২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:২৫:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


গ্যাস সেক্টরে ত্রিশঙ্কু অবস্থা
বাপেক্সকে নিয়ে শাপলুডু খেলছে সরকার
সালেক সুফি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
বাপেক্সকে নিয়ে শাপলুডু খেলছে সরকার তিতাস গ্যাস ভবন


বর্তমান জ্বালানি সেক্টরের শোচনীয় দুরবস্থা, অনিশ্চিত জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য পেট্রোবাংলার সীমাহীন ব্যর্থতা দায়ী একথা এই সেক্টরের তিন দশক গৌরব সময়ের অন্যতম মাঠ কর্মী হিসাবে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই। মাটির নিচে পড়ে আছে মূল্যবান কয়লা সম্পদ, স্থলে, সাগরে আছে অনাবিষ্কৃত বিপুল পেট্রোলিয়াম সম্পদ। অথচ গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার উৎপাদন, শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা আছে তীব্র সংকটে। পেট্রোবাংলার কোম্পানিগুলো থেকে ওদের সঞ্চিত সম্পদ নিয়ে তহবিল শূন্য করা হয়েছে, বিদ্যুৎ, সারকারখানা এবং সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর কাছে আছে বিপুল বকেয়া। সুশাসনের অভাবে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলোতে গ্যাস চুরির মহোৎসব। পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলো থেকে বিপুল সংখ্যায় মেধাপাচার হওয়ায় দক্ষ, যোগ্য লোকের সংখ্যা সীমিত হয়ে পড়েছে। আমি নানা সময়ে পেট্রোবাংলার বর্তমান চেয়ারম্যান সাহেবের আর্তনাদ শুনেছি। বিপুল দায়-দেনা, সীমিত সামর্থ্য নিয়ে উনি অসহায়বোধ করছেন। ঠিক যেন সীমিত সামর্থ্যরে অসহায় বাবার হাহাকার। 

আমি ২০০৯-২০২৩ তিন দফায় বর্তমান সরকারের পূর্ববর্তী টার্মগুলোর কথাই বলবো। এই সময়ে ক্ষমতাশীল সরকার ভ্রান্ত পরামর্শে গ্যাস সেক্টরকে নিঙ্কুশ আমলা নির্ভর করে জাতির জনকের স্বনির্ভর জ্বালানি দর্শন থেকে সরে গেছে বহুদূর। পেট্রোবাংলার শীর্ষ পদ এবং কোম্পানিগুলোর পরিচালকমণ্ডলী একান্তভাবেই আমলানির্ভর। কয়লা আহরণের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। বাপেক্সকে নিয়ে শাপলুডু খেলেছে সরকার। সরকার নিজেই বলছে গ্যাসের অভাবে ৪ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ উৎপাদন অলস পড়ে আছে। মাটির নিচে উঁচুমানের কয়লাসম্পদ থাকলেও আমদানিনির্ভর কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে গেছে সরকার। সেখানেও রয়েছে আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংকট। ভারতের একটি কোম্পানি কয়লা আমদানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন উঁচু মূল্যে বাংলাদেশে রফতানি করছে। গ্যাস বিতরণ এলাকায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস চুরির জন্য বর্তমান সরকারের ব্যর্থতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। নিজেদের কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় মাতারবাড়িতে ল্যান্ডবেজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ কাজ নানা অজুহাতে ঝুলে আছে। কিন্তু বেসরকারি খাতে সাগরে ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়েছে সরকার। সাগর সম্পদ বাদ দিলাম স্থলভাগে বিপুল পরিমাণ গ্যাস সম্পদ অনাবিষ্কৃত থাকার তথ্য সরকারের হাতে থাকলেও দুর্বল ব্যবস্থাপনার জন্য অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে। বাপেক্সকে প্রকৃত অর্থে শক্তিশালী না করে হাত পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলা হয়েছে স্থলভাগে অনুসন্ধানের একক দায়িত্ব দিয়ে। সুযোগ থাকা এবং সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক কাজ বেশি খরচে বিদেশি কোম্পানি দিয়ে করানো হয়েছে। দুর্নীতির কথা নাই-বা বললাম। একজন প্রমাণিত দুর্নীতিবাজকে পৃষ্ঠপোষকতা করে এমনকি পেট্রোবাংলার গুরুত্বপূর্ণ পরিচালক পদে রাখা হয়েছে বর্তমান সরকারের পূর্বতন টার্মে। 

যে ধারায় চলছে অবিলম্বে কিছু বৈপ্লবিক পরিবর্তন না হলে ২০২৪-২০২৫ সাল জ্বালানি সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। নিজেদের গ্যাস উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে কমতে থাকবে। জ্বালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান করা যাবে না। মুখ থুবড়ে পড়বে শিল্পখাত।

এতোদিন পর বর্তমান চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর বোধোদয় হয়েছে নিজেদের গ্যাস সম্পদ দ্রুত তুলতে হবে। এখন যদি নিজেদের ১০০ কূপ খননের পরিকল্পনা করা যায়, তাহলে এতোদিন কেন সরকার ঘুমিয়ে ছিল? সরকারের কি লজ্জা হয় না একসময় ভারত বিবিয়ানা থেকে গ্যাস আমদানিতে আগ্রহী ছিল। এখন ভারতীয় কোম্পানি ভারতে এলএনজি আমদানি করে বাংলাদেশে রফতানি করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রশ্ন করি কেন সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান এক যুগ পিছিয়ে গেল? কেন কিছু চিহ্নিত সরকার ঘনিষ্ঠ মহলের স্বার্থে গ্যাস সেক্টরকে এলোমেলো করা হল? 

দেওয়ালে পিঠ রেখে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে জ্বালানি সেক্টর। কিন্তু হঠাৎ করে সাগরে, স্থলে বিপুল অনুসন্ধান কাজ ব্যবস্থাপনা, গ্যাস বিতরণে স্বচ্ছতা সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নেই পেট্রোবাংলায়। সরকারের হাতে বিকল্প আছে দেশে থাকা অনেক প্রমাণিত দক্ষ গ্যাস সেক্টর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা। বিশেষ ব্যবস্থায় এদের থেকে যোগ্য কয়েকজনকে পরামর্শক হিসেবে পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর পরিচালনায় সম্পৃক্ত করার। জ্বালানি সেক্টর একান্ত কারিগরি কাজের স্থান। সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের এখানে পদায়ন করে সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। বিপুলসংখ্যক দক্ষ-যোগ্য কর্মকর্তা সেক্টর ছেড়ে প্রবাসে অথবা দেশে প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করছে। 

জ্বালানি সেক্টর দক্ষ না হলে কোনোভাবে নির্ভরযোগ্য জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টি হবে না। ২০৩০, ২০৪১ সরকারের ভিশন অর্জন অনিশ্চিত হয়ে যাবে।

শেয়ার করুন