২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:১৮:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


আপসহীন পথেই থাকবে বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
আপসহীন পথেই থাকবে বিএনপি


সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আন্দোলনের পথে এখনো আপসহীন থাকবে বিএনপি। অন্যদিকে এই আন্দোলনকে দ্রুত চাঙ্গা করতে যা যা করার প্রয়োজন তা-ই করবে দলটি। এর পাশপাশি উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাপারে আপসহীন থাকবে। এসব জানা গেছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলে।

কেন আপসহীন থাকবে বিএনপি..

মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনারা মনে করে সরকার যতোই মুখে উচ্চবাচ্য করুক না কেনো তারা বড়ো ধরনের ভূ-রাজনৈতিক ও আরো অন্য ধরনের চাপে পড়ে গেছে। এমন একটি পরিস্থতির দিকে যাচ্ছে দেশে সেটা আগেও অনেকেই আঁচ করা গেছে। আর এমন জটিল ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণে বাংলাদেশকে রেখে যার যার মতো খেলা খেলে যার যার ফসল ঘরে তুলে ফেলেছে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সে-ই খেলায় নিজেদের আরেকবার ক্ষমতায় থাকার সুযোগটি বাগিয়ে নিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অন্যদের জন্য বেশ সহায়ক হলেও এমন পরিস্থিতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য খুবই সাময়িক। তাই বিএনপি’র এই পক্ষটি মনে করে সামনের দিনের একটি ভালো সুযোগের জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। আর এজন্য বিএনপি’কে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ নানা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আন্দোলনকে আরোও বেগবান করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই। 

উপজেলা নির্বাচনে না

বিএনপি’র এই পক্ষটি আরো মনে করে যে, চলমান আন্দোলনে থেকে পিছপা বা এর বিপরীত কিছু করতে গেলে পুরো রাজনৈতিক মাঠে দলটি সর্বস্তরে হাস্যকর হয়ে যাবে। বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করে কোনো সাংগঠনিক ভুল বা কারো অবহেলা বা গাফিলতি বা দুর্বলতার সুযোগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরেকবার ক্ষমতায় বসে যায়নি। তাদের মতে, একটি মহল এটি প্রচার করে দলে বড় ধরনের বিভেদ তৈরির ক্ষেত্র বানাতে চায়। বিএনপি’র হাই কমান্ড যে বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিয়েছেন তার প্রমাণ মিলে সম্প্রতি একটি বহুল প্রচারিত গণমাধ্যমে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছু কথা বলেছেন। এতে তিনি স্পস্ট করেই সাংগঠনিক ও নেতৃত্বের দুর্বলতা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। পত্রিকাটিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছে জানতে চেয়েছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দলগুলো কার্যত ব্যর্থ হয়েছে দলের সাংগঠনিক ও নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে। এর উত্তরে তিনি বলেছেন, সারাদেশে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে এবং নেতৃত্বের দিক থেকে কোনোভাবেই দুর্বল নয়। সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে টানা ১৫ বছর বিএনপি নেতাকর্মীর ওপর ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন, মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়ে আসছে। বারবার দল ভাঙতে নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় সরকার। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত্তির ওপর ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। এমন উত্তর দেয়ার পাশাপাশি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি আশাবাদও জুড়ে দিয়েছেন। তা হলো তিনি বলেছেন, কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন কখনও ব্যর্থ হয় না, এবারও ব্যর্থ হয়নি। আওয়ামী লীগই একপক্ষীয় নির্বাচন করে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এমন দৃঢ়তার কারণেই দলটি সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ নানা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আন্দোলনের পথে এখনো আপসহীন থাকতে গিয়ে উপজেলায় নির্বাচনেও অংশগ্রহণ প্রশ্নে ‘না’তে থাকবে। এমন তথ্য সর্বশেষ পর্যন্ত পাওয়া গেছে দলের বেশ কয়েকটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে। 

খসরু-আব্বাসের কণ্ঠেও আপসহীনতা

এদিকে সাড়ে তিন মাস কারাবন্দি থাকার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কারাফটকে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করেন আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় সেখানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তাদের উদ্দেশে মির্জা আব্বাস বলেন, গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন যেভাবেই হোক চলবে। অপরদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী একটি পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিল সরকার। একতরফা এই নির্বাচনে বিএনপির কিছু নেতাকে লোভ দেখিয়ে দল থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল আওয়ামী লীগ। তাতে ব্যর্থ হয়ে আওয়ামী লীগ নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছে। অবৈধ এই নির্বাচন বয়কট করার জন্য বিএনপি সারা দেশের মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছিল। দেশের জনগণ সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছে। এটাই হলো বিএনপির চূড়ান্ত বিজয়। আন্দোলনের বিজয়ের চেয়ে এই বিজয় আরও অনেক বড়। বিএনপির মতো একটি গণতান্ত্রিক দল তাদের সঙ্গে ‘নিগোশিয়েট’ করবে এটা ভাবাও তো বোকামি।

শেষ কথা 

বিএনপি’র হাইকামান্ড মনে করে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনারা অংশ নেয়নি। এমন নির্বাচন করে ফেলার পরও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যতো জোর গলায় উচ্চবাচ্য করুক না কেনো তাদের এনিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। তাদের মধ্যেও আছে নানান ধরনের শঙ্কা। কেননা আমেরিকাসহ পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলি সাফ জানিয়ে দিয়েছে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাদের এমন বক্তব্যের পর খবর এসেছে যে গণতন্ত্র সূচকে দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয় গণতন্ত্র সূচকে গতবারের তুলনায় দুই ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১৬৭টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৭৫তম। আর বাংলাদেশে এখনো ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ রয়েছে। যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রকাশ করা ২০২৩ সালের গণতন্ত্র সূচকে (ডেমোক্রেসি ইনডেক্স) এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপি’র বেশ কয়েকজন নেতা দেশ প্রতিনিধির সাথে আলাপ চারিতায় যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আমেরিকাসহ পশ্চিমা শক্তিধর দেশগুলির পক্ষ থেকে এটিকে সুষ্ঠু হয়নি বলে সার্টিফিকেট দেয়ার পর গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের দুই ধাপ পিছিয়ে যাবার খবর সরকারের জন্য স্বস্তিদায়ক না। আর একারণে তারা মনে করে সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনসহ নানা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা আন্দোলনের পথে আপোষহীন থাকা বিএনপি’র জন্য অনেক প্লাস পয়েন্ট। আর এসব কারণে বিএনপি’র নেতারা মনে করেন একটি শক্ত আন্দোলন যেমন চালিয়ে যেতে হবে তেমনি এসরকারের অধীনে উপজেলাসহ কোনো নির্বাচনেই অংশ নেয়াই যাবে না। বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করে এই নির্বাচনে অংশ নেয়া মানেই সরকারের অধীনে হওয়া সব নির্বাচনকে বৈধ করে দেয়া। আর এতে দলের হাই কমান্ড মনে করে একদিকে বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষা করার বিএনপি নেতৃত্বে করা আন্দোলনটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। বিএনপিসহ সমমনারা সারা দেশে বিতর্কিত হয়ে পড়বে। জনগণকে আর আন্দোলনমুখী করা যাবে না।

শেয়ার করুন