২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৯:৬:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ


স্মৃতিচারণে মোস্তফা জামাল হায়দার
আজও ভাবি মওলানা ভাসানী ওই সংবিধানটা কীভাবে পেলেন?
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
আজও ভাবি মওলানা ভাসানী ওই সংবিধানটা কীভাবে পেলেন? মোস্তফা জামাল হায়দার


মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার জীবনে একটি ভাষণে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন যে, এই আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে আর কোনো কম্প্রোমাইজের সুযোগ নেই। একে (আইয়ুব খানের) বিদায় নিতেই হবে, কোনো নির্বাচন হবে না এদেশে। বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারণ করে বললেন, আইয়ুবের অধীনে আর কোনো নির্বাচনই হবে না। এই কথা বলে তিনি বললেন, এই আইয়ুবের কনস্টিটিউশন (সংবিধান) আমি ছিঁড়ে ফেললাম। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, ভাবলাম এই সংবিধানের কপিটা তিনি কীভাবে পেলেন? আজও এটা ভাবি.. তিনি এটা কীভাবে পেলেন?

কথাগুলো বললেন, জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে কিছু স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে তিনি মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সম্পর্কে এই ঘটনাটি তুলে ধরেন। তার এই ঘটনাটি দেশ পত্রিকার জন্য তুলে ধরেছেন বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ 

মোস্তফা জামাল হায়দার হলেন বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা রাজনীতিক। তিনি জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর)-এর মহাসচিব হিসেবে অতীতে ও বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

মোস্তফা জামাল হায়দারের স্মৃতিচারটি তুলে ধরা হলো..

মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছাত্রজীবনে পাশাপাশি ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে তাকে দেখেছি, সান্নিধ্য লাভ করেছি এবং আমাদের তৎকালীন আন্দোলনের উৎসাহ-উদ্দীপনা পেয়েছি। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বা একদিনের বা একটি ঘটনা উল্লেখ করলেই তো শেষ করা যাবে না। আমরা আমাদের ছাত্ররাজনীতির সে-ই সময়টাতে প্রায়ই প্রতিদিনই মওলানা ভাসানীর সংস্পর্শে উৎসাহ-উদ্দীপনার পাশাপাশি দিকনির্দেশা পেয়েছি। তবুও তার ভেতরেও যদি একান্ত একটি দিনের কথাও বলতে হয়, তাহলে বলবো পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসক সেনাপ্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব খানের পতনের ঠিক প্রাক্কালের একটি ঘটনা। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী যখন এদেশে গণআন্দোলনকে সূচনা করে দিয়ে আন্দোলনের গতিমুখ উৎসারিত করে দিয়ে যখন সারা দেশে প্রচ-ভাবে ছাত্র-জনতা সবার আন্দোলনের অগ্নিশিখা প্রজ্বালিত হলো তারপর পরই মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তান সফরে গেলেন এবং পশ্চিম পাকিস্তান সফর করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় বিরাট জনসভা অনুষ্ঠিত করেন। ঠিক সে সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায় পশ্চিম পাকিস্তানেও জনগণকে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করেন এবং সে সময় পশ্চিম পাকিস্তানে তার ওই আহ্বানে সেখানকার জনগণের বিপুল সাড়া পান। পশ্চিম পাকিস্তানসহ সবখানে ব্যাপক জনসমাবেশ দেখে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী দারুণভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তিনি ট্রেনে করে লাহোরে আসছিলেন। পথে শাহি ওয়াল নামে একটি জায়গায় প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ট্রেনের কামরায় হামলা করতে চেষ্টা করে। যদিও জনগণ দ্বারা সেটা প্রতিহত হয়। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আচরণে মওলানা ভাসানী ভীষণ ক্ষেপে গেলেন। তিনি সে সময়ে তার সঙ্গী ন্যাপের যে নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন তাদের মধ্যে মশিউর রহমান, আনোয়ার জাহিদ এদেরকে ডেকে বললেন লাহোরে নেমেই আমি সংবাদ সম্মেলন করবো। সংবাদ সম্মেলন সে সময়ে তৎকালীন সময়ে সংবাদকর্মী যারা, তারা একটি প্রশ্ন ছুড়ে দেন। বললেন, হুজুর আপনার সম্পর্কে একটি মন্তব্য সারা পাকিস্তান ছাড়িয়ে সারা বিশ্বেই বলা হচ্ছে, আপনি প্রোফেট অব ভায়োলেন্স..। সংবাদকর্মীরা জানতে চাইলেন, মওলানা ভাসানী তাকে উদ্দেশ করে তোলা এধরনের মন্তব্যকে তিনি কীভাবে দেখেন? এর জবাবে মওলনা ভাসানী বললেন, প্রোফেট অব ভায়োলেন্স কেন বলে তা আমি জানি না। তবে জুলুমবাজদের বিরুদ্ধে মজলুমের যে লড়াই সেটা তো আপনাদের কবি আল্লামা ইকবাল বহু আগেই বলে গেছেন। তিনি বলেছেন যে ফসল থেকে কৃষকের শস্য মেলে না, সে খেতের ফসল জ্বালিয়ে দাও, জ্বালিয়ে দাও..। আমি তো আমার জীবদ্দশায় কোনো জালেমের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করিনি এবং আমার এই সংগ্রাম চলবে। 

যাই হোক, সেখান থেকে মওলনা ভাসানী যখন ঢাকা বিমানবন্দরে নামলেন, তখন আমরা বাংলার জনগণ তাকে বিপুল সংর্বধনা দিতে এয়ারপোর্টে গেলাম। পূর্ব পাকিস্তানের সভাপতি হিসেবে আমি এবং আমার সঙ্গে তখন ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ। আমরা সেদিন খোলা ট্রাকে মওলানা ভাসানীকে চেয়ারে বসিয়ে একপাশে ড. মাহবুব উল্লাহ। আর আমি আরেক পাশে বসে খোলা ট্রাকেই ঢাকায় চলে এলাম। উনি সরাসরি আমাদের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে এসে উনি জ্বালাময়ী এক ভাষণ দিলেন। তার এই জ্বালাময়ী ভাষণের তেজ আর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর আমি কোনোদিনই ভুলতে পারবো না এবং আমার জীবনে আমার জানামতে, যতটুকু অনুভব করেছি তাহলো এটাই ছিল আমার জীবনে দেখা মওলানা ভাসানীর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এ ঘটনাটি ঘটে আসলে আইয়ুব খানের পতনের ঠিক কয়েকটি দিন আগে মাত্র। তিনি তার ভাষণে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন যে, এই আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে আর কোনো কম্প্রোমাইজের সুযোগ নেই। একে (আইয়ুব খানের) বিদায় নিতেই হবে। কোনো নির্বাচন হবে না এদেশে। বলিষ্ঠ কণ্ঠে উচ্চারণ করে বললেন আইয়ুবের অধীনে আর কোনো নির্বাচনই হবে না। এই কথা বলে তিনি বললেন, এই আইয়ুবের কনস্টিটিউশন (সংবিধান) আমি ছিঁড়ে ফেললাম। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, ভাবলাম, এই সংবিধানের কপিটা তিনি কীভাবে পেলেন? আজও ভাবি..। তিনি দুই হাতে টেনে কনস্টিটিউশনটা ছিঁড়ে ফেলে বললেন, ‘আইয়ুবের এই সংবিধন মানি না মানি না.. আইয়ুবের অধীনে কোনো নির্বাচনই হবে না। আইয়ুবের পতন অনিবার্য হয়ে গেছে ..। বাস্তবিকই আমরা অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করলাম, এমন বক্তব্য দেওয়ার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আইয়ুব খানের পতন ঘটলো। এই ঘটনাটি আমার মনে ভীষণভাবে দাগ কাটে। মজলুম জননেতা ভাসানীর সঙ্গে আমার জীবনে এদিনটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন বলে মনে করি। তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন যে রাজনৈতিক পদক্ষেপ আমি কোনোদিনই ভুলতে পারবো না।

শেয়ার করুন