২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:১৮:২০ পূর্বাহ্ন


বদলে যাচ্ছে গ্রাম
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৫-২০২২
বদলে যাচ্ছে গ্রাম


করোনা অতিমারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারের প্রণোদনা দিলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থা এবং দুর্নীতির কারণে জনজীবনে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি হচ্ছে। দেশব্যাপী বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কিন্তু কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অতিবিজ্ঞ মানুষের শঙ্কার প্রতি সঙ্গতি পূর্ণ নয়। গ্রাম গঞ্জের মানুষ কিন্তু দুই বেলা ভাত, সবজি মাছ ভাত পেট পুড়ে খাচ্ছে। গ্রামগুলো আসলেও বদলে যাচ্ছে। অনেক শিক্ষিত তরুণ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রিধারী তরুণরাও কৃষি কাজ, মাছ চাষ, পশুপালনের জন্য গ্রামে ফিরে গেছেন। প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়া বা অন্যান্য মাধ্যমে নওগাঁ, সাতক্ষীরা, ফরিদপুর, সিলেট, দিনাজপুরের সাধারণ জনগণের সংযুক্ত হয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী হচ্ছি। সমস্যা আছে অনেক কিন্তু সম্ভাবনা কম নয়। কৃষিপণ্য, সবজি, ফলসহ অনেক কিছুই রফতানি পণ্য তালিকায় সংযুক্ত হয়ে দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সমৃদ্ধ করছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুটি ভিশন ‘গ্রাম হবে শহর’ এবং একটি বাড়ি একটি খামার ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়িত হওয়ায় সমপর্যায়ের অর্থনীতির অনেক দেশের থেকেও অপেক্ষাকৃত নিরাপদ আছে বলা যায়। করোনা অতিমারীর অভিঘাতে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি সংকটের সৃষ্টি করলেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। দেশের সবার দুয়ারে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় গ্রামগঞ্জে সাধারণ মানুষ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করছে। 

এতো সময় স্বভাবনার কথা বললাম, এখন কিছু সমস্যার কথা বলি। অনেকের মতো আমার প্রশ্ন ঢাকাসহ প্রধান শহরগুলো থেকে ধারণ অতিরিক্ত জনবলকে গ্রামমুখী করা যাচ্ছে না কেন? আমরা দেখছি সর্বোচ্চ ১ কোটি নাগরিক ধারণক্ষম ঢাকা মহানগরী ২ কোটি জনগোষ্ঠী নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বসবাস অনুপযোগী নগরে পরিণত হয়েছে। অসহনীয় যান জট ঢাকাকে স্থবির করে ফেলেছে, ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার বেগে যান চলে কোটি কোটি টাকার শ্রম ঘণ্টা অপচয় হচ্ছে, সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে।

যানজটের পাশাপাশি বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, শব্দদূষণ জনজীবন দুর্বিষহ করে ফেলেছে। সবাই স্বীকার করবেন প্রায় তিন দশকের ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়নের উন্নয়নের কারণে সৃষ্ট এবং রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকার নদী, খাল বিল দখল হয়ে যাওয়ার পুঞ্জীভূত সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান নেই। ঈদ পার্বনে ঢাকা ছেড়ে সাময়িকভাবে পরিজনদের কাছে এক কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়লে নগরীর যে পরিবেশ দাঁড়ায় সেটিই কিন্তু ঢাকা।  সমাধান কিন্তু নগর-শহর-গ্রাম অঞ্চল রিভার্স মাইগ্রেশন। প্রকৃত পক্ষে সেটিই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ‘একটি গ্রাম একটি খামার’ এবং গ্রাম হবে শহর ভিশনের প্রতিপাদ্য। 

যত দ্রুত ঢাকার সঙ্গে সন্নিহিত শহরগুলো- টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর শহরগুলোর যাতায়াত দ্রুততর এবং সহজ হবে তত সহজেই মানুষ ঢাকা ছেড়ে পাশের শহরগুলোতে ফায়ার যাবে। একইসঙ্গে উচ্চশিক্ষা, উন্নত চিকিৎসাসহ সরকারি কেন্দ্রীয় দফতরগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পর্যায় ক্রমে ছড়িয়ে দেয়া অতি প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী যদি গণভবনে বসে ডিজিটালি দেশ চালাতে পারেন, তাহলে কেন সরকারের কার্যক্রম মন্ত্রণালয় বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে আসে পাশের শহরগুলোতে ছড়িয়ে দেয়া যাবে যাবে না। ২০৩০ এর মধ্যে পরিকল্পনার মাদ্ধমে ঢাকা কেন্দ্রের জনসংখ্যা ১ কোটিতে সীমিত করা না গেলে মেট্রো, এলিভেটেড এক্সপ্রেস এবং কি পাতাল রেল করেও ঢাকার সংকট দূর হবে না।

আমি আরো নিবিড়ভাবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দেশ হবে শহর ভিশন বাস্তবায়ন করার পথে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা, দায়িত্ব সচেতনতা, সততা নিশ্চিত করে এক দশকের মাঝে এটি করা সম্ভব। আমরা পারি দর্শনে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করা গেলে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে হবে না ফ্ল্যাটবন্দি হয়ে আমাদের শিশুরা ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে।


শেয়ার করুন