২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৬:৩৩:১৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু ট্রাম্পকে থামাতে আদালতকে ভূমিকা রাখতে হবে


প্রেমিকের নিউইয়র্ক প্রীতি!
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৫
প্রেমিকের নিউইয়র্ক প্রীতি! হাবিব রহমান


প্রেমিক থাকেন নিউইয়র্কে আর প্রেমিকা লস অ্যাঞ্জেলেসে। দু’জনেই সেলিব্রিটি। দু’জনে দু’জনকে পাগলের মতো ভালোবাসেন। ‘তাকে আমি অবিশ্বাস্য রকম ভালোবাসি’-বলার পরের বছরই ছাড়াছাড়ি। বলছিলাম অভিনেতা ম‍্যাট ডিলন আর ক‍্যামেরন ডিয়াজের কথা। তাদের সম্পর্ক এতোটাই ঘনিষ্ঠ ছিল যে, নায়কের কাছে ভালোবাসা জীবনের অপর নাম হয়ে দাঁড়ায়। অভিনেতা ম‍্যাট ডিলানের কাছে তখন ক‍্যামেরন ডিয়াজ হয়ে দাঁড়ায় ভালোবাসার অপর নাম। সেই ভালোবাসার সম্পর্ক এক বছর পরেই হঠাৎ করে চিড় ধরে। কেন বিচ্ছেদ হয় সেটা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন ম‍্যাট। বলেছিলেন ডিয়াজ লস এঞ্জেলেস থাকে। আর আমি নিউইয়র্ক। আমি তার কাছে একেবারেই স্থায়ী হতে চাইনি। ম‍্যাটের কাছে তার প্রমিকা ছিল জাদুর মতো। এটা তিনি অনেকবার বলেও ছিলেন। কিন্তু নিউইয়র্কের ভালোবাসার কাছে তার প্রেমিকার ভালোবাসা শেষ পর্যন্ত গৌণ হয়ে যায়।

রোমান্টিক ব্রুকলিন ব্রিজ

বিশ্বের পর্যটকদের একটি অন্যতম আকর্ষণ ঊনবিংশ শতাব্দীর অন‍্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত‍্য নিউইয়র্কের ব্রুকলিন ব্রিজ। এটি নিউইয়র্ক সিটির একটি অন্যতম প্রধান আইকন। বছরের পর বছর ধরে এ ঝুলন্ত সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে আমেরিকার একটি জাতীয় ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক হিসেবে। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৮২৫ মিটার। এর নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ইস্ট রিভার। এই সেতুটির ওপর দিয়ে হেঁটে গেলে পুরো নিউইয়র্ক শহরটাই ভেসে উঠবে আপনার চোখের সামনে। এই সেতুটি শহরটির সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থাপনাগুলোর একটি।

ম্যানহাটন আর ব্রুকলিনকে সেতুর মাধ্যমে মিলিয়ে দেওয়ার প্রথম ভাবনাটি আসে জার্মান বংশোদ্ভূত স্থপতি জন রবলিংয়ের মাথায়। ১৮৬৯ সালে তিনি এই নিয়ে একটি প্রস্তাব দেন। তার ভাবনাকে উড়িয়ে দেন অন্য বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু জেদি রবলিং নিজের ভাবনা থেকে নড়লেন না। ছেলে ওয়াশিংটন রবলিংকে নিয়ে পরিকল্পনা করলেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য একটা দল তৈরি করলেন। বাবা-ছেলে দু’জনেই প্রকৌশলী হওয়ায় তারা কাজটিতে আত্মনিয়োগ করতে পারলেন। স্বপ্ন দেখো শুরু করলেন। কিন্তু বিধি বাম। সেতু নির্মাণকালেই সেখানে এক দুর্ঘটনার পর জন রবলিং টিটেনাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার জেদ ছেলের মধ্যে ছিলো। তাই তিনি কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। কাজটা খুব সহজ ছিল না। ইস্ট রিভারে ডুবে ডুবে কাজ করায় অনেক শ্রমিক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে থাকেন। এই রোগের হাত থেকে ওয়াশিংটনও বাঁচেননি। তিনি চলাফেরায় অক্ষম হয়ে যান। তিনি তখন শুধু একটি আঙুল দিয়ে কাজ করতে পারতেন। চিকিৎসকরা তাকে কাজ করতে নিষেধ করলেন। কিন্তু ওয়াশিংটন সে কথা মানলেন না। স্ত্রী এমিলির সহযোগিতায় চালিয়ে গেলেন কাজ। ১৩ বছর ধরে এমিলি তার স্বামীর কাজটা এগিয়ে নিয়ে যান এবং শেষ পর্যন্ত ব্রুকলিন ব্রিজ নির্মাণকাজ শেষ করতে সক্ষম হন।

১৮৬৯ সালে শুরু হয়ে অবশেষে ১৮৮৩ সালে প্রায় ১৪ বছর নির্মাণ কাজ চালানোর পর সেতুটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। ১৮৮৩ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চেস্টার এ আর্থার ও মেয়র ফ্রাঙ্কলিন এডসন ম্যানহাটনের দিক থেকে এই ব্রিজের কাছে পৌঁছান। ব্রুকলিনের মেয়র সেথ লো যোগ দেন তাদের সঙ্গে। ওয়াশিংটন রবলিং আর এমিলির বাড়িতে গিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান চেস্টার এ আর্থার।

জন রবলিং একবার মন্তব্য করেছিলেন, শুধু টাওয়ার দু’টোর জন্যই এই ব্রিজটি একদিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় স্থান পাবে। তার স্বপ্নকে সত্যি করে ব্রুকলিন ব্রিজকে ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হিস্টরিক ল্যান্ডমার্ক’ এবং ১৯৭২ সালে ‘ন্যাশনাল হিস্টরিক সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যান্ডমার্ক’ ঘোষণা করা হয়।

ইস্ট নদীর ওপর নির্মিত এই ব্রিজটি ম্যানহাটন ও ব্রুকলিনকে যুক্ত করেছে। ব্রুকলিন ব্রিজ মূলত একটি ঝুলন্ত সেতু। দু’টি বিশালাকার টাওয়ার অসংখ্য ক্যাবল দিয়ে ধরে রেখেছে পুরো সেতুটিকে। টাওয়ার দু’টির মাঝের দূরত্ব ৪৮৬ মিটার (১৫৯৫.৫ ফুট)। আর সব মিলিয়ে সেতুটি ১.৮ কিলোমিটার (৫৯৮৯ ফুট) দীর্ঘ। বড় টাওয়ারটির উচ্চতা ৮৪ মিটার (২৭৬ ফুট)। এর উপরের অংশটি গোথিক শৈলীতে নির্মিত। ব্রিজটি যখন নির্মাণ করা হয়, এটিই ছিল নিউইয়র্কের সবচেয়ে উঁচু হাতেগোনা কয়েকটি স্থাপনার একটি।

যানবাহন চলাচলের ব্রুকলিন সেতুটি যাতে মানুষও পায়ে হেঁটে পারাপার হতে পারে, একই সঙ্গে সেতুটি থেকে দু’পাশে ব্রুকলিন আর ম্যানহাটনের আকাশচুম্বী ভবনগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে, সেজন্য সেতুটির রাস্তার ঠিক ওপরে একটি পায়ে হাঁটার পথ তৈরি করা হয়। হাঁটা পথে লম্বা সাদা দাগ কাটা। একদিক দিয়ে চলবে সাইকেল অন‍্যদিকে হাঁটবে মানুষ। ফুটপাতের দোকানের মত ব্রিজের ওপর অনেকে সাজিয়ে বসেন খাবারের পসরা। শুধু এই ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ঈস্ট নদী আর উপশহর দু’টিকে দেখতে প্রতিবছর লক্ষাধিক লোক জড়ো হন এখানে।

বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ১ লাখ গাড়ি, ৩০ হাজার সাইকেল এই সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াত করে। প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার পথচারী এই সেতু ব্যবহার করেন। সেই সময় পুরো সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। এছাড়া নির্মাণকাজ চলাকালে ২৫ জন শ্রমিক নদীতে ডুবে মারাও যান।

ব্রুকলিন ব্রিজের সৌন্দর্য্য বহুবার উঠে এসেছে টিভি, সিনেমার পর্দাতেও। ‘গডজিলা’, ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেজ’, ‘আই অ্যাম লিজেন্ড’, ‘দ্য অ্যাভেঞ্জার্স’, ‘ইট হ্যাপেনড ইন ব্রুকলিন’, ‘কেট অ্যান্ড লিওপড’, ‘গ্যাংস অব নিউইয়র্ক’, ‘অ্যানি হল’ প্রভৃতি বহু ছবির শুটিং হয়েছে এই ব্রিজে। ‘সিএসওয়াই নিউইয়র্ক’সহ অনেক টেলিভিশন সিরিজেও বারবার এসেছে ব্রুকলিন ব্রিজের দৃশ্য।

তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিখ্যাত কবি মায়াকোভস্কি ১৯২৫ সালে এসেছিলেন আমেরিকায়। তিনি ব্রুকলিন সেতু নিয়ে যে কবিতাটি লিখেছিলেন, তা অনবদ্য। শ্রেণিবিভক্ত সমাজের শোষণের কথা উঠে এসেছে তার কবিতায়, কিন্তু ব্রুকলিন ব্রিজের প্রতি ভালোবাসাও আছে কবিতা জুড়ে।

কীভাবে যাবেন

নিউইয়র্ক সিটির জনপ্রিয় জায়গাগুলো ঘুরে দেখার জন্যে হপ অন এবং হপ অব বাস সার্ভিস আছে। আপনি চাইলে এই নিয়ে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। কারণ সব বাসই ব্রুকলিন ব্রিজের দুই প্রবেশদ্বারে থামে। এছাড়া আছে সাবওয়ে ট্রেন। ম্যানহাটন থেকে ব্রুকলিন ব্রিজ যেতে চাইলে আপনাকে ৪, ৫ ও ৬ ট্রেনে চড়ে ব্রুকলিন ব্রিজ কিংবা সিটি হল স্টপেজে নামতে হবে।

আদনান আবু রাস

রমজানে আপনার বাফেট ইফতারি

বুট, বড়া, বেগুনি, জিলাপি, খিচুরি ইত্যাদি কমন আইটেমের ইফতারি তো নিত্যদিনই খান। মেনুটা একদিন বদলালে কেমন হয়? মুসলমান সারা বিশ্বেই আছে। রমজানের রোজাও তারা সবাই রাখেন। তবে ইফতার একেক দেশের সংস্কৃতিতে একেক রকম। বাফেট খাবারে এমনিতেই বৈচিত্র্যতা থাকে।

আর তা যদি হয় ‘বাফেট ইফতারি’ নিশ্চয়ই চেখে দেখার মতো হয়। তাই ভোজনবিলাসী যারা রমজানের ইফতারিতে একটু বৈচিত্রতা আনতে চান তারা নিউজার্সির-আদনান আবু রাস রেস্টুরেন্টে ঢুঁ মারতে পারেন।

রেস্টুরেন্টের নাম শুনেই আঁচ করতে পারছেন একটা বিদেশি বিদেশি গন্ধ। হ্যাঁ মিডল ইস্টার্ন। আর খাবারগুলোও স্বাভাবিকভাবেই সে দেশের বৈশিষ্ট্য বহন করছে। খাবারগুলো সব মিডল ইস্টার্ন বলেই কিন্তু গতানুগতিক কাবাব বা ড্রাই জাতীয় নয়। ঝোল ঝাল সবই আছে। আছে খাবারে বৈচিত্র্যতা। নানা পদ, নানা স্বাদ।

আদনান আবু রাস নিজেই একজন শেফ। মধ্যপ্রাচ্যের অনেক নামীদামি রেস্টুরেন্টে রয়েছে কাজের অভিজ্ঞতা। জন্মসূত্রে তিনি একজন ফিলিস্তিনি। বলা যায়, তার বাফেট মেনুতে মধ্যপ্রাচ্যের খাবার বৈচিত্র্যতাকে তুলে আনতে চেয়েছেন।

দেওয়ালে ঝুলছে আলআকসা বা পুরোনো জেরুজালেমের ছবি। প্যালেস্টাইনের মানচিত্র। আমেরিকার জৌলুসপূর্ণ জীবনে বসবাস করেও তিনি হ্রদয়ে বহন করছেন অধিকৃত ফিলিস্তিনের ছবি।

প্রায় শতাধিক আইটেমের ইফতার-ডিনার। রেস্টুরেন্টের বাইরে অনেক বড় কাভার্ডস্পেস। প্রচুর লোকসমাগম হয়। ইফতারের পরও অনেক্ষণ খোলা থাকে। ধীরে সুস্থ্যে বাফেট খাবার উপভোগ করতে পারবেন।

শরবত, খেজুর জুস, হরেক রকম সালাদ, রুটি দুই তিন রকম, পোলাও, ফিস ফ্রাই, মাংসের নানা পদ, কাবাব, কারি, নানা রকম ফল, পিঠা, মিষ্টি, স্যুপ, চা আরো কতো কি! মূল্য মাথা পিছু ৪৫ ডলার । অবশ্যই আপনাকে টেবিল বুক করতে হবে আগে ভাগে।

না হলে বসার জায়গা মিলবে না।

ঠিকানা:

আদনান আবু রাস

১০৫৭ মেইন স্ট্রিট, পেটারসন

নিউজার্সি-০৭৫০৩

ফোন: ৯৭৩ ২৭৮ ০০০৭

নিউইয়র্ক ৯ মার্চ ২০২৫

শেয়ার করুন