সোশ্যাল সিকিউরিটি ডিসঅ্যাবিলিটি প্রোগ্রাম
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সোশ্যাল সিকিউরিটি ডিসঅ্যাবিলিটি ইন্স্যুরেন্স (এসএসডিআই) প্রোগ্রামে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কাটছাঁটের পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। অক্টোবর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন এসএসডিআই প্রোগ্রামে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব ঘোষণা করে। এ পরিবর্তনগুলো সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের টাইটেল-২ এবং টাইটেল ১৬-এর আওতায় প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী রুল মেকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আনা হচ্ছে। অর্থাৎ এটি আইনসভা নয়, বরং প্রশাসনিক বিধি সংশোধনের একটি অংশ। প্রস্তাবিত নীতিমালা কার্যকর হলে এসএসডিআই আবেদনকারীদের প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত যোগ্যতা হারাতে পারেন। এটি হবে সোশ্যাল সিকিউরিটি ডিসঅ্যাবিলিটি কর্মসূচির ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ছাঁটাই। এসএসডিআই হলো সোশ্যাল সিকিউরিটির একটি অপরিহার্য অংশ, যা গুরুতর শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে কাজ করতে অক্ষম শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দেয়। কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন নিয়মে এই সহায়তার যোগ্যতা পাওয়া আরো কঠিন হবে। বিশেষ করে ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী আবেদনকারীর জন্য এর প্রভাব সবচেয়ে গভীর হবে। কারণ প্রস্তাবিত নীতি তাদের বয়সজনিত সীমাবদ্ধতাকে কম গুরুত্ব দেবে।
প্রস্তাবিত পরিবর্তনসমূহ:১. বয়সের প্রভাব কমানো: বর্তমান আইনে আবেদনকারীর বয়স, শিক্ষা ও কাজের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, তিনি কাজ করতে সক্ষম কি না। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বয়সকে আর তেমনভাবে বিবেচনা করা হবে না। অর্থাৎ ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদেরও তরুণদের মতোই সক্ষম ধরা হতে পারে, যা তাদের যোগ্যতা পাওয়া কঠিন করে তুলবে। ২. ভোকেশনাল গ্রিড বা পেশাভিত্তিক মানদণ্ড পরিবর্তন: এসএসএ বর্তমানে কিছু নির্দেশিকা বা ‘গ্রিড’ ব্যবহার করে যেখানে আবেদনকারীর বয়স, শিক্ষা ও দক্ষতার ভিত্তিতে যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। প্রস্তাবিত পরিবর্তনে এই গ্রিডগুলো সংশোধন বা বাতিল করার কথা বলা হয়েছে, বিশেষত যেগুলো বয়স্ক বা কমদক্ষ শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করে। ৩. নিয়মিত ও কঠোর পুনর্মূল্যায়ন : প্রশাসন চায় বর্তমান সুবিধাভোগীদের যোগ্যতা আরো ঘনঘন পর্যালোচনা করা হোক। এর ফলে অনেকে বহু বছর ধরে সুবিধা পেয়েও তা হারাতে পারেন। ৪. শিক্ষাগত মান বিবেচনার গুরুত্ব কমানো : এখন পর্যন্ত কম শিক্ষিত ব্যক্তিদের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণে কিছুটা নমনীয়তা ছিল। নতুন নিয়মে সেটি সীমিত করা হবে।
যদি এই পরিবর্তনের অর্ধেকও কার্যকর করা হয়, তবে আগামী দশ বছরে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ এসএসডিআই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন। শুধু নতুন আবেদনকারীরাই নয়, বর্তমানে যারা এই সুবিধা পাচ্ছেন, তাদের মধ্যেও অনেকে পরবর্তী যোগ্যতা যাচাইয়ের সময় সুবিধা হারাতে পারেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসএসডিআই সুবিধাভোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশই ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ এ সিদ্ধান্ত মূলত বয়স্ক ও দুর্বল জনগোষ্ঠীকেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বহু মানুষ তাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতার কারণে কর্মজীবন হারিয়ে ফেলেন আর এসএসডিআই তাদের জীবিকা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ সুবিধা কমে গেলে তাদের আর্থিক অনিশ্চয়তা আরো বাড়বে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণাঞ্চল ও যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ এ নীতির ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এসব এলাকায় বয়স্ক শ্রমিকের সংখ্যা বেশি, শিক্ষার মান তুলনামূলকভাবে কম এবং অধিকাংশ মানুষ শারীরিক পরিশ্রমের কাজ যেমন উৎপাদন শিল্প বা খনিতে নিযুক্ত। ফলে যোগ্যতা নির্ধারণে শিক্ষা ও বয়সের প্রভাব কমিয়ে দিলে এসব অঞ্চলের জনগণ দ্বিগুণভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।
এছাড়া এসএসডিআই সুবিধা হারালে স্বাস্থ্যসেবার সুযোগও কঠিন হয়ে পড়বে। সাধারণত এসএসডিআই প্রাপকরা ২৪ মাস পর মেডিকেয়ার সুবিধা পান, কিন্তু যোগ্যতা হারালে ৬৫ বছর না হওয়া পর্যন্ত তারা সেই সুবিধা পাবেন না। একইভাবে যারা এসএসআই সুবিধা হারাবেন, তারা মেডিকেড থেকেও বঞ্চিত হতে পারেন-বিশেষ করে যেসব অঙ্গরাজ্য এখনো মেডিকেড সম্প্রসারণ করেনি।
এসব পরিবর্তনের ফলে অনেক বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আর্থিক সংকটে পড়বেন, আগেভাগে অবসর নিতে বাধ্য হবেন এবং তাদের মাসিক সোশ্যাল সিকিউরিটি পেনশন স্থায়ীভাবে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে তাদের বার্ধক্যকালীন নিরাপত্তা ও জীবনের মান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক নীতির অংশ, যা সোশ্যাল সিকিউরিটি ব্যবস্থাকে দুর্বল করেছে। প্রশাসন ৭ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে সোশ্যাল সিকিউরিটি অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (এসএসএ) ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর্মী সংকট তৈরি করেছে, যার ফলে জনগণের সেবা ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন প্রশাসনিক জটিলতা ও নিয়ম যোগ করা হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য সহায়তা পাওয়া আরো কঠিন করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ শুধু প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক জনগোষ্ঠীকেই নয়, বরং গোটা দেশের সামাজিক নিরাপত্তাব্যবস্থার ভিত্তিকেও দুর্বল করে তুলবে।