২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:২৯:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৯-২০২২
কথার কথকতা মাইন উদ্দিন আহমেদ


হরেক রকম লেখাইতো লিখলাম কিন্তু ইদানিং লিখতে বসলেই এক ধরনের স্থবিরতা আমাকে পেয়ে বসে। গত সপ্তাহেও লিখতে বসে দীর্ঘ সময় নিষ্ফল বসে থেকে থেকে বিবেকের সাথে প্রচুর ঝগড়া হয়ে গেলো। একজন লেখককে লিখতে বেশি উৎসাহ জোগায় প্রেম। প্রেমে আপ্লুত বা গদগদ হয়ে পড়লে একজন উঠতি বয়সের মানুষ লিখতে শুরু করে এবং লিখতেই থাকে। তবে মানুষের জীবনে মনে হয় এক সময় প্রেমের গোমর ফাক হয়ে যায়, বিষয়টাকে বায়বীয় মনে হয়। তাহলে কি প্রেম বলে খাঁটি কিছু নেই? আমিই তো ১৯৭৫ সালে লিখেছিলাম :

“দৃষ্টি তোমার বাঁকা ছুরির ন্যায়

ঝলক দেয় সারা অঙ্গ জুড়ে,

করুণ ক্ষণে হরিণ আঁখি হয়

আলোকরশ্মি পাখনা মেলি উড়ে।

সুউন্নত পয়োধর ঢাকে হালকা শাড়ি

আবরণের বাধ যে মানেনাগো,

চুম্বক সে যে নিচ্ছে হৃদয় কাড়ি

আর যে আমি সইতে পারিনাগো!”

এরপর কতো কি যে ঘটে গেলো। স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হলো, একবার নয়, বারবার। অথবা অন্যভাবে বলা যায় যে, আমি বুঝতেই পারিনি প্রেম কাকে বলে কিংবা ভিন্নভাবে বলা যায় যে, এই নামের কোন বিষয়ই নেই, যে জ্ঞান আমার ছিলো না। না কি প্রেম এক ভুল বুঝাবুঝির নাম? আমরা কিছুদিন আগেও হৃদয় নামক বস্তুটির সন্ধানে নেমেছিলাম; কিন্তু এ নামের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানবদেহে পাওয়া যায়নি। সে বিষয়ে এই কলামে লেখাও হয়েছিলো। এ সন্দেহ আমার অনেক আগেই হয়েছিলো। হ্যাঁ, বিশ্বাস করুন, সন্দেহ হয়েছিলো। তাই আমি ১৯৮৩-৮৪-র দিকে লিখেছিলাম :

“সেলিম ভাই ভালোবাসার

করেন এনালাইসিস,

বলেন তিনি ভালোবাসায়

হয় প্যারালাইসিস।

আরো বলেন ভালোবাসা

মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং,

যেনো একটি উড়োজাহাজ

ধান ক্ষেতে ল্যান্ডিং!”

তারপরও কিন্তু মানুষ প্রেম নামক এই বায়বীয় বিষয়টাকে পেতে চায়, খুঁজতে থাকে আর এক সময় যখন নিজের পুরা জীবনের বোকামিগুলো হাঁড়েহাঁড়ে টের পেয়ে নিশ্চিত হয় যে, এটা কিছুইনা, শরীর এবং বিত্তের ব্যাপার মাত্র। সরাসরি এই দুটো বিষয়ের কথা বলতে কেমন একটা লজ্জা লজ্জা ভাব আসে তাই প্রেম শব্দটা দিয়ে একটা ফন্দি রচনা করে। মূল বিষয়টা হাতের নাগালে অর্থাৎ ভোগের মধ্যে চলে এলে তখন অনুভ‚তিটা দিক পাল্টায় অথবা নিরর্থক হয়ে ওঠে।

অতি স¤প্রতি প্রেম নিয়ে লিখতে চাইলাম, কাজ হলোনা, ধরা খেয়ে গেলাম। আমি যা বলি এ যুগের বাস্তব জ্ঞানে সমৃদ্ধ নারী পুরোটাই বাতিল বাক্সে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।

এইতো সেদিন প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে লিখতে গিয়ে যা দাঁড়ালো তা হলো :

“ওরা বলে তুমি সুন্দরের দিকে তাকাও

মরচে ধরা মনেরে খানিকটা ঝাঁকাও,

তাকালে সুন্দরেরা শুধু ক্ষেপে যায়

বলে ওরা ‘পকেট খালি কেনো হায়’!’

আমি বলি আছে মন অমূল্য সম্পদ,

ও বলে মন সেতো আস্ত এক আপদ!

তোমাতে কতো যে স্বপ্ন মনইতো দেখে

সে বলে কল্পনা সদা অবাস্তব লেখে।”

একই কবিতায় আরো আছে :

“এ যুগে এতো বোকা হলেতো চলেনা,

বিত্তের যুগে এখন ফুল দিয়ে হবেনা।”

প্রবন্ধ, নিবন্ধ, গল্প, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় এগুলোও লিখেছি প্রচুর। কলেজে অধ্যয়নকালে নাটকে অভিনয় করার পর নাটক লেখার চেষ্টা করেছি, সফল হইনি। কিন্তু লেখার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে যা লিখেছি পাঠকমহল সেগুলো পছন্দ করেছে। কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে বিশেষতঃ প্রেমের কবিতার ক্ষেত্রে কল্পনা ও বাস্তবতা সব সময় পরস্পরের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেছে। অবশেষে যখন দেখা গেলো যে, প্রেম হচ্ছে সুস্বাস্থ্য, কৌশল এবং বিত্তের এক ধরণের কঠিন সমন্বয় তখন আর বলার কিছুই রইলোনা। মনে হলো যেনো বিষয়টি গর্বের সাথে উচ্চারণের বিষয় হয়ে আর থাকলোনা, হয় শরমের বিষয় অথবা বাধ্যবাধকতার বিষয় হয়ে দাঁড়ালো। অবশেষে ২০১০-য়ে আমি যখন কবিতা লিখলাম, ‘লভ ইজ সফ্টঅয়্যার বন্ডেজ’ তখন বিজ্ঞজনেরা নিরবে তা মেনে নিলেন। আমেরিকার নামকরা কবিগণও তা গ্রহণ করলেন। আমি কি বলেছিলাম, ওই কবিতায়? বলেছিলাম, সৃষ্টিকর্তা মানবসৃষ্টিকালে সবার ভেতর প্রেম নামক বিষয়টাকে কম্পিউটার সফ্টঅয়্যারের মতো প্রোগ্রাম করে একটা বন্ডেজের মধ্যে আমাদেরকে আটকে দিয়েছেন সৃষ্টির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য। আমরা এর থেকে বেরুতে পারবো না। এই যে এক ধরণের বাধ্যবাধকতা যা আমরা তীব্রভাবে অনুভব করতে বাধ্য। তথাকথিত প্রেম নামক এই বিষয়টির মধ্যে মানবজাতি আটকা পড়ে আছে। আমাদের কোন দোষ নেই, আমাদেরকে সফ্টঅয়্যার প্রোগ্রামের মধ্যে আটকে দেয়া হয়েছে। তাহলে কথাটা এই দাঁড়ালো যে, অবশেষে স্বপ্নভঙ্গের কষ্টলাভের সম্ভাবনা নিশ্চিত জানার পরও অবুঝ মনের প্রেম থেকে আমাদের মুক্তি নেই।

শেয়ার করুন