২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৮:৪৫:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে আবুল খায়ের ভূঁইয়া
গোলাম আযমের ফর্মুলায় আন্দোলন করেছিল আ.লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
গোলাম আযমের ফর্মুলায় আন্দোলন করেছিল আ.লীগ আবুল খায়ের ভূঁইয়া


বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেছেন, ’৯৬ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছিল। গোলাম আযমের (মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম) ফরমুলা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। আবার তারা ১৯৮৬ সালেও জামায়াতকে নিয়ে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গিয়েছিল।

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে আবুল খায়ের ভূঁইয়া একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ : আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। কর্মসূচিও চালিয়ে যাচ্ছেন। তো এখন কি অবস্থা দেশের?

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : আপনারা জানেন, একটা কর্তৃত্ববাদী সরকার ক্ষমতায়। দেশে নেই গণতন্ত্র, নেই মানবাধিকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের সামগ্রীর আজকে লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। দেশে দুর্নীতির একটা মহোৎসব চলছে। কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই সরকারের। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার মতো অবস্থা এই সরকারের নেই। বিপরীত দিকে শেখ হাসিনা এবং তার সরকার মনে করে যে, তাদের শুধু ক্ষমতায় থাকতে পারার। জনগণনের কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। 

দেশ : আপনারাও এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছেন বলে বলা হচ্ছে। কই তেমন তো কোনো ফল পাচ্ছেন না, নাকি আপনারা একটু বাড়িয়ে বলছেন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে?

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : আপনারা জানেন আমরা ২৭ দফা নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। জনগণের কাছে যেয়ে, তাদের নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমাদের কর্মসূচিতে জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে। গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্র। ১৮ কোটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে। দেশের পেশাজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার একটা প্রয়াস দেখা দিয়েছে, এটা আমাদের আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে। অনেক দূরদূরান্ত থেকে মানুষ পায়ে হেঁটে আমাদের সব ধরনের কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে। সমাবেশে জনতার ঢল নামছে। এখানে একটা বিষয় হলো, বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে। দেশ স্বাধীন করেছে। দেশের একটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় চলবে এমনটাই মুক্তযোদ্ধারা চেয়েছিল। এ সরকার মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনা বিনষ্ট করেছে। গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। আজকে গণতন্ত্রকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে তাতো দেখতেই পাচ্ছেন। আজকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এ কারণে মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। মানুষ এখন কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন চায়। আমাদের একটাই লক্ষ্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে এবং দেশনায়ক তারেক রহমানের সুচিন্তিত মতামতের ভিত্তিতে যে দাবিগুলো উত্থাপিত হয়েছে তার সপক্ষে জনমত তৈরি করা, যা হয়েছেও। তার ভিত্তিতে আন্দোলন-সংগ্রাম হচ্ছে।  

দেশ : আপনাদের শাসনামল কি ভালো ছিল?

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : আমাদের শাসনামলে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ছিল। কিন্তু দুর্নীতি এভাবে জাতীয়করণ হয়নি। একটা পরিচয়বিহীন ছেলে দুবাইয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বানিয়েছে কীভাবে? কার সাহায্যে? এই ছেলে কাদের লোক? কোন জেলার লোক? দেখেন? খোঁজ নেন? পত্রপত্রিকায় তো এসেছে। তারা কীভাবে এধরনের লোকদের দিয়ে দেশের বাইরে টাকা পাচারে সাহায্য করেছে? খোঁজ নেন। 

দেশ : কিন্তু আপনারা তো এসবের বিরুদ্ধে জোরালো কিছু করতে পারছেন না। কারণ জনগণ যেভাবে এ সরকারের উন্নয়ন দেখছে তাতে আপনাদের কথায় বা আন্দোলনে জনগণের সায় নেই বা দিচ্ছে না কি বলবেন আপনি?

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : শোনেন, এখানে বাস্তবিক অর্থে জনগণের উন্নয়ন হয়নি। উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং তাদের পেটোয়া বাহিনী আর আমলার। উন্নয়নের যে সুফল তা কি জনগণ পাচ্ছে? তা কিন্তু পায়নি। লক্ষ করে দেখবেন, প্রত্যেকটা প্রজেক্ট থেকে তারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। একনেকে যখন প্রকল্পের অনুমোদন হয় তখন একটা প্রোফাইল থাকে। কিন্তু এর পরে এই প্রকল্পের ব্যয় কেবল বাড়তেই থাকে..এসব কি? কীভাবে ব্যয় বাড়ে? আসলে এসব কারণে দেশের অর্থনীতির এমন পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। দেশের রিজার্ভ আস্তে আস্তে কীভাবে নেমে যাচ্ছে। 

দেশ : আপনারা ক্ষমতায় গেলে এর চেয়ে বেটার কিছু করবেন? তার নিশ্চয়তা কি?

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : আমরা তো হবো জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আর যা-ই করি না কেন আমরা তো জনগণের মত নিয়েই করবো। আমাদের কাজে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। এ সরকার দেশের যে হাল করেছে.. তো এর থেকে উত্তরণে বা তার থেকে ধীরে ধীওে এগোতে বিএনপি জনগণের মতামত নিয়েই কাজ করে যাবে। এমন ভঙ্গুর অবস্থা থেকে তো আহামরি বা রাতারাতি কিছু করা যাবে না।  আমরা সর্বক্ষেত্রেই উন্নয়নের চেষ্টা করবো জনগণকে নিয়ে। থাকবে জবাবদিহিতা। আমরা সব সেক্টরে উন্নয়নের চেষ্টা করবো। 

দেশ : বিএনপি একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি। তারা দেশের এধরনের শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে ক্ষমতায় থাকে এবং থাকতে চায়। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধে চেতনায় গড়ে ওঠা বাংলাদেশে বিএনপির প্রতি জনগণের সমর্থন কমে গেছে..বিশেষ করে জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক, দেশের মানুষ এমনকি আপনাদের দলের একটি বড় অংশই চায় না..

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : দেখেন, এটা একটা অপপ্রচার। আপনারা জমায়াতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়ে অপপ্রচার করেন। আরে জামায়াতকে তো প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ। ’৯৬ সালে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ-জামায়াতকে ঐকবদ্ধভাবে আন্দোলন করেছিল। জামায়াতকে সঙ্গে নিয়েই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। কেয়ার টেকার সরকারের ফরমুলা ছিল জামায়াত নেতা গোলাম আযমের (মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম)। সেই গোলাম আযমের ফরমুলা নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। ১৮৩ দিন হরতাল করেছে। আবার এর আগে তারা ১৯৮৬ সালেও জামায়াতকে নিয়ে এরশাদের অধীনে নির্বাচনে গিয়েছিল। এর পর ক্ষমতায় আসতেই যে সাম্প্রদায়িক শক্তির কথা বলেন আপনারা, তাদের নিয়ে সুধা সদনে বসে ঐক্য করেছিল আওয়ামী লীগ। সেই ঐক্যের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কিছু মুক্তমনা সাংস্কৃতিক ও অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব প্রতিবাদ করায় হাসিনা তার অবস্থান থেকে সরে আসে। এগুলা তো মনে থাকার কথা গণমাধ্যমের ব্যক্তিদের। হাসিনা (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে) সুবিধাবাদী। জামায়াতের রাজনীতি তো আছে। তাদের সেই ব্যানারে তো মিছিল-মিটিং হচ্ছে। জামায়াতের সেই ব্যানারেই তো পুলিশ কমিশনারের কাছে গিয়ে চিঠি দেয়..হরহামেশা দেখা করতে যাচ্ছে দলটি। বলছে তারা সমাবেশ করবো..মিছিল করবো। মিছিলও করছে..তো একদিকে বলে যে, জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে। শোনেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রয়োজনে হিযবুত তাহরিতের সঙ্গেও ঐক্য করতে প্রস্তুত। আমরা রাজনীতি করি একটা নীতিমালা ভিত্তিতে..বুঝছেন? 

দেশ : আসলে আমি বলতে চাচ্ছি যে, বিএনপিকে বলা হচ্ছে এটি আগাগোড়া একটি সাম্প্রদায়িক দল। এই দলে অন্য ধর্মের কেউ যোগ দিলে তাকে মূল্যায়ন করা হয় না। কমিটির উচ্চপদে আসীন করা হয় না। আগে ছাত্রদল বা য্বুদল বা বিএনপিতে ভিন্নধর্মের অবস্থানকে মূল্যায়ন করা হতো..এখন হয় না। এর সত্যতা কতটুকু? এর কারণই-বা কি?

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : দেশের আমার পাশে বসে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। আমাদের সময় তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জগন্নাথ হলে কমিটি ছিল। 

দেশ : এখন তো আর নেই?

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : আরে এখন তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি করারই পরিবেশ নেই। শোনেন..আমি আমার নিজ নির্বাচনি এলাকার কথা বলবো।  বিএনপির লক্ষ্মীপুরে ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের অনেকে নেতৃত্ব পর্যায়েই আছেন। দেখেন যেখানে যেখানে হওয়ার সেখানে হচ্ছে। আমারই এক ইউনিয়নে তো হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ভাই সেক্রেটারি হয়েছেন। কে বলে এসব কথা যে বিএনপিতো অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূল্যায়ন করা হয় না? আমার এলাকায় মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন এক হিন্দু ভাই। তিনি আমাদের দলের সমর্থিত। যেখানে যারা সক্রিয় সেখানে তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী তো পদ-পদবি পাচ্ছে..। তাই এটা একটা অপপ্রচার মাত্র যে হিন্দু ভাইয়ের মূল্যায়ন করা হয় না বিএনপিতে। আমার এবং আমাদের অনেকের নির্বাচনি এলাকা হচ্ছে হিন্দু অধ্যুষিত। কই সেসব হিন্দু ভায়েরা তো ভোট আমাকে দেন। আমার নিজের একটা কেন্দ্র। সেখানে পুরো এলাকাটা হিন্দু ভাইয়েরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। আমি তো তাদের ভোট পাচ্ছি। সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি। ভালোবাসা পাচ্ছি। তারা যদি আমাদের ভালো না মনে করতো তাহলে তো ভোট দিতো না.. পাশে থাকতো না। 

দেশ : আচ্ছা, এবার অন্য প্রসঙ্গে যাই। দেশের মানুষের আস্থা অর্জন না করে বিদেশিদের কাছে যাচ্ছেন বা ধরনা দিচ্ছেন। এমন অভিযোগ কীভাবে দেখেন? 

আবুল খায়ের ভূঁইয়া : দেখেন, যারা আমাদের শুভানুধ্যায়ী, যারা চায় আমাদের দেশে গণতন্ত্র কার্যকর থাকুক। আপনারা তো সেদিন দেখেছেন মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে বিশ্ববাসীর কাছে গণতন্ত্রমনা দেশগুলোর পক্ষ থেকে। তারা বলেছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নবিদ্ধ। সে হিসাবে বাংলাদেশে কি হচ্ছে বা হবে তা জানানো হচ্ছে। কিন্তু তারা তো আমাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। আর আমরাও তো তাদের কাছে ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়ার জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গুম-খুন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। বিদেশীরাতো আমাদের আন্দোলন এসে সম্পৃক্ত হচ্ছে না। তবে বিশ্বে আরো গণতন্ত্রকামী মানুষ রাষ্ট্রকেও তো জানাতে হবে আমরা কীভাবে গুম খুনের শিকার হচ্ছি এসব নিয়ে আন্দোলন করতে যেয়ে। এটা বিশ্বায়নের যুগে হবেই। আমরা কারো কাছে যাই না বা যেয়ে বলে আসি না। দেশ-বিদেশের মিডিয়াই তা তুলে ধরে যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই।

শেয়ার করুন