২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৩৪:৩৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


ন্যূনতম সমঝোতা না হলে সংঘাত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
ন্যূনতম সমঝোতা না হলে সংঘাত


আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে একের পর এক পশ্চিমা মিশন বাংলাদেশে আসছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহটাই বেশি। গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় ভিত্তি দেওয়া বা মানবধিকার বিষয়াদি আরো শক্তিশালী করা আপাতত উদ্দেশ্য বলা হলেও প্রকারান্তরে নির্বাচনব্যবস্থা অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে প্রভাব সৃষ্টি সফরগুলোর উদ্দেশ্য বলার অপেক্ষা রাখে না। সফরে মার্কিন প্রতিনিধিদল কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবির সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে সভা করেছে, সুশীল সমাজ তথা মানবাধিকারে কর্মরত সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে।

পররাষ্ট্র সচিবকে সঙ্গে নিয়ে উজরা জেয়া সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেছেন। শুনেছি সাংবাদিকদের সঙ্গে সেই সওয়াল জওয়াব। অন্তরালে কী হয়েছে সুস্পষ্ট নয়। তবে যা বলা হয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সুদৃঢ় করার জন্য ওরা চায় বাংলাদেশে একটি সুস্থ, নিরপেক্ষ, অবাধ নির্বাচন। আলোচনায় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার বিষয়ে কথা বলা বিষয়ে উল্লেখ নেই। তবে আজরা তাদের সফরকালে ঢাকা সরকারি দল এবং বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভা আয়োজনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। জানা গেল না প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে প্রকৃতপক্ষে কী আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এবং সরকার কনস্টিটিউশনের আলোকে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের অঙ্গীকার করছেন। সেখানে বর্তমান সরকার বহাল থেকেই নির্বাচন কমিশনের আওতায় ডিসেম্বর ২০২৩ বা জানুয়ারি ২০২৪ শুরুতে নির্বাচন হওয়ার কথা। অথচ বিরোধী দলগুলো বর্তমান সরকারের অধীনে স্বাধীন, নিরপেক্ষ নির্বাচন বিষয়ে সন্দিহান হয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বিষয়ে সোচ্চার। ইতিমধ্যে তারা সরকারের পদত্যাগ চেয়ে এক দফা দাবির ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। অবশ্য মার্কিন পরিদর্শক দল সুস্পষ্ট বলেছে কোনো নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠী নয়, তারা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অহিংস নির্বাচন বিষয়ে আগ্রহী। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায ইন্দো-প্যাসিফিক জোট, র‌্যাবের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বা মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেল না।

বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চল ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান সবার স্বার্থ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান চীন প্রভাব সীমিত করতে। এই অঞ্চলে ভারত আরেক প্রধান শক্তি। ইদানীং মার্কিন প্রভাবের বাইরে ভারত, চীন, রাশিয়া বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক গড়ে উঠছে। ভারত কিন্তু এখন অনেকটাই নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে। হয়তো টেকনিক্যাল কারণে ওই নিরপেক্ষতা তাদের। তবে বাংলাদেশের উন্নয়নে সব দেশের স্বার্থ জড়িত। ভারত কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে, বাংলাদেশে ভারতকে এড়িয়ে কোনো দেশ কিছু অর্জন করতে পারবে না, এমনটাই মনে হচ্ছে। আর তাই ভারতের বর্তমান নীরব অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করতে হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা শক্তির বাংলাদেশ বিষয়ে তৎপরতা নিয়ে চীন, রাশিয়া, ইরান নিজেদের অবস্থান থেকে বিবৃতি প্রদান করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকেও প্রতিক্রিয়া জানায় হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ঘটনা হবে যদি বাংলাদেশ বাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকার (ব্রিকস ) জোটে যোগদান করে। বিদ্যমান অবস্থায় সেটি অচিরেই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আপাতত এটুকুই বলবো মার্কিন ভিসানীতির কারণে বাংলাদেশে সরকার এবং বিরোধী দল কিছুটা সংযত আচরণ করছে। এখন দেশের স্বার্থে বিবদমান দলগুলো আলোচনার টেবিলে বসে ন্যূনতম ইস্যুভিত্তিক সমঝোতা না করলে সংঘাত সৃষ্টি হবে। সেটি কারো জন্যই মঙ্গলময় হবে না।

সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। জনগণ অবাধে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করুক। বিশ্ব বাবস্তবতা ২০১৪ বা ২০১৮-এর  মতো নির্বাচন করার পরিবেশ-পরিস্থিতি নেই। এটি সবাইকে স্বীকার করতেই হবে। কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে অমন একটা ভীতি বিদ্যমান এখনো সেটা পরিহারের দায়িত্ব নেবে কে এটা বড় প্রশ্ন। সাধারণ মানুষ মনে করে ভোট আদৌ দেওয়া যাবে কি না বা ভোট দিতে গিয়ে মার্কিংয়ে পড়তে হবে কি না। জনমনে এই যে দুশ্চিন্তা, সেখানেই মার্কিনিদের অনুপ্রবেশ। তারা বলছেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্তে ভোট দিক। তারা তাদের নেতা বেছে নিক। তাদের এমন বক্তব্যের তাৎপর্য উপলব্ধি করা বাঞ্ছনীয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে হারানো আত্মবিশ্বাস ফেরাতে সবাইকেই কাজ করতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। আর সেটা যদি না হয়, তাহলে সমস্যা। 

পরিশেষে বলি উজরা জায়া এবং ডোনাল্ড লুর সফর থেকে সরকারি দল বা বিরোধী দল কারোই উচ্ছ্বসিত হওয়ার কিছু নেই। নিজেদের সমস্যা অন্যের কোর্টে ঠেলে দেওয়ার লজ্জায় জাতি লজ্জিত হওয়া উচিত আত্মসম্মানবোধ থাকলে। 

শেয়ার করুন