২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:৫৬:২০ পূর্বাহ্ন


ডাকার রক্ষায় নয়া বিধি হলেও ৬.১ লাখ ড্রিমারদের জন্য চাই কংগ্রেসের আইন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৮-২০২২
ডাকার রক্ষায় নয়া বিধি হলেও ৬.১ লাখ ড্রিমারদের জন্য চাই কংগ্রেসের আইন


হোমল্যান্ড সিকিউরিটি গত সপ্তাহে ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভাল (ডাকা)-এর নতুন বিধি জারি করে এই ব্যবস্থাকে নতুন জীবনদান করেছে। এতে ২০১২ সালে জারিকৃত প্রথম নির্বাহী আদেশ বলে ৮ লাখ যুবক, যারা তাদের ১৬ বছর বয়সের পূর্বে আমেরিকায় এসেছে, তাদের এদেশে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তারা এদেশে এসেছিলেন তাদের পিতামাতার সঙ্গে, যখন তারা এদেশ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। এখন তারা বড় হয়ে এদেশের সমাজে, বিজ্ঞানী হয়ে ডাক্তার হয়ে, শিক্ষক হয়ে, নার্স হয়ে এদেশেরই সেবা করছে। তাদের স্বদেশ বলে তারা জানে আমেরিকাকে। এই ডাকা তাদেরই সিটিজেনশিপ দেয়ার লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছিল। কিন্তু নির্বাহী আদেশে এতোদিন ওয়ার্ক পারমিট পেয়ে আসছিল, যা আগামী ৩১ অক্টোবর শেষ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু নির্বাহী আদেশের ওপর বারবার এই ব্যবস্থার বিরোধীদের বিচার বিভাগীয় আঘাত এই ডাকাকে নাজুক অবস্থায় রেখে দিয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থাকে নতুন করে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি থেকে বর্ধিত করা হলেও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করে এই ডাকাকে রাখতে  অন্তত এক অসম্পূর্ণ ও অস্থায়ীভাবে হলেও কংগ্রেসের সমর্থনে বিল পাস করতে হবে। এর কারণ পরবর্তীতে বিশ্লেষণ করছি। এখন চূড়ান্ত রুল জারি করে নির্বাহী কর্তৃত্ব বা হোমল্যান্ড সিকিউরিটি তাদের যেটুকু ক্ষমতা আছে, তার সবটুকুই ব্যবহার করেছে। 

নতুন বিধিতে বলা হয়েছে- (১) ডাকার বর্তমান ক্রান্তিকালীন ব্যবস্থা বজায় রাখার লক্ষ্যে; (২) ডাকার অনুরোধকারীদের বর্তমান প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট আবেদনের সুযোগ বজায় রাখার জন্য; (৩) আর ডাকার দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটাই বাস্তবতা হিসেবে দেখা যে, ডাকা কোনো প্রকার বৈধ স্ট্যাটাস নয়। তবে ডাকার সুযোগ লাভকারীরা অন্যান্য বিলম্বিত অ্যাকশনের সুবিধাভোগীদের মতো তাদের এদেশে উপস্থিতি বিশেষে উদ্দেশ্যে সাধনে বৈধ। এই চূড়ান্ত বিধি ৩১ অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। ইতিমধ্যে ২০২১ সালের ১৩ জুলাই এর এক যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের দেয়া টেক্সাসের দক্ষিণ ডিস্ট্রিক্টের নির্দেশের ওপর ইনজাঙ্কশন বলবত রয়েছে। টেক্সাস কোর্ট ফাইনাল রুলের অধীনে ডাকার অনুরোধকারীদের ওয়ার্ক পারমিট দেয়া বন্ধ করেছিল। যেহেতু সেই নির্দেশ আংশিক অকার্যকর করা হয়েছে, সেহেতু হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডাকা নবায়নের চূড়ান্ত বিধি জারি করেছে। 

কিন্তু কংগ্রেসের অ্যাকশন জরুরি 

এই বিধির চূড়ান্ত রূপ, বর্তমানে যারা ডাকার সুযোগ পাচ্ছে তাদের জন্য করা হয়েছে। এখন লাখ লাখ বয়স্ক যুবক যারা স্বল্প বয়সে এ দেশে এসেছে তারা ডাকার জন্য আবেদন করতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ১০ হাজার। তারা তাদের জীবন ধারণে কাজ করার জন্য যে দেশকে এতোদিন পর্যন্ত জেনেছে, বুঝেছে তার ওপর অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। আর তা এমন একসময়ে যে সময়ে তাদের রক্ষার ব্যবস্থা কোর্টে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। কিন্তু কংগ্রেসের ব্যবস্থা নেয়া না হলে এসব বয়স্করা, যারা এদেশের স্বপ্ন দেখছেন তাদেরকে ডিপোর্ট করা হবে। 

গত মাসে পঞ্চম সার্কিট কোর্টে (নিউঅরলিন্সে) তিন জাজের প্যানেল টেকসাস অ্যাটর্নি জেনারেলের ডাকা বিরোধ মৌখিক যুক্তি শুনেছেন। তারা যুক্তি দেখান যে, ডাকা কর্মসূচি নির্বাহী কর্তৃত্ব ছাড়িয়ে গেছে। তাতে টেক্সাসের শত শত মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকার বিচার বিভাগ এই কর্মসূচিকে ডিফেন্ড করে। তারা টেক্সাসের ফেডারেল জাজের দেয়া নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এক অসম প্রয়াস চালায়। টেক্সাসের ফেডারেল জাজ এই ডাকাকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে ডাকার সুযোগ লাভকারীরা ওয়ার্ক পারমিট নবায়ন করার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু নতুন করে কেউ আবেদন করতে পারেনি। অর্থাৎ ড্রিমারদের আশা-নিরাশার মধ্যেই রয়েছে। পঞ্চম সার্কিট কোর্টের রায় কি হবে তা জানা যাবে এই শীতের সময়। রায় যা-ই হোক না কেন বিষয়টি যাবে সুপ্রিম কোর্টে। আর এতে সামান্যই সন্দেহ রয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের কাছে ডাক বাতিল হবে না। সংখ্যাধিক্য জাজের কবলে পড়ে লাখ লাখ ডাকার সুযোগ লাভকারীর কোনো বৈধ স্ট্যাটাস থাকবে না। বর্তমান ডাকার সুযোগ লাভকারীদের হাতে দু’বছরের কম সময় থাকবে বৈধভাবে থাকার। তারপর তারাও বৈধ স্ট্যাটাস পাবে না। বর্তমান ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেখায় তাদের বহিষ্কার করা হলে সমাজে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে। পারিবারিক অশান্তি সৃষ্ট হবে। আমেরিকান অ্যাকশন ফোরাম দেখেছে ডাকার সুযোগ গ্রহণকারীরা দেশের জিডিপিতে ৪২ বিলিয়ন ডলারের অবদান রাখে। এবং তাদের রয়েছে পজিটিভ ফিসক্যাম্প এর ৩.৪ বিলিয়ন ডলারের প্রভাব। ডাকা লাভকারীদের এক-চতুথাংশ বিবাহিত। তাদের এক-তৃতীয়াংশের রয়েছে ছেলেমেয়ে। সেসব শিশুদের ৯৯ শতাংশ আমেরিকার নাগরিক। আর ৭৫ হাজার ডাকা লাভকারীর রয়েছে মর্টগেজ দায়। 

এ অবস্থায় কোথায় কংগ্রেসের কাজ? 

ডাকা লাভকারীরা ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় দলের সমর্থন পেয়ে থাকে। তাদের এলাকাবাসী তাদের এদেশে থাকা সমর্থন করে। কিন্তু এই কর্মসূচি এখনো রাজনৈতিক কারণে মোডিফাই করা থেকে দূরে রয়েছে। তবে কংগ্রেসে কাজের জন্য বিশাল ক্যালেন্ডার রয়েছে, কিন্তু ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত বিষয় টেবিলে নেই। কিন্তু ফার রাইটস থেকে বামপন্থী সবাই ইমিগ্রেশন নিয়ে ক্যাম্পেইন করে থাকেন। কাজেই এই বিষয়টা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার আগেই এই বছরের মধ্যে কংগ্রেসের উচিত একটি ছোট আকারের, অস্থায়ী ভিত্তিক লিগ্যাল স্ট্যাটাস দিয়ে এবং বর্তমান ডাকা লাভকারীদের ওয়ার্ক পারমিট লাভের আবেদন প্রক্রিয়া যাতে বন্ধ না হয় তার ব্যবস্থা করা। এই সমাধান সন্তোষজনক নয়। তাছাড়া সম্পূর্ণও নয়। এর নেহায়েত অস্থায়ী। কিন্তু কোর্ট সিদ্ধান্ত এখানে মাথার ওপর ঝুলে আছে। রিপাবলিকানরা কোনোভাবে ড্রিমারদের সাহায্য করতে রাজি নয়। কাজেই যে কোনো একটা বিল কোনো আইন না থাকার চেয়ে শ্রেয় বলে মনে হয়। 

এদিকে ডাকার জন্য নতুন বিধি জারির পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন রিপাবলিকানদের এই কর্মসূচি বিরোধিতার জন্য সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, ড্রিমাররা এই জাতির অঙ্গের সাথে মিশে গেছে। 

শেয়ার করুন