২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০২:৪০:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দেশ’কে রফিকুল ইসলাম বাবু
ঢালাও ভাবে ক্রিকেটারদের দোষারোপ উচিৎ না
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৫-২০২২
ঢালাও ভাবে ক্রিকেটারদের   দোষারোপ উচিৎ না


টেস্ট ক্রিকেটারদের পারফরমেন্স ও তাদের মানসিক অবস্থা নিয়ে সম্প্রতি বিসিবি সভাপতি গণমাধ্যমে বেশ কিছু কথা বলেছেন। সেখানে জানিয়েছেন, ‘কোচিং স্টাফদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, ওরা আমাকে উদাহরণ দিচ্ছিল বেশ চার/পাঁচটা টেস্ট ম্যাচের। ইভেন পাকিস্তানের সঙ্গে যখন খেললাম প্রথম টেস্টে আমরা ভালোই মোটামুটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে একেবারই ধরাশায়ী। বাইরের খেলাগুলোর কথা বলল, ইভেন নিউজিল্যান্ড, সাউথ আফ্রিকা এরকম অনেক টেস্টের কথা নিয়ে আসল।

আসলে প্রথম টেস্টটা আমরা মোটামুটি ভালোই খেলি, দ্বিতীয় টেস্টে গিয়ে একেবারই মনে হয় আমরা আর পারছি না। এর পেছনে কী কী থাকতে পারে ওরাও বুঝতেছে না এতো তাড়াতাড়ি। কিন্তু ওরা যেটা বলল যে আসলে ১০দিনের খেলার মাইন্ডসেটটাই নেই। যে আমি যে দশদিন টানা খেলতে হবে, এই মাইন্ডসেট অনেক প্লেয়ারের নেই। এটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’টেস্টে এই দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে চান পাপন। আগামী ২ বছরের মধ্যে টেস্টে ভালো করতে করণীয় উপায় নির্ধারণ করবে বিসিবি, এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম বাবু 


তিনি আরো বলেন,‘ওডিআই পারলে অন্য ফরম্যাটেও পারব। সেটার জন্য আমাদের অনেক বেশি কষ্ট করতে হবে, কাজ করতে হবে, প্ল্যান করতে হবে, এবং


সেটাই আমরা করছি। আশা করছি ২ বছরের মধ্য আমরা টেস্টেও ভালো করব।’ তবে তথ্যটা সঠিক। বাংলাদেশ দল দ্বিতীয় টেষ্টে বা শেষের দিকে মেজাজ হারিয়ে ফেলছে। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস ২২ বছরের। ২০০০ সনে অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। 

আজ ২০২২। এ দীর্ঘ সময়েও টেস্ট ক্রিকেটারদের যে ধৈর্যের কথা যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করেছেন স্বয়ং বিসিবির সভাপতি, যিনি এ ক্রিকেট বোর্ডেরই শীর্ষ পদটিতে রয়েছেন এক যুগের বেশি সময় ধরে। তাহলে দীর্ঘদিন পর এসে এ আবিষ্কারটা তিনি তার বর্তমান কোচিং স্টাফের কাছ থেকে সংগ্রহ করলেন কেন? তিনি নিজেই এতদিন কেন উপলব্দি করে ব্যবস্থা নিলেন না। এ প্রশ্নটা তুলেছেন ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক শীর্ষ এক কর্মকর্তা ও বিশিষ্ট ক্রিকেট সংগঠক রফিকুল ইসলাম বাবু। 

দেশ’এর সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে যেয়ে তিনি বলেন,‘তাঁর (বিসিবি সভাপতি) কথার সঙ্গে আমি একমত। কিন্তু ক্রিকেটারদের যদি ধৈর্য না থাকে, মাইন্ডসেটের যে কথা উঠছে, সেটা যদি না থাকে- তার জন্য দায়ী কে? ঢালাওভাবে ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে বললে তো হবে না।’ 

বিসিবি’র এ সাবেক কর্তা রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন,‘আজ টি-২০ ও ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়ে যতটা ব্যস্ততা বিসিবি’র টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে সেব্যস্ততা কী আছে? সারা বছর একটি চারদিনের টুর্নামেন্ট। মাঝে মাঝে আরো একটি হলে হয়, নাও হয়। এনসিএল নামের ওই চারদিনের টুর্মামেন্টের উইকেট,মাঠ দেখুন। কী হয়ে আসছে। সেটা কী বিদেশী ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে খেলার জন্য যোগ্য প্রস্তুতি হয় কি-না? অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সেখানে কারা খেলছে। জাতীয় দলের টেস্ট স্কোয়াডে যারা, তারা কী সেখানে খেলছেন। হয়তো দুই একজন। তাও সব ম্যাচ না। অথচ তারাই জাতীয় দলে খেলছেন। তাহলে ঘরের মাঠে বেশি বেশি ম্যাচ খেলে যদি প্রস্তুতিটা নিতে না পারে। 

কিভাবে দীর্ঘক্ষণ বা সেসন বাই সেসন ব্যাটিং করতে হবে, সেটাতে যদি ঘরের মাটিতেই অভ্যস্ত না হলো। তাহলে সে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে টেস্টে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে যারা টেস্ট ক্রিকেটা নিত্য গবেষণা করে অনেক প্ল্যান প্রোগ্রামের মাধ্যমে দিনের পর দিন এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনার খেলোয়াড় কিভাবে দাঁড়াবে? অভিজ্ঞতাটা কী তার? টেস্ট ক্রিকেট হলো ক্রিকেটের বুনিয়াদ। আসল ক্রিকেট। সেটার প্রাকটিস নেই আপনার। আপনি রেজাল্ট আশা করেন কিভাবে?’

এ ক্রিকেট সংগঠক বলেন,‘বাংলাদেশ কদাচিৎ রেজাল্ট পাচ্ছে। এটা আমাদের ক্রিকেটাররাযে ন্যাচারাল ট্যালেন্ট, সে ঝলকানিতে হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ধারাবাহিক পারফরমেন্স হবে না। কখনই হবে না। টেস্ট ক্রিকেটে ভাল করতে হলে ঘরের মাঠে প্রচুর চারদিনের ম্যাচ, অনেকটা বাধ্যতামূলক করে খেলাতে হবে। পাশের দেশ ভারতের দিকে দেখুন। চারদিনের কতগুলো টুর্নামেন্ট তারা খেলছে। খেলোয়াড়রা উঠে আসছে। দু’চারজনের উপর নির্ভরশীল নন তারা। রিপ্লেসম্যান্ট বহু। ওরা তো এগিয়ে যাবেই।’ 

বাবু বলেন,‘আর আমাদের দেশে? বোর্ড টেস্ট ক্রিকেট ঘিরে কী প্ল্যান করছে? বিসিবি’র ক্রিকেট অপারেশন্সের কী প্ল্যান। কোথায় সে প্রাকটিস। মাঠগুলো কী ওই অলোকে তৈরি। যে একটা স্পিন নির্ভর। আরেকটি ব্যাটিং। আরেকটি পেস সহায়ক। ক্রিকেটাররা বিদেশে যেন একেক পরিস্থিতিতে নিজেদের মানিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিটা দেশেই সেরে নিতে পারেন? এমনটা কী হচ্ছে। হয়ে এসেছে? হয়নি। তাহলে ক্রিকেটারদের ধৈর্য আসবে কিভাবে? ক্রিকেটাররা কিভাবে ধর্য্য তৈরি করবেন।’ 

তিনি বলেন,‘বাংলাদেশ টি-২০, ওয়ানডে ভাল করছে, কারণ বিসিবি এগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে। টেস্টে সে নজর নেই। এ জন্য ওদিকে রেজাল্ট ভাল এদিকে নেই। যেভাবে চলছে এতে করে বছরে একটি দুটি ম্যাচে জয় পাওয়াও মুশকিল হয়ে যাবে। গত এক যুগে কয়টা টেস্ট খেলেছে, কটাতে জয়। রেজাল্টগুলো কেমন? এগুলোও মূল্যায়ন করতে হবে।’   

বিসিবি সভাপতি আরেকটি মন্তব্য করেছেন সিনিয়র ক্রিকেটারদের নিয়ে। তিনি বলেন,‘আমাদের এই (তামিম,সাকিব,মুশফিক) প্লেয়ারগুলোকে আমরা চাই না তারা মন খারাপ করে যাক (রিটায়ার্ট)। আমরা চাই তারা হাসিমুখে যাক। নিজেরা সিদ্ধান্ত (অবসর) নিক, যত তাড়াতাড়ি তারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে ততই ভালো।’ তিনি আরো বলেন,‘একটা সময় তো আসবে যদি সিদ্ধান্ত না নেয়, তখন আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের বলতে আমি না, কোচিং স্টাফ, ম্যানেজমেন্ট, সবাইকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ তিনি আরো বলেন,‘অলরেডি তো রিয়াদ টেস্ট থেকে সরে আসছে, তামিম টি-২০ খেলছে না, মুশফিক এখনো খেলছে, বাট ওর চিন্তা ভাবনা জানা যাবে, ও কী চিন্তা ভাবনা করছে, আমরা জানতে পারব। আর আছে সাকিব, সাকিবের ব্যাপারটা আবার এদের কারোর সাথে মিলে না।’

রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন,‘এটা ভুল কনসেপ্ট। মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। আজ সিনিয়ররা আছে বলেই ওয়ানডেতে যা জয় আসছে। সিনিয়ররা না থাকলে বড় দলের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে জয় পাওয়া দুষ্কর হয়ে যাবে। ছোট দলের বিরুদ্ধে হয়তো দু’চারটি জয় আসবে। কিন্তু বড় দলের বিরুদ্ধে সেটা ভয়ানক ব্যাপার হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন,‘তাছাড়া টেস্ট ক্রিকেটে তো আরো ভয়াবহ অবস্থা হয়ে যাবে। তরুণদের অস্বীকার করিনা। কিন্তু তারা ঘরের মাঠে খেলে কতটা অভিজ্ঞ। টেস্ট ক্রিকেট খেলতে অভিজ্ঞতা লাগে। পাঁচদিনের টেস্ট। ১৫ সেসন। ম্যাচের মেজাজ। পরিস্থিতি বুঝে ব্যাটিং, বোলিং। অনেক কিছু। 

এটা চারদিনের ম্যাচ খেলে খেলে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। বিদেশী ‘এ’ দলের সঙ্গে বেশি বেশি চারদিনের ম্যাচ খেলাতে হয়। এমনিতেই সব হয়ে যাবে না। এটাতে যা হবে এক ম্যাচ বা এক ইনিংস ভাল খেলার পর তার দুর্বলতা বের করে প্রতিপক্ষ তাকে ফাদে ফেলে আউট করে দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে। এভাবে টেস্ট ম্যাচ নিয়ে আগানো যায়না। আর এভাবে চললে আমাদের টেস্ট ম্যাচের ভবিষ্যত খুবই বাজে অবস্থায় পড়তে বাধ্য। সিনিয়রদের রেখে তাদের সঙ্গে জুনিয়র বা তরুণদের খেলিয়ে খেলিয়ে অভিজ্ঞ করে তুলতে হবে। হুট করে বাদ দেয়া ঠিক না। বা সিনিয়ররা চলে যাক সে পরিস্থিতির অবতারণাও উচিৎ না। যেটা মাহমুদুল্লাহর বিরুদ্ধে হয়েছে। 

শেষ ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ১৫০ রানে অপরাজিত। এমন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার প্রয়োজন। অথচ অবহেলায় সরে গেছেন। এখনও কী মাহমুদুল্লাহ’র যোগ্য উত্তরসুরী পাওয়া গেছে? অথচ তাকে রাখা উচিৎ ছিল। সুবিধা অসুবিধা খেলানো যেত। এক সময় সরে যেতেন। কিন্তু সেটা হয়নি। এখনও সিনিয়র যারা রয়েছেন। সাকিব,তামিম,মুশফিক এদের বড্ড প্রয়োজন।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে বিসিবি’র সাবেক এ কর্মকর্তা বলেন,‘তারা ছুটি চান। খেলতে চান না। এগুলো তো। আগে হয়নি। ক্রিকেটাররা সন্তানতুল্য বিসিবি’র। তাদের সঙ্গে সেভাবে ব্যবহার করা উচিৎ। তারা অবশ্যই কথা শুনবে। কিন্তু সে ব্যাবহার- হচ্ছে কী। তাদের সঙ্গে চুক্তিটা শক্তভাবেই হবে। যাতে তারা বাধ্য হন। কিন্তু কোথাও যেন ঝামেলা রয়ে গেছে। একটা দূরত্ব হয়ে গেছে। যার জন্য তারাও অমন করছে।’ 

বাবু বলেন,‘পত্রিকাতে দেখি, টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল বলছেন,‘শুধু টেস্ট ম্যাচ খেলে সংসার চালানো যায় না।’ ক্রিকেটারদের এমন হাহুতাশ কেন। টেস্ট ক্রিকেটাররা কেন পর্যাপ্ত ম্যাচ পাবেনা। কেন তারা অর্থ সঙ্কটে ভুগবে। এভাবে টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি অনীহা চলে আসবে। যা অনেকের ক্ষেত্রে হচ্ছেও। এসব কারণেই ক্রিকেটারদের মনযোগ কমে যাচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে-এটাই মনে হচ্ছে আমার।’


শেয়ার করুন