২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:১০:২৭ পূর্বাহ্ন


পেট্রোবাংলা পারবে তো!
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
পেট্রোবাংলা পারবে তো!


চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলা, বিরাজমান সংকটের গভীরতা এবং মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ বিষয়ে সম্মক উপলব্ধি করেছেন বলেই মনে হয়! সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এনার্জি এবং পাওয়ার পত্রিকার সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসাইনের সঙ্গে তার দীর্ঘ আলোচনায় এমনটাই উঠে এসেছে। পরিকল্পনায় যথেষ্ট উচ্চাভিলাষ আছে। বাস্তবায়ন পর্যায়ে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় পেট্রোাবাংলা এবং বাপেক্সের দক্ষতা বহুগুণ বৃদ্ধি না পেলে নিজস্ব জ্বালানি অনুসন্ধান এবং উন্নয়নে ৫০ শতাংশ সাফল্য অর্জন দুরূহ হবে। গ্যাস অনুসন্ধান এবং সাফল্য অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। সেখানে কারিগরি দক্ষতার সঙ্গে আর্থিক ঝুঁকি সমানভাবে সম্পৃক্ত। কতটুকু নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান মহোদয় অনেকটা নিশ্চিত করে নতুন গ্যাস প্রপ্তি বিষয়ে আশ্বস্ত করলেন। ওনার আশাবাদ সাফল্যে রূপ নিলে ভালো। তবে অনুসন্ধান কূপের সাফল্য বিষয়ে সতর্ক ভাবে আশাবাদী হওয়া ভালো। 

এলএনজি আমদানির উদ্যোগসমূহ বিশেষত মার্কিন কোম্পানি এক্সেলেরেট কর্তৃক গভীর সাগর স্থাপনা থেকে সুদীর্ঘ সাগর তলদেশের পাইপলাইন দিয়ে আমদানি কতটা ফলপ্রসূ এবং নির্ভরযোগ্য হবে। সাংগু গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকেই বলছি গ্যাস সঞ্চালন বিষয়ে অনেক সতর্ক এবং কুশলী হতে হবে। ভারত থেকে পাইপলাইনে আর এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নিয়ে কিছু বলার নেই। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন স্টাডি রিপোর্টের ভিত্তিতে স্থলভাগে নিবিড় অনুসন্ধান করা হলে এবং সঠিক সময়ে সাগরে গ্যাস উত্তোলনের কার্যক্রম গৃহীত হলে ভারত থেকে আর এলএনজি আমদানির প্রয়োজন হতো না। ২০২৬ নাগাদ পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ কতটা বিত্তশালী হবে অধিক মাত্রায় এলএনজি আমদানির আর্থিক দায় মেটাতে। প্রথম এফেসারু স্থাপন করতেই পেট্রোবাংলার ৮ বছর সময় লেগেছে।

এরপর বেশকিছু এফেসারু এবং ল্যান্ড বেসড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগ নানা কারণে আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি দেশের প্রধান চট্টগ্রাম বন্দরের স্পর্শকাতর এলাকা কাফকো এবং সিইউএফএল জেটিতে অবাস্তব স্মল এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের উদ্যোগের পেছনেও সময়, মেধা অপচয় হয়েছে। দীর্ঘসূত্রতায় পড়েছে মাতারবাড়িতে ল্যান্ড বেজড এলএনজি স্থাপন উদ্যোগ। 

ভোলার গ্যাস ব্যবহার এবং ভোলার গ্যাস গ্রিড সংযুক্তি বিষয়ে চেয়ারম্যান আরো গভীর বিবেচনার সুযোগ আছে। কবে কখন এক্সসেলেব্রেট সাগরে এলএনজি স্থাপনা করে পাইপলাইন নির্মাণ করবে সেই আশায় বসে না থেকে অবিলম্বে ভোলার গ্যাসক্ষেত্রগুলো জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সংযুক্তি প্রয়োজন। ভোলায় গ্যাসভিত্তিক সারকারখানা বা অন্য শিল্পকারখানা স্থাপন করা হলে ২৫-৩০ বছর গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহের সংস্থান থাকতে হবে। ইউনোকোল বুঝে শুনেই শাহবাজপুর-দিঘলিয়া পাইপলাইন নির্মাণ উদ্যোগ নিয়েছিল। 

চেয়ারম্যান মহোদয় পেট্রোবাংলার দেনা পাওনা বিষয়ে সোচ্চার হয়ে কিছু বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন যেটি প্রশংসা যোগ্য। গ্যাস সরবরাহ চেনে সব ট্রান্সফার পয়েন্টে কাস্টোডি ট্রান্সফার মিটার থাকা নিয়মিত ক্যালিব্রেশন করে তদীয় ভিত্তিতে গ্যাস সিস্টেম ম্যানেজমেন্ট নিবিড়ভাবে করার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে গ্যাস সঞ্চালন ব্যবস্থায় অকারিগরি সিস্টেম লসের সুযোগ নেই। সঞ্চালন কোম্পানিগুলোর কাস্টডি ট্রান্সফার মিটারগুলো নিয়মিত ক্যালিব্রেশন করা হলে ২ শতাংশের অধিক সিস্টেম লস হতে পারে না। বিতরণ কোম্পানিগুলোর মিটারিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করার অনেক সুযোগ রয়েছে। অধিকাংশ কোম্পানির বিতরণ ব্যাবস্থায় অসংখ্য অবৈধ গ্রাহক এবং বৈধ গ্রাহকের অবৈধ ব্যবহার আছে। 

এক্ষেত্রে সমগ্র সিস্টেমে অবিলম্বে কার্যকর স্কাডা, টেলিমেট্রি চালু করা উচিত। বিতরণ ব্যবস্থায় দীর্ঘসময় পরেও প্রিপেইড মিটার স্থাপন করায় ব্যর্থতা অমার্জনীয়। যাহোক চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলা সিস্টেম বিষয়ে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। প্রশংসা করছি, কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে এগুলো যথাসময়ে বাস্তবায়ন সম্ভব হবে তো! 

শেয়ার করুন