে না, তাদের পরিষ্কার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন বেশ উত্তপ্ত। দুই পক্ষই রাজপথে রয়েছে। রাজসৈতিক সহিংসতা বাড়ছে। হামলা এবং মামলা বাড়ছে। বিরোধীদলের ওপর পুলিশি এবং দলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় রক্তাক্ত হচ্ছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। একটি সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ যে কোনোভাবেই হোক শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর। রাজনৈতিক সংহিসতা, হামলা এবং মামলায় বিদেশি ক‚টনীতিকরা বেশ তৎপর। তারা হামলা-মামলা বন্ধের আহবান জানিয়ে আসছেন, কিন্তু সরকার অনড়। যেদিনই বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে, সেদিন আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিচ্ছে। এই রক্তাক্ত রাজনীতি কারো কাম্য নয়।

এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ জন কংগ্রেসম্যান জাতিসংঘে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে চিঠি দিয়েছেন। সেই চিঠিতে ১৪ জন কংগ্রেসম্যান লিখেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের সন্ত্রাস, নির্যাতন ও  বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য আপনাকে চিঠি লিখছি। একই চিঠিতে তারা বাংলাদেশে জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নিতে আহবান জানিয়েছেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইট ওয়াচ, ফ্রিডম হাউস এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসহ বিপুল সংখ্যক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করেছে। যার মধ্যে ভয়ভীতি, হামলা, মিথ্যা হত্যাকান্ড, নির্যাতন, গুম এবং এমনকি বিচারবহিভর্‚ত হত্যাকান্ড রয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন যে, বাংলাদেশ “সাংবাদিক এবং মানবাধিকার রক্ষাকারীদের দীর্ঘায়িত বিচারের জন্য দোষী।”

২০২১ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটির পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ র‌্যাবের  বর্তমান বা সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যাই হোক, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো সরকারের সন্ত্রাসকে মন্থর করেনি।

গত ৬ থেকে ৮ মাসে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এই বিক্ষোভগুলো প্রায়ই সহিংসতা, নৃশংস হামলার সম্মুখীন হয়েছে। আমরা অত্যন্ত সন্দিহান যে, হাসিনা সরকার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের অনুমতি দেবে। এই কারণগুলোর জন্য এবং  আরো অনেকগুলো দুর্নীতি, অত্যাচার, সহিংসতা এবং অপব্যবহার বন্ধে নিম্নে উল্লিখিত বিষয়গুলো কার্যকর করার জন্য অনুরোধ করছি।এক. জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য ব্যবস্থা নিন। শেখ সরকারের বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্তের ব্যবস্থা নিন।  দুই.  অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর যে কোনো সদস্যকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মোতায়েন করা বন্ধ রাখতে হবে।

১৪ কংগ্রেসম্যানের এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৩ দেশের রাষ্ট্রদূতকে তবল করে। তবল শব্দ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হলে বা ১৩ রাষ্ট্রের পক্ষে জানতে চাই।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এটা আসলে তলব নয়, আমন্ত্রণ।

অন্যদিকে সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন মিডিয়ায় রাষ্ট্রদূতদের কঠোরভাবে সমালোচনা করেছেন। আবার কখনো কখনো দোষ মিডিয়ার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, বাংলাদেশে এরা বেশি বাড়াবাড়ি করছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, এবারের নির্বাচনে বিদেশিরা বেশ সক্রিয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বিভিন্ন মিডিয়াতে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বিরুদ্ধে বললেও ভেতরে ভেতরে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন। যে কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত তারা পছন্দের লোকদের কাছে গণহারে টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছেন। সেই টেক্সট মেসেজ নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা। অনেকেই বলেছেন, তার মুখে এক অন্তরে আরেক। আসলে ১৪ জন কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে তিনি উদ্বিগ্ন। যে কারণে তিনি কংগ্রেসম্যানদের চিঠির প্রতিউত্তর দেওয়ার আহŸান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, সুধীজন, আপনারা জানেন যে, দুর্নীতি, অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করেছে তাদের অনেকেই এখন বিদেশের বিভিন্ন দেশে এসব খুনিরা আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, আর সিনেটর বা কংগ্রেসম্যানদের কাছ থেকে তাদের লেখা চিঠিতে সই করে পাঠাচ্ছে। আপনাদের চিঠি দেওয়া দরকার যে এসব মন্তব্য ভুয়া ও মিথ্যা। প্রবাসে আপনারা যারা বাংলাদেশি আছেন, তাদের এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব এলাকার কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছেন, সেসব এলাকার বাঙালিরা তাদেরও চিঠি দেবে।এসব অভিযোগ তারা কীভাবে করলো জানতে চাইবে, তাদের কাছে কী প্রমাণ আছে? আপনাদের তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে। মোমেন, ধন্যবাদ।

ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিজেই বলছেন, খুনিরা বিদেশে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় খুনিদের চিঠিতে কংগ্রেসম্যানরা স্বাক্ষর করছেন ।এটা কীভাবে সম্ভব? কংগ্রেসম্যান বা সিনেটররা না দেখেই স্বাক্ষর করছেন? জাতিসংঘে যে ১৪ জন কংগ্রেসম্যান চিঠি দিয়েছেন, তা-ও কী খুনিদের লেখা চিঠি? অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী যাদের টেক্সট পাঠিয়েছেন, তারা কারা? তিনি শেষে লিখেছেন, ‘আপনাদের তৎপরতা আরো বাড়াতে হবে’- এরা কারা? এরা কী সরকারের পেইড কেউ? তারা কবে থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে?এমন প্রশ্ন সর্বত্র।

 

শেয়ার করুন