৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ১০:৫৪:১৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


হঠাৎই চাঙ্গা ভাব বিএনপিতে
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৪
হঠাৎই চাঙ্গা ভাব বিএনপিতে বিএনপির ইফতার


ঈদের পর বিএনপি কোথায় কি করবে সেটা এখনো ঠিক না হলেও বিএনপি নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হওয়ার যে কাজ, সেটা বেশ ভালোভাবেই সেরে ফেলছে। একটা জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর বিরোধী দলের আবার শুরু করতে হয় নতুনভাবেই। বিএনপি সেভাবে শুরুতে তেমন নতুনত্ব না থাকলেও বিগত সময়ের কিছু হিসাব-নিকাশ তো এ পর্বে থাকবে। কে কার অধীনে সক্রিয় ছিল, কে পিছিয়ে, সফলতা-দুর্বলতা, আন্দোলনের মাঠে ফ্রন্ট লাইনে ব্যাক লাইনে কে কতটা যোগ্যতার মাপকাঠিতে এগিয়ে-পিছিয়ে এগুলোর মূল্যায়ন প্রয়োজন। সেটা অনেকটা চলছে। তবে এগুলোও গুছিয়ে এনেছে শীর্ষ নেতৃত্ব।

তবে এসবে অতটা পরিবর্তন না এলেও এরই মধ্যে বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভা, দরিদ্রদের মধ্যে অনুদান প্রদানসহ নানা অনুষ্ঠান করার মধ্য দিয়ে নিজেদের মধ্যে যে আন্তঃসংযোগ, সেটা বেশ ভালোই করেছেন তারা। সাংগঠনিকভাবেই মাহে রমজানে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা কর্মসূচিটা করেছে প্ল্যান কষেই দেশব্যাপী। এ ব্যাপারে কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা ছিল কি না জানা না গেলেও তৃণমূল থেকে শুরু করে বিএনপি বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা এটা বেশ ঘটা করেই আয়োজন করেছে। এতোটা ফ্রি ও নির্ভয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ খুব শিগগির আর কখনো এমন অনুষ্ঠানাদি করতে পারেনি।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন অজুহাতে পুলিশি হয়রানি ছিল। এবার সেটার প্রকোপ ছিল নিতান্ত কম। ছিল না একেবারে তা-ও নয়। ছিল, কিন্তু কম। বিএনপির নেতৃবৃন্দ এগুলো আমলে নেয়নি। 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর দেশব্যাপী যে ব্যাপক ধরপাকড় হয়েছে, একেবারে দলের মহাসচিব থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত। সেটা এখন নেই। ওই আতঙ্ক কেটেছে তো বটে, বরং জাতীয় নির্বাচনের পর এক এক করে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাও মুক্তি পেয়েছে। বিএনপি মহাসচিব থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও তৃণমূলেরও নেতাকর্মীরা মুক্তি পেয়েছেন। ফলে এসব ইফতার অনুষ্ঠানের অনেক স্থানেই এসব মুক্তি পাওয়া নেতাকর্মীদের ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। কারামুক্ত হওয়াদের সম্মান জানানো হয়। সব মিলিয়ে ওই ইফতার অনুষ্ঠান একটি জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান বা মিলনমেলায় রূপ নেয়। 

এতে সম্ভব্য শীর্ষ নেতৃত্ব ছাড়াও বড় অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল যোগ দিতে দেখা যায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তারেক রহমান। এতে দলের তৃণমূলে সাধারণ নেতাকর্মীদের উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে যায়। 

বিএনপি মহাসচিব কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করিয়ে ফিরেছেন। দেশে ফিরে প্রথমেই তিনি অংশ নেন বিএনপির দেওয়া বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতার মাহফিলে। এরপর থেকে তিনিও বিভিন্ন ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে যাচ্ছেন। সার্বিক বিবেচনা করলে বিএনপিকে এই এক মাসের সিয়াম সাধনার মাসে ইফতার মাহফিল ও আলোচনা সভাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও চাঙ্গা ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটাই এককভাবে (জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পাটিসহ নিজ দলের স্বতন্ত্রদের প্রার্থী হওয়ার অনুমোদন দিয়ে) নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর বিএনপি রীতিমতো মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। দীর্ঘ এক যুগের ওপর ক্ষমতার বাইরে থাকার পর আবারও পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার দেখা তো দূর কি বাত, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরিবেশ তৈরিতে ব্যর্থ হওয়ার পর মূলত হতাশ হয়ে পড়ে। পিনপতন নীরবতা ছিল দলটির মধ্যে। কী হবে কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না। যদিও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা কারাগার এড়িয়ে ছিলেন, তারা মানসিকভাবে চাঙ্গা করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তৃণমূলে বেশ হতাশা ছিল। 

প্রথমত. নির্বাচনের পর এক এক করে সব ও সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ কারামুক্ত হওয়ায় আশ্বস্থ হতে থাকেন তারা। এরপর পবিত্র মাহে রমজানের ইফতার অনুষ্ঠানের মিলনমেলায় দল পুরাপুরি চাঙ্গা সেটা তৃণমূল পর্যন্ত। ইতিমধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান দিয়েছেন, বিএনপি সেই পূর্বধারাতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। তার আগে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে বিএনপি ঠিক আগের মতোই এ আন্দোলন অহিংসভাবেই পালন করবে বলেও ঘোষণা করে। মির্জা ফখরুল বলেন, যতদিন না মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা না হবে, অর্থাৎ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান না হবে, ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এমনকি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনো কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বলেও ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে দলের নেতাকর্মীরা বেশ উজ্জীবিত। 

শীর্ষস্থানীয় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও একাধিক মামলায় জর্জরিত। মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তত ৩৫ লাখ মামলা তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ফলে এসব নেতাকর্মীরা আদালতের বারান্দাতেই সময় কাটাচ্ছেন বেশির ভাগ সময়। ফ্যামিলি, চাকরি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হারিয়েছেন বেশির ভাগ নেতাকর্মীই। ফলে এ সরকারের সঙ্গে কোনো রকম আপসরফা পূর্বেও করেনি এখনো করবে না। মির্জা ফখরুলের এ দৃঢ়তাকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও সাধুবাদ জানিয়েছে। 

বিএনপি মাঠের আন্দোলন কবে শুরু করবে সেটা এখনো ঠিক হয়নি। নির্বাচনের পর কারামুক্তি হওয়ার পর নিজেদের মধ্যে গুছিয়ে নিচ্ছেন তারা। এর বেশির ভাগ কাজই সুদূর লন্ডন থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়ন্ত্রণ করেন বলে জানা গেছে। 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগেও বিএনপি ছিল সুসংগঠিত। বিগত বেশ ক’বছর ধরে বিএনপি একক প্ল্যাটফর্মে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা রেখে যুগপৎ আন্দোলনে আলাদাভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল অন্যসব সমমনা দলসমূহ। এতে বিএনপি প্রমাণে সক্ষম হয়েছে যে বিএনপি একাই সামর্থ্য রাখে আন্দোলন পরিচালনার। জোট করতেই হবে এমনটা না। তবে বিএনপির নীতিতে একাত্মতা জানিয়ে কোনো দল এলে তাদের সঙ্গে সখ্য গড়বে। তবে প্রত্যেক দলকে আলাদা প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আন্দোলন কর্মসূচি চালাবে। 

বিএনপি বিভিন্ন বিভাগীয় সম্মেলন থেকে শুরু করে ঢাকায় যে মহাসমাবেশগুলো করেছে তারা সেটাতে নজিরবিহীন লোকের উপস্থিতি। রীতিমতো মানুষের ঢল। বিএনপি শীর্ষনেতৃত্বও বিস্মিত হয়েছিলেন যে কল্পনাতীত মানুষ সমাগম হয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নেমে আসে রাজপথে এবং সেটা নিজস্ব উদ্যোগে। এতে করে বিএনপি নিজেরাই বুঝতে সক্ষম তাদের জনপ্রিয়তা ও সক্ষমতা প্রসঙ্গে এবং সেটা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে জানান দিতেও সক্ষম হয়েছে তারা যে বিএনপিকে চাইলেই উপেক্ষা সম্ভব নয়। মূলত এরপরও ২০২৪ এর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া ছিল হতাশার। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশসমূহ যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু বিএনপির অভিযোগ এসব কিছু ভেস্তে যায় ভারতের উদ্যোগে। যা বিভিন্নভাবে প্রমাণিত হয় এবং ভারতের নির্বাচনোত্তর কথাবার্তাও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের কৃতজ্ঞতা স্বীকার থেকেই প্রমাণিত বলে বিএনপি অভিযোগ তুলে আসছে।

বিএনপি কর্মীরা এরপরও ভালো কিছুর স্বপ্ন এখনো দেখছে। আগামী নির্বাচন সেটা মধ্যবর্তী হোক আর নির্ধারিত সময় পেরিয়ে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তারা শামিল হবেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাবেন অনবরত। এমন অভিপ্রায় এসব ইফতার মাহফিল বা বিএনপি নেতাকর্মীদের পুনর্মিলন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেয়ার করুন