২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তান জন্মের সংখ্যা ২ লাখ ২৫ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার জন। এ সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে শিশু জন্মের প্রায় ৭ শতাংশ। এ তথ্য সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে অবৈধ অভিবাসী পরিবারের সন্তানদের জন্মের সংখ্যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি এবং প্রতি বছরই এই সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৮ সালে সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল যে, ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৭ লাখ ৯১ হাজার শিশুর জন্ম হয়েছিল, যার মধ্যে ৭.৫ শতাংশ (২ লাখ ৯৭ হাজার) ছিল অবৈধ অভিবাসী পরিবারের সন্তান। সেই সময়, বৈধ অভিবাসী পরিবারের সন্তান ছিল ১২.৪ শতাংশ (৪ লাখ ৯৪ হাজার)। এ পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে, যে অবৈধ অভিবাসী পরিবারের সন্তানের জন্ম সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০২৩ সালে এ প্রবণতা আরো তীব্র হয়েছে।
২০২৪ সালে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। কারণ বর্তমান সরকারি পরিসংখ্যান এবং অভিবাসন প্রবাহের দিকে নজর দিলে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ২০২৪ সালে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে, অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এ পরিসংখ্যানের বৃদ্ধিকে আরো বাড়াতে পারে। সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের মতে, ২০২৪ সালে এ সংখ্যা ২ লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা মোট জন্মের প্রায় ৮ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এ সংখ্যাটি এমন একটি স্তরে পৌঁছেছে যেখানে এটি যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ স্টেটের মোট জন্মের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ একাধিক রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্ম সংখ্যা আসল রাজ্যের জন্ম সংখ্যা থেকেও বেশি হয়ে যাচ্ছে। এতে যে শুধু অভিবাসন নীতি, অর্থনীতি, বরং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও চাপ তৈরি হতে পারে।
১৪তম সংশোধনীর অধীনে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বড় একটি বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে ২০১৭ সালে অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের নাগরিকত্ব বাতিল করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে এ সিদ্ধান্ত এখনো আদালতে বিচারাধীন। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, এ ধরনের আইনগত পরিবর্তন হলে অভিবাসী পরিবারগুলোর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১১ মিলিয়ন (১.১ কোটি) বলে ধারণা করা হয়। এ মানুষদের অনেকেই কাজের জন্য, বিশেষত কৃষি ও নির্মাণ শিল্পে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন। তবে তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে সেখানেই অবস্থান করছেন এবং তাদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছে, যা জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ পায়।
২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের জন্মসংখ্যা একটি গুরুতর সামাজিক ও আইনগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং নাগরিকত্ব আইন নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। তবে এ পরিস্থিতি শুধু অভিবাসন নীতির পরিবর্তন নয়, বরং দেশের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অর্থনীতি এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপরও প্রভাব ফেলবে।