১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, রবিবার, ০৭:২৩:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘সহিংসতা, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসার একমাত্র উত্তর ভালোবাসা’ বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে- ড. ইউনূস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ৩-দিনব্যাপী ‘তারুণ্যের উৎসব’ সুন্দরবন দিবসের বিষয়ে তরুণ প্রজন্ম কিছুই জানে না! ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন দুবাই পৌঁছেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত সরকার আইয়ামে জাহেলিয়া প্রতিষ্ঠা করে গেছে- ড. ইউনূস মানবাধিকার লঙ্ঘনে শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত- ভলকার টার্ক হজযাত্রীদের সঙ্গে শিশুদের নিতে সৌদি আরবের নিষেধাজ্ঞা


ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্রেশন অভিযান
টার্গেট প্রতিদিন ১৫০০ গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০১-২০২৫
টার্গেট প্রতিদিন ১৫০০ গ্রেফতার শিকাগোতে ২৬ জানুয়ারি ইউএস ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমসের অভিযান


প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে অফিসে আসার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) কর্তৃপক্ষ ষাড়শী গ্রেফতার অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে গত ২৬ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত মোট ২,৬৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আইসিই ২৬ জানুয়ারি রবিবার ১,১৭৯ জনকে গ্রেফতার করেছে, যা আগের দিনের ৯৫৬টি গ্রেফতারের চেয়ে অনেক বেশি। এর মধ্যে ৬১৩ জন, অর্থাৎ প্রায় ৫২ ভাগ, অপরাধমূলক গ্রেফতার হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। বাকি ৫৬৬ জনকে মূলত আইনবহির্ভূত অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকার জন্য আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই নিরীহ অপরাধী বা যাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই, তারা শুধু বৈধভাবে দেশে অবস্থান করছেন না। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই, ট্রাম্প প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এর মধ্যে কোনো বাংলাদেশিকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। ইউএস ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের লক্ষ্য প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা।

২৭ জানুয়ারি আইসিই এজেন্টরা জর্জিয়া রাজ্যের টাকার শহরের গির্জায় প্রার্থনা করার সময় এক মেক্সিকান নাগরিককে আটক করেন, যিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাস করছিলেন। আটলান্টায় ডেকালব কাউন্টি স্কুল ডিস্ট্রিক্ট অভিভাবকদের একটি নোট পাঠিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অভিবাসন এজেন্টদের স্কুলে প্রবেশ করতে দেবে না। এ ধরনের অভিযানগুলো যেভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বৃহৎ সংকটে ফেলছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পরিণতি সম্পর্কে আরো কঠোর হতে পারে।

এ অভিযানগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে পরিচালিত হয়েছে, যেমন শিকাগো, আটলান্টা, অস্টিন, ডেনভার, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং সান হুয়ান, যেখানে মূলত অপরাধী ইতিহাস বা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত ব্যক্তিদের লক্ষ্য করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ জন গ্রেফতার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বর্তমান গ্রেফতারের সংখ্যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে কম। সীমান্ত নিরাপত্তা প্রধান টম হোমান জানিয়েছেন, অভিযানটি এখন তার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং দেশব্যাপী আরো গ্রেফতার হওয়ার আশা করা হচ্ছে। এ অভিযানগুলো জনমনে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি করেছে এবং অনেকে অভিযানের কৌশল ও জাতিগত প্রোফাইলিংয়ের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে আটজনকে সবচেয়ে খারাপ অপরাধী হিসেব চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি গ্যাং সদস্যও ছিলেন-কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে ৫৬৬ জন যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা শুধু অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার কারণে আটক হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো অপরাধের অভিযোগ নেই। অবৈধভাবে বসবাস করা একটি সিভিল অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, যা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় যদি কোনো অবৈধ অভিবাসী পূর্বে ডিপোর্ট হয়ে ফিরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রে অনুমতি ছাড়া। ট্রাম্প প্রশাসন বারবার ঘোষণা করেছে যে, তারা গুরুতর অপরাধে যুক্ত অভিবাসীদের আটক এবং বিতাড়িত করার ওপর গুরুত্ব দেবে, কিন্তু সাম্প্রতিক গ্রেফতার পরিসংখ্যান এ প্রতিশ্রুতিগুলোর প্রতি সন্দেহের জন্ম দিতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্ত প্রধান টম হোম্যান জানিয়েছেন যে, তিনি ‘কিছু’ কল্যাটারাল গ্রেফতারের ব্যাপারে অবহিত, যেখানে অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকা ব্যক্তিরা স্রেফ অভিযান চলাকালীন অন্য কোথাও ছিলেন এবং তাদের আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই ধরনের গ্রেফতার আগামী দিনে আরো বাড়তে পারে, যেহেতু দেশব্যাপী অভিবাসন অভিযান বৃদ্ধি পাচ্ছে। হোম্যান বলেছেন, আমরা যত বেশি সম্ভব অপরাধী গ্রেফতার করতে চাই। তারা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি, আর যেহেতু কেউ অবৈধভাবে এখানে আছে, তারা এলে আমাদের তাদেরও নিয়ে আসতে হবে।

যেসব শহর, যেখানে আইসির রেইড চলছে: শিকাগোতে রোববার ইমিগ্র্যান্ট আটক অভিযানের কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাম্পের সীমান্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা টম হোমান জানান, শিকাগোতে আটক হওয়া ৬ জন গুরুতর অপরাধে দোষী, দুইজনের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে এবং আরো অনেকে গ্যাং সদস্য। অভিযানের জন্য ১০টি আলাদা টিম শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে। শিকাগো একটি স্যাংচুয়ারি সিটি, যেখানে অভিবাসী সংক্রান্ত আইনি কার্যক্রমে শহর পুলিশের সহযোগিতা নিষিদ্ধ। মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন নিশ্চিত করেছেন যে, শিকাগো পুলিশ আইসির কার্যক্রমে অংশ নেয়নি।

লস অ্যাঞ্জেলেসে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশন এবং ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন জানায়, তারা ট্রাম্প প্রশাসনের ইমিগ্রেশন নীতির সঙ্গে সংগতি রেখে আইনপ্রয়োগের কাজ চালাচ্ছে। ফিনিক্স: ফিনিক্স অফিস থেকে ডিইএ জানায় যে, তারা ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের সহযোগিতায় কাজ করছে। সান দিয়েগো: ডিইএর সান দিয়েগো অফিসও রোববার অভিযান চালানোর ছবি শেয়ার করেছে। ডেনভার: রোববার ডেনভার শহরে ভেনেজুয়ালান গ্যাং ‘ট্রেন ডি আরাগুয়া’ (টিডিএ)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। আইসই জানায় যে, সেখানে ৪১ জনকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

মায়ামিতেও রোববার অভিযান পরিচালিত হয়েছে। আইসই মায়ামি অফিস জানায়, তাদের মধ্যে একজন নিকারাগুয়ান নাগরিক ছিলেন, যিনি গুরুতর আক্রমণ, অবৈধ অস্ত্র বহন ও সাসপেন্ড লাইসেন্সে গাড়ি চালানোর অভিযোগে আটক হয়েছেন। আটলান্টায় ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছে। ইউএস ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট টেক্সাসের উত্তরাঞ্চলে রবিবার অভিযানে অংশ নিয়েছে, যেখানে ডালাস, আর্লিংটন, ফোর্ট ওয়ার্থ এবং কলিন কাউন্টিতে অন্তত ৮৪ জনকে আটক করা হয়। সান জুয়ান, পুয়ের্তো রিকো: সান জুয়ান মেয়র মিগুয়েল রোমেরো রবিবার ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন নির্বাহী আদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ক মন্তব্য করেছেন। তিনি জানান, আমরা অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় সহায়তা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করবো। পাশাপাশি, ক্যালিফোর্নিয়া, কোলোরাডো, পুয়ের্তো রিকো এবং ইউএস ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জে ইমিগ্রেশন অভিযান পরিচালিত হয়েছে বলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নিশ্চিত করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্ত প্রধান টম হোম্যান জানিয়েছেন, আমরা অপরাধী অভিবাসীদের প্রথমে টার্গেট করছি। তবে তিনি আরো বলেন, একসময় এমন আসবে যখন আমাদের পলাতকদের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এ ধরনের অভিযানগুলো যেভাবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে ১১ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বৃহৎ সংকটে ফেলছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের পরিণতি সম্পর্কে আরো কঠোর হতে পারে।

শেয়ার করুন