২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:৪৬:০১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


মধ্যবর্তী নির্বাচনের টার্গেট নিয়ে মাঠে বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
মধ্যবর্তী নির্বাচনের টার্গেট নিয়ে মাঠে বিএনপি


মাঠের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সমমনারা দেশে একটি মধ্যবর্র্তী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে। এই দাবিতে আন্দোলন করেই তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতেই তারা এখন মরিয়া। তবে এ দাবিটিও তারা অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করে নিতে আগের চেয়ে বেশি তৎপর থাকবে। 

সরকারকে ভিন্ন বার্তা দিলো

দেশে ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে চারিদিকে বিএনপি’র বিরুদ্ধে নানান ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য পাল্টা বক্তব্য আসছে। বলা হচ্ছে বিএনপির ডাকে গণ-আন্দোলন আশানুরূপ সাড়া পায়নি। বলা হচ্ছে একদফা দাবি আদায়ে ব্যর্থ কিংবা দলটির মাথা তুলে দাঁড়াতে আরো বছর খানেক লাগবে-এমটাই প্রচার পাচ্ছে বেশি। চারিদিকে যখন এমন নেতিবাচক প্রচার-প্রচারণা ঠিক সেসময়ে অর্থাৎ ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের রেশ না কাটতেই বিএনপি সেই পুরনো দাবিতেই মাঠে নেমে গেছে । এবং এটা করা হয়েছে খুব দ্রুততার সাথে। এক দফা দাবিতে সারা দেশে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় কালো পতাকা মিছিলের ডাক দেয় বিএনপি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটা সরকারকে একটি বার্তা দিচ্ছে মাঠের বিএনপি এখনো ঐক্যে আন্দোলনে মাঠ কাপাতে এখনো পিছুটান নেই। 

কেমন হলো কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি

আড়াই মাস পর রাজধানীতে গত ২৭ জানুয়ারি শনিবার রাজপথে নামলো বিএনপি। হাতে কালো পতাকা নিয়ে প্রতিবাদ। সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকাসহ মহানগরগুলোতে কালো পতাকা মিছিল করে বিএনপি ও তার মিত্ররা। অন্যদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার ও সংসদ বাতিলসহ এক দফা দাবিতে রাজধানীতে কালো পতাকা মিছিল করেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর থেকে মিছিলটি শুরু হয়। নাইটিঙ্গেল, বিজয়নগর, পল্টন হয়ে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণে জানা গেছে, একইদিনে বিএনপি’র ডাকা কর্মসূচিতে অনেককেই অবাক করে দেয়। কেননা দলের একটি বড়ো অংশে সিনিয়র নেতাকর্মীরা কারাগারে। অনেকে এখনো আত্মগোপনে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে ধারণা করেছিল দলের নেতাকর্মীরা হয়তা মুষড়ে পড়েছে। বা নানান রকম বিভ্রান্তির পর ঘুরে দাঁড়াতে বছর কয়েক থাকবে। বিএনপির আন্দোলনের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি হচ্ছে ডামি দল। শোকে শোকে তারা পাথর হয়ে গেছে। তারা আন্দোলন করবে জনতার ঢল নামবে এসব শুনে ঘোড়াও হাসে। নিজেদেরকে নিজেরাই ভুয়া বানিয়ে ফেলছে বিএনপি। কিন্তু সরকারি দলের এমন বক্তব্যের পর কালো পতাকা কর্মসূচিতে জনতার ঢল সরকাকি মহলে ভিন্ন বার্তা দিয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। অপরদিকে ২৭ জানুয়ারি এভাবে রাজধানীতে বড় ধরনের সমাবেশ কর্মসূচি দিয়ে দেবে তা শুধু সরকারের পক্ষ থেকে না বরং বিএনপি’র ভেতরে থেকেও আশা করা যায়নি। 

ঢাকার বাইরেও বিএনপি’র কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া

এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং সংসদ বাতিলের দাবিতে ২৬ জানুয়ারি শুক্রবার জেলায় জেলায় কালো পতাকা মিছিল করেছে বিএনপি। গণমাধ্যমে থেকে নেয়া খবরে দেখা যায় যে, যশোরে মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। তা উপেক্ষা করেই মিছিল শেষ করেন নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন স্থানে মিছিল শেষে দেওয়া বক্তব্যে নেতারা বলেন, ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসেছে সরকার। বিরোধী মতকে দমিয়ে রাখতে একের পর এক মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। 

দেয়া হলো নতুন কর্মসূচি

এদিকে ২৭ জানুয়ারি এভাবে রাজধানীতে বড়ো ধরনের সমাবেশ শেষে দিয়েছে নতুন কর্মসূচি যা বিএনপি’র ভেতরে থেকেও অনেকে আশা করেনি। এদিকে এই কর্মসূচি পালন শেষে থেকেই ডাক দেয়া হলো আরেকটি কর্মসূচি। দলটির ভাষায় অবৈধ ‘ডামি’ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের দাবিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর দিনে সারা দেশে ‘কালো পতাকা’ মিছিল করেছে বিএনপি। রাজধানীর ঢাকায়ও সাতটি জায়গায় এই মিছিল হবে। ‘অবৈধ ডামি সংসদ বাতিল করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবিতে’ বিএনপি এই কর্মসূচি দিয়েছে। একই দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোটসহ বিভিন্ন দল ও জোট পৃথকভাবে কালো পতাকা মিছিল করেছে। 

আওয়ামী লীগ হঠাৎ সড়ে গেলো কেনো?

এদিকে আওয়ামী হাই কমান্ড মুখে যা-ই বলুক না কেনো তারা মাঠের বিএনপি’র এমন কর্মসূচিকে আমলে নিয়েছে, ঠিক নির্বাচনের আগে যেমনভাবে নেয়। কারণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের ধারণা বিএনপি হয়তোবা চুপ করে আছে আপাতত। কিন্তু যে-কোন সময়ে দলটি ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলতে পারে। সেজন্যই ২৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের যেমন ডাক দিয়েছে তেমনি ৩০ জানুয়ারি দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলায় শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশ কর্মসূচি ডেকেছে আওয়ামী লীগ। ২৭ জানুয়ারি শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আয়োজিত শান্তিও গণতন্ত্র সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। কিন্তু ২৯ জানুয়ারি সোমবার দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয় ঢাকায় সমাবেশ করছে না আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আলাদা সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু পরে ঢাকার দুটি সমাবেশই স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়, যা নিয়ে নানান ধরনের কথার্বাতা শোনা যাচ্ছে। 

সরকারেরই কণ্ঠে আশঙ্কার কথা

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে এমনিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী মাঠে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছে না। এর পেছনেও কারণ রয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করে গত বছরেই বলেছেন আগামী বছরের (২০২৪) মার্চের দিকে দেশে ‘দুর্ভিক্ষ ঘটানোর’ দেশী-বিদেশী পরিকল্পনা রয়েছে। বলেছেন এখন তারা (বিএনপি) মনে করছে নির্বাচন হয়েই যাবে। তাই তারা মার্চের দিকে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। এটা হচ্ছে তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা। এটা শুধু দেশের নয়, বাইরের দেশেরও পরিকল্পনা। যেভাবেই হোক দুর্ভিক্ষ ঘটাতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে দুভিক্ষ না অন্য কিছু। ধারণা করা হচ্ছে তিনি বিএনপি’র নেতৃত্বে বড়ো ধরনের আন্দোলনে ইঙ্গিতই তিনি দিয়েছেন। আর একারণেই আওয়ামী ৭ জানুয়ারি বড়ো ধরনের প্রতিরোধ-আন্দোলন ছাড়াই নির্বাচনটি করে ফেললেও আগামী দিনগুলি ব্যাপারে বিএনপি’র প্রতি সর্তক দৃষ্টির হেরফের হয়নি ক্ষমতাসীনদের। তাদের এমন সর্তক দৃষ্টি আর আশঙ্কার দিকটি গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর মুখেও শোনা গেছে। বলা হচ্ছে যড়যন্ত্রকারীরা বসে বসে নেই। যদিও মুখে মুখে বলেই যাচ্ছে যে ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা শেষ হয়ে গেছে। 

আসলে বিএনপি’র লক্ষ্য কি?

বিএনপি’র একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র মনে করে ৭ জানুয়ারি বিএনপি’র ডাকেই জনগণ ভোট বর্জন করেছে, ভোট কেন্দ্রে তারা পা রাখেনি। তারা মনে করেন, এটাই বিএনপি’র বড় কৃতিত্ব। তারা মনে করেন জনগণ বিএনপি’র জেন্টেলম্যান এপ্রোচকে গ্রহণ করেছে। আর অন্যদিকে মুখে না বললেও আওয়ামী লীগ আঁচ করেছে যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত ভোটার আনতে পারেনি, যার জন্য হেন চেষ্টা নেই তারা করেনি। কিন্তু এদিক বিবেচনায় নিলে আওয়ামী লীগ ভোট কেন্দ্রে অধিকসংখ্যক ভোটারদের আনতে ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকারকে এখন বিভিন্ন জায়গায় ঠিকই প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট আর ভোটাধিকার নিয়ে এমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ুক এমনটাই চেয়েছে বিএনপি। বিএনপি’র নেতাদের সাথে আলাপকালে আরেকটি বিষয়কে তারা সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানা গেছে। তা-হলো শক্তিধর পশ্চিমারা ঠিকই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুয়ায়ী হয়নি বলে বিবৃতি দিয়েছে। অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দিয়ে জাতিসংঘও প্রায়ই একিই অভিমত জানিয়েছে। এসব বিষয়কে বিএনপি সবচেয়ে বড়ো বিজয় হিসাবে দেখছে। অন্যদিকে বিএনপি’র একটি বড়ো অংশ মনে করে হয়ে যাওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি আমেরিকা ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় ভারতের অনুরোধ বা কূটনৈতিক চালটি গিলেছে সাময়িকভাবে। অর্থ্যাৎ বিএনপি’কে ছাড়াই নির্বাচনটি করিয়ে নিতে পশ্চিমাদের একধরনের মৌন সম্মত্তি আওয়ামী লীগকে আদায় করে দিয়েছে ভারত। এমন মৌন সম্মতি বা কূটনৈতিক ভাষায় আবদারটি কতদিন আমেরিকাসহ পশ্চিমারা শোনে বা শুনতে টাইম-ফ্রেম দিয়েছে সেটিই এখন দেখার বিষয় বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা। রাজনৈতিক পরিস্থিতির এমন চুলচেরা বিশ্লেষণ আর দলের নেতাকর্মীদের আত্মবিশ্বাসকে লক্ষ্য করেই বিএনপি এখন মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি নিয়ে তাদের আন্দোলনকে পরিচালিত করছে।

শেয়ার করুন