২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার, ৬:২০:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু ট্রাম্পকে থামাতে আদালতকে ভূমিকা রাখতে হবে


নির্বাচনের গতি বাড়ালো অন্তর্বর্তী সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৫
নির্বাচনের গতি বাড়ালো অন্তর্বর্তী সরকার


দ্রুত ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে গতি বাড়িয়ে দিলো অন্তর্বর্তী সরকার। পশ্চিমাদের চাপের পাশাপাশি দেশে অস্থিরতা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ঠেকাতে সরকার এবছরই নির্বাচনের আয়োজন করে ফেলতে চায়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

ডিসেম্বরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি

একেবারে সরাসরি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন এবার বলে দিয়েছেন ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার সময় সীমা অতিক্রম করতে চায় না তারা। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন এই সময়সীমা যাতে পার না হয়, সে জন্য ইসি সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন করতে হলে অক্টোবরেই তফসিল ঘোষণা করতে হবে। আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। এর আগে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে অংশ নেন তিনি।

নাসির উদ্দীন আভাস দেন যে পশ্চিমাদের তাগাদার বিষযটি। তিনি বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক জাতীয় নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চান। এই গণতান্ত্রিক উত্তরণে তারা আমাদের সহায়তা করতে চান। আমরা ভোটার ও দলের নিবন্ধনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানিয়েছি। আমরা খুব শিগগির কেনাকাটায় যাব। আমরা পর্যবেক্ষক নীতি পুনর্বিবেচনা করছি। পর্যবেক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আমরা সম্পন্ন করব। এর পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমার একটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। এটি তার এবং তার টিম যে কাজগুলো করছে, সে সম্পর্কে জানার একটি সুযোগ। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরিতে সংস্কার প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

কেনো এমন দ্রুততা

সারাদেশে গুঞ্জন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সময়মত হচ্ছে না বা হতে না দেয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে একের পর এক আশঙ্কা করে বলা হচ্ছে দেশের একটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়না নানান ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। দলটি কখনো জাতীয় সরকার কখনো-বা ঐক্যমত্যের সরকার গঠনের আওয়াজ তুলে রাজনৈতিক মাঠে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ও-ই দলটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সম্পৃক্তদেরও তাদের সাথে কাজ করতে এক ধরনের কূট-চাল দিয়েছে মাঠে। এমনকি বিএনপি’কে ঠেকাতে পতিত সরকারের সাথে গোপনে আঁতাতেরও অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি’র নেতারা মনে করেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন কিংবা কথা নেই বার্তা নেই ঠিক এমন সময়ে বিদেশীদের বোঝানো হচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচনব্যবস্থা প্রয়োজনীয়তা। বিএনপি নেতারা মনে করেন নতুন সংবিধানের আওয়াজ তোলা কিংবা সেকেন্ড রিপাবলিক ও জুলাই ঘোষণাপত্র দ্রুত চাওয়ার পেছনে সৎ-উদ্দেশ্য নেই দাবিদারদের। বিএনপি’র নেতাদের আশঙ্কা এসব দাবি-দাওয়া তুলে আসলে ওই রাজনৈতিক দলটি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি পিছিয়ে দিয়ে শুধু এবছরই নয় আরও পরে আয়োজনে নানান কূটকৌশল চালিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, ওই রাজনৈতিক দলটির ক্রমাগত ষড়যন্ত্র এমন পর্যায় গেছে যে বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনে শরিক মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার গণতান্ত্রিক দলগুলিকে বিভ্রান্তিতে ফেলার বিভিন্ন কায়দা কানুন করে যাচ্ছে। ফলে মাঠে আওয়াজ উঠে যায় যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না এবছর। জানা গেছে, একারণেই বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দল গত মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সাথে সর্বশেষ বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে জাতির উদ্দেশ্যে একটি মেসেজ দিয়ে তাকে অনুরোধ করেন। ওই সাক্ষাতের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়ে দেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ‘ডিসেম্বরের মধ্যেই’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কাজ করছে বলে তাদের ‘আশ্বস্ত’ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। এর পাশাপাশি তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি এবং জনগণের যেটা প্রত্যাশা আছে যে, অতি দ্রুত নির্বাচন এবং একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন তিনি (প্রধান উপদেষ্টা), যার মধ্য দিয়ে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।”

শেষ কথা

দেশে দ্রুত একটি রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা দেশে বিদেশে আওয়াজ উঠেছে। তারপরে বিএনপি’র সন্দেহ কমছে না। কারণ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবার মাত্র কয়েকদিন আগেই বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের আগে কম সংস্কারে সম্মত হয়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। অন্যথায় নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক মানবাধিকার সংস্থা ‘রাইট টু ফ্রিডম’ এর সভাপতি রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং নির্বাহী পরিচালক সাবেক মার্কিন কূটনীতিক জন দানিলোভিচ সম্প্রতি ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় প্রধান উপদেষ্টা এই কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পরও আবারও দানা বাদে নির্বাচন কি আদৌ হচ্ছে এরবছর। না-কি ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আটকা পড়ে যাচ্ছে? আর এমন জল্পনা কল্পনার মাঝে সিইসি’র সাথে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর আবারও ধোয়াশা কেটে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে সর্ম্পক কেমন হবে তা-র অপেক্ষায় রয়েছে পশ্চিমারাসহ বিভিন্ন দেশ-এমন বাস্তবতা আর দেশের চলমান পরিস্থিতি আচ করতে পেরে সরকার দ্রুত নির্বাচনের পথে হাটছে বলে কারো কারো মত। কারো কারো মতে, দ্রুত নির্বাচন ছাড়া এখন সরকারের হাতে আর কোনো বিকল্পই নেই।

শেয়ার করুন