২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৯:৩৭:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ইট পাথরে মোড়া রাজধানী ঢাকায় বিড়াল মেলা
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৩-২০২৩
ইট পাথরে মোড়া রাজধানী ঢাকায় বিড়াল মেলা বিড়াল মেলায় তানহা


ঠিক যেনো হাতে এক টুকরো সাদা আর হালকা কালো মেঘরাশিকে মায়ার জালে আটকে রাখা হয়েছে। মনে হচ্ছে টেবিলে আকাশের মেঘকেই আটকে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সে ভুল বলে ভেঙ্গে যাবে। এটা আর কিছু না। একটি ফুটফুটে বিড়াল। এমন সুন্দর আকাশের মতো একটি বিড়াল কোলে নিয়ে মেলায় এসেছে তানহা।

কথা প্রসঙ্গে জানা গেলো, বিড়ালটির জন্ম তার বাসায়। বিড়ালটির মা-ও এসেছে মেলায়-এমনটা জানিয়ে তানহা বলেন, ওর মাকে পঁচিশ হাজার দিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে। একটু হেসে তানহা জানায়, তার বাসায় অনেকগুলি পাখিও আছে। সে তার বিড়াল সম্পর্কে বলতে গিয়ে কিছুটা আবেগ প্রবণ হয়ে উঠে। বলে, বিড়াল হচ্ছে একটি নিরীহ প্রাণী। মন থেকেই বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা-সে জানায়। বিড়াল খুব আদূরে প্রাণী এমনটা জানিয়ে সে জানায় তার ছোট বোন এদের (পাখি ও বিড়াল) বেশিরভাগ সময় নিজের কাছে রাখে। এছাড়া ওদের কেউ রাখতে পারে না। 

অন্যদিকে আজিমপুর থেকে বাবার সঙ্গে এসেছেন আরাবিয়া জামান সুজানা। তার বিড়ালের নাম টম। বললো টমকে নিয়ে এসেছি। টম বাইরে ঘুরতে খুব পছন্দ করে। এখানে আসার সময় নিজে থেকেই ব্যাগে ঢুকে পড়েছে বলে মিস্টি হাসি দিয়ে জানায় সে। সুজানা আরো বলে টম ধরেই নিয়েছে যে আজ বেড়াতে যাবে সে।  সুজানা জানায়, এক বছর হলো টম ওর সাথে আছে। ও মাঝে মাঝে খুব দুষ্টামি করে, তখন আমি ওকে বকা দেই -হেসে হেসে সুজানা  এমটাই জানায়। আরো বলে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ওর মা টমকে তার চেয়ে নাকি বেশি ভালোবাসে। সুজানা বোঝাতে চাইলো বাড়িতে সবার ভালোবাসায়ই বিড়ালটিকে। আর সেজন্য টমের দিন আনন্দেই কাটে। 

রাজধানীতে বিড়ালের এক মিলনমেলায় প্রাণী প্রেমীদের মুখেই এসব কথা শোনা গেলো। ইট-পাথরে মোড়া রাজধানীতে ব্যাপারটা আসলে বিরল ঘটনা এটি।  শুক্রবার রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কে  দিনব্যাপী চলে বিড়ালের এক মিলনমেলা। শুধু কি এটি মিলনমেলা ছিল? এখানে দেখা গেছে বিড়ালের র‌্যাম্প শো। হয়েছে যেমন খুশি তেমন সাজ আর খাদক বিড়ালের প্রতিযোগিতা। নগরীতে মানুষেরা এতোটা ইমোশনাল? হ্যাঁ আসলেই তা-ই। একটি প্রাণীকে নিয়ে দিনভরই ব্যস্ত থাকা হয় এমনটাই জানা গেলো মেলায়। জানা গেলো প্রিয় প্রাণীকে পাশে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করা আরো কতো কি। এমনকি ছুটির দিনে বাইরে নিয়েও ঘোরাঘুরি হয় বলে কারো কারো মুখে শোনা গেলো। তাকে সুন্দর সুন্দর পোশাক পরানো। এসব কথা যেনো সব্বাইতে অবাক করে দিচ্ছিল। কয়েকজন পশুপ্রেমী রাজধানীতে প্রথমবারের মতো বিড়ালের এ ধরনের আয়োজন করছেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন এই আয়োজনের প্রধান সমন্বয়ক মো. আলমগীর। 

কেনো এমন আয়োজন?

রাজধানীতে এমন আয়োজনের পাশাপাশি র‌্যাম্প শো-ই বা কেনো? এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবার বাসাতেই বিড়াল আছে। বিড়ালগুলো তো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নয়। কোনো বিড়াল মঞ্চে হাঁটলে বা দৌড় দিলেও বিড়ালপ্রেমীরা আনন্দ পাবেন। এর মধ্য থেকেই বিজয়ী বিড়ালকে খুঁজে বের করা হবে। লটারির মাধ্যমে খাদক বিড়াল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী নির্বাচিত করা হবে। পরে প্রতিযোগিতা হবে। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিড়ালের খাবারের আয়োজন করবেন অনুষ্ঠান আয়োজনকারীরা। তিনি বলেন, এমন আয়োজন শুধু বিড়ালের দৌড় ঝাপ দেখানোরই ব্যবস্থা না। প্রাণীদের প্রতি কেমন ভালোবাসা আর সেটা কতটা গভীর তা এই মেলার এসব আয়োজনেই ফুটে উঠেছে বলে তিনি জানান। এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিড়ালের যত্ন বা তার বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ বা আরো কিভাবে একটি প্রাণীকে নিরাপদ রাখা যায় তা-ও জানা গেছে আয়োজনে। তিনি জানান পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পোষ্য প্রাণী অপরিহার্য। এই বার্তা মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশে আমাদের এই আয়োজন। প্রধান সমন্বয়ক মো. আলমগীর একজন রসায়নবিদ।

বিড়ালের র‌্যাম্প শো কি দেখা গেলো?

বিড়ালের র‌্যাম্প শো-ই হোক বা এ প্রাণীটির মিলনমেলাই বলা হোক-বেশ কয়েকটি বিষয় এমন আয়োজনে বেরিয়ে এসেছে। তা ছিল একটি প্রাণীর প্রতি মায়া, আদর ভালোবাসা। কেউ কেউ এ-ও বলেছেন ঘরের মধ্যে থাকা এমন প্রাণী তাদের নানান ধরনের হতাশা কাটিয়ে দেয়। তাদের অবসরে থাকাই হয় না এমন প্রাণীটির সাথে সময় কাটিয়ে। বলা চলে নগরবাসি গোপন ভালোবাসা-এই প্রাণীটি। তাছাড়া অনেকেই তার এই পোষা বিড়ালটি কিনেছেন কথাটা বলতে চায়নি। সম্ভবত মায়ার কারণেই। পুষছেন বা কাছে রেখেছেন এমমটাই মেলায় আসা প্রাণীদের কথা থেকে শোনা গেছে।

বিদেশী বিড়ালে ঝোক কেনো?

বিড়ালের মেলায় এমন আয়োজনে জন্য যে তিন হাজার ব্যক্তি নিবন্ধন করেছিলেন এদের অধিকাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে এসব বিড়াল প্রেমিকরা প্রায় সবই স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী। ঘরের বিড়াল যেনো তাদেরই আসল বন্ধু বা সাথি। মেলায় দেখা গেছে এসব প্রাণী প্রেমিকদের কোলে পার্শিয়ান বিড়ালই বেশি। কিন্তু কেনো? এব্যাপারে প্রাণী প্রেমী তানহা জানায় পার্শিয়ান বিড়ালরা বেশি ঘরেই থাকতে পছন্দ করে। হুট করে বাসা ছেড়ে চলে যায় না। মানুষের আশে পাশেই থাকতে তারা পছন্দ করে। সহজেই আদূরে হয়ে উঠে।

শেয়ার করুন