২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৫৮:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


পাশে দাঁড়ালো ঢাকা কলেজের প্রাক্তন ছাত্ররা
পিতা-মাতা হারা শিশুরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার উকিল হবার স্বপ্ন দেখছে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২৪
পিতা-মাতা হারা শিশুরা ডাক্তার  ইঞ্জিনিয়ার উকিল হবার স্বপ্ন দেখছে


অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল একটি ছেলে শিশু আরেকটি মেয়ে শিশুর দিকে বেশ মায়ার চোখে তাকিয়ে আছে। একটু কাছে যেতেই দেখা গেলো তারা বিড়বিড় করে পরস্পর পরস্পরের সাথে কি বিষয় নিয়ে যেনো কথা হচ্ছে। ছেলে শিশুটি বেশ কয়েকবারই মেয়ে শিশুটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। ছেলে শিশুটি একপর্যায়ে মেয়ে শিশুটিকে তার হাতের মোবাইলটি দিয়ে দেয়। এতে মেয়ে শিশুটি বেশ আনন্দে মনোযোগ দিয়ে মোবাইল দিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আর ছেলে শিশুটি এদিক-সেদিক তাকিয়ে সময় পার করছিল। মেয়ে শিশুটিকে সে তেমন বিরক্ত করছে না যেনো মোবাইলটি নিয়ে মেতে উঠায় বাধা পড়ে। এমন দৃশ্য দেখা গেলো “হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে ভবনের ঠিক নিচে অতিথিদের ওয়েটিং রুম চত্বরে। জানা গেলো, মেয়ে শিশুটির ভাই ওই ছেলে শিশুটি। হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে ঠাঁই পাওয়া মেয়ে শিশুটিকে দেখতে এসেছে ছেলে শিশুটি। প্রতি সপ্তাহে কাজের ফাঁকে ফাঁকে এসে বোনকে দেখে যায় সে। কারণ ভাই যেমন এই বোনটিকে দেখার অপেক্ষায় থাকে তেমনি, বোনটিও অধীর আগ্রহে থাকে কখন পাশে আসবে সে। কখন বলবে ভাই- পড় ভালো করে লেখাপড়া কর ইত্যাদি। কখন বলবো বাবা নাই-তো কি হয়েছে ? আমিতো আছি। আসলেও তা-ই। এসব জানা গেলো মেয়ে শিশুটির সাথে কথা বলে। মেয়ে শিশুরটির নাম ইতি। হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে সে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। আর তা ভাই সৌরভ ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছে, এখন একটা পলিথিন কারখানায় চাকরি করে। সংসারের ব্যয়ভার তার ওপরে পড়েছে। তা-ই নিজে লেখা পড়া করতে পারেনি। অল্প বয়সেই তাদের বাবা দুনিয়ে ছেড়ে চলে গেছেন। ইতি জানায় ২০১৯ সালে তার বাবা আলকাস মিয়া ব্রেইন স্ট্রোকে মারা যায়। এতে দিশেহারা হয়ে যায় তাদের মা নুরজাহান বেগম। বড়ো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেন। কিন্তু বাকিদের কি করবেন? এমন দুশ্চিন্তা পেয়ে বসে তার মধ্যে। অন্যদিকে মেয়েকে চান ডাক্তার বানাতে, মানুষের সেবার জন্য তাকে তৈরি করতে। কেননা তিনি দেখেছেন স্বামী আলকাস মিয়া কিভাবে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় ছটফট করে মারা গেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানো তো দূরে থাক, স্কুলেই পাঠানোই সম্ভব হচ্ছিল না। ঠিক এমন সময়ে পাশে দাঁড়ায় হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবার নামের প্রতিষ্ঠানটি। কথা প্রসঙ্গে ইতি জানায়, সে ২০২০ সালে এখানে এসেছে। প্রথমে খারাপ লাগলেও এখন তেমনটি হয় না। হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবার নামের প্রতিষ্ঠানটি’র প্রতিটি সদস্য তাদের মায়ের স্নেহ দিয়ে কাছে টেনে রাখে। এর পাশাপাশি তার সাথে এখানে আসা আরো অনেক পিতা বা মাতা হারা শিশুরাও তাকে বোনের আদরে আগলে রাখে। আর ভাইতো মাঝে মাঝে এসেই স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে দেয়, আর বলে তোকে ডাক্তার হতেই হবে..যা যা করা লাগে সবই করা হবে-বললো ইতি। ইতি আরো জানায়, হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে থাকার ব্যবস্থা করে তা মা এখন সৌদি আরবে চাকুরি করছেন। আক্ষেপ করে ইতি বলেন, বাবাকে তো আর ফিরে পাবো না। কিন্তু মায়ের দূরে থাকার কষ্টটা ভাই সৌরভ এসে ভুলিয়ে দেয়। অন্যদিকে হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারের সদস্যরা তাকে বোনের মায়ায় বুকে আগলিয়ে রাখে পরম যত্নে-জানালো ইতি। 

বাবা মারা গেছে, মা-ও মানসিক প্রতিবন্ধী

হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে এসে কেবল একজন ইতি’র দেখা মিলবে না। এমন আরো অনেকেরই দেখা মিলবে। এখানে এসে এসব পিতাহারা মেয়ে শিশুদের খোঁজ খবর নিতে আসা দেশ- বিদেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের চোখের পানিও ধরে রাখতে পারেন না। গত ৯ মার্চ সরজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেলো হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে অল্প কয়েকদিন আগে আসা কয়েকজন মেয়ে শিশুকে। তাদের একজনের নাম হচ্ছে রাবেয়া বসরী। ফুটফুটে সুন্দর এই মেয়ে শিশুর বাবার নাম কাজী সবুজ। রাবেয়া বসরীর বয়স হচ্ছে ৫ বছর। তাকে দেখে কারো চোখে পানি ধরে রাখা যায় না। বসরীর সাথে একিই প্রতিষ্ঠানে থাকে তার একটু বয়সে বড় বোন সাহানা, সে-ও এখানে ভর্তি হয়েছে। তবে বড়ো বোন একটু-আধটু কথা বললেও রাবেয়া বসরীর চোখের কোনো অশ্রুর বন্যার পাশাপাশি ব্কারুদ্ধ অবস্থা দেখে উপস্থিত সকলকে নিরব নিথর করে ফেলে। জানা গেছে, হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারের সদস্য হয়েছে মাত্র জানুয়ারি মাসে। এই বয়সে বাবা হারিয়েছে। আর যা-ও মা আছে, সে বাক প্রতিবন্ধীর পাশাপাশি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই তার এখন একমাত্র ভরসা হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবার। অবশ্য সেখানে গিয়ে দেখা গেলো কিভাবে রাবেয়া বসরীকে নিয়ে তারে সাথে থাকা আরো অনেক পিতা হারা শিশুরা ব্যস্ত আছে। কিভাবে ছোট্ট বোনোর আদরে তাকে আগলে রাখছে বাকিরা। অথচ তারাও কেউ পিতা কেই মাতৃহারা। 


অনুষ্ঠানে মঞ্চে অতিথিবৃন্দ/নিজস্ব ছবি




হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারের কথা

এবার আসা যাক হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারটি নিয়ে কথা। জেনে নেয়া যাক বাংলাদেশের ভেতরে হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারটি সর্ম্পকে। সারা দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর অসংখ্য এতিম শিশুদের মধ্যে খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশের কথা মাথায় রেখে ২০১০ সালের ১০ই অক্টোবর কিশোরগজ্ঞ জেলার ভৈরব উপজেলার পাড়া দক্ষিণ চন্ডিবের এলাকায় দানকৃত ২২ শতাংশ ভূমির উপর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় একটি শিশুপরিবারের। এবং এর নামকরণ করা হয় সেই দানবীর হাজী আসমত আলী’র নাম অনুসারে “হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবার”। এই প্রতিষ্ঠানটির জন্য সম্পত্তি দানে, স্থাপনায়, নির্মাণে, অনুদানে এবং পরিচালনায় যাদেরকে স্মরণ যেতে পারে তারা হলেন দানবীর হাজী আসমত আলীর উত্তরসূরীরা, দেশী-বিদেশী দাতা সংস্থা সমূহ ও স্থানীয় হৃদয়বান জনমানুষ। 

ওরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে

হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে বাসস্থান কয়েকশত শিশু। এখানে মূলত শিশুপরিবারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসহায় পিতৃ-মাতৃহীন, ছিন্নমূল, সহায়-সম্বলহীন এতিম বালিকা শিশু-কিশোরীদেরকে পারিবারিক স্নেহ-ভালবাসায় লালন-পালন ও ভরন-পোষণের পাশাপাশি আধুনিক ও সুশিক্ষায় শিক্ষিত করিয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা, কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা। আর হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে মতো এমন মহতী প্রতিষ্ঠানে এসে শিশুরা দেখছে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এখন একমাত্র বিশ্বস্ত অবলম্বন। দেখছে পুলিশ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক উকিল, নার্স হওয়ার স্বপ্ন। মিম আকতার হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে এসেছে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরর থানার গোছামারা গ্রাম থেকে। তার বাবার নাম রাজিব মিয়া। সে এখানে এসেছে ক্লাস ওয়ান থেকে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধির সাথে কথা বলতে গিয়ে যে জানায়, বড়ো হলে সে ডাক্তার না হয় বড়ো পুলিশ কমকর্তা হবে, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে। অপরদিকে মনিরা আক্তারের বাড়ি হচ্ছে নরসিংদীর রায়পুরায়। সে হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে ক্লাস ফাইভ থেকেই আছে। তার বাবা নেই। ২০১৭ সালে বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আর মা মাজেদা বেগম বেঁচে আছেন। মনিরা আক্তারা জানায়, সে ইংরেজীর শিক্ষক হতে চায়। অন্যদিকে শরমী ২০১৩ সাল থেকেই হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে এসেছে। তার পিতার নাম কবির হোসেন বেচে নেই। আর মা সোমা বেগম আছেন। তার স্বপ্ন হচ্ছে সে একজন নার্স হবে। তানজিনা এসেছে ২০১৬ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা থেকে। বর্তমানে সে দশম শ্রেণীতে পড়ছে। তারা তিন বোন এক ভাই। তারা দুই বোনই এখানে আছে। তানজিনা জানায় সে উকিল হতে চায়। ২০১২ সালে সুর্বনা আক্তার কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের শিমুলকান্দি গ্রাম থেকে হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে এসেছে। তার তিন বোনই এখানে পড়াশুনা করছে। তার বাবা ফারুক মিয়া মারা গেছে ২০০৭ সালে। সুর্বনা আক্তার জানায়, তার মা সালমা বেগম চায় তার মেয়ে একজন সমাজকর্মী হয়ে গড়ে উঠুক। সুর্বনা আক্তার হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে থেকে সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের সমাজকর্ম বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করছে। 

বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যা বললেন..

ঢাকা কলেজের ৮৫’ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব (বেজা. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) সালেহ আহমেদ বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা আসাধারণ। এখানকার নিবাসীদের আচরণ ও শৃংখলাবোধ অতুলনীয়। সর্বোপরি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিতরা নিবেদিত প্রাণ। তিনি এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠানের উন্নতি কামনা করেন এর পাশাপাশি ঢাকা কলেজ ’৮৫ ব্যাচের আরেক প্রাক্তন ছাত্র নভেল অর্গানাইজেশন ফর রুরাল রিফর্মস (নর)এর নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ টুটুলকেও এমন একটি প্রতিষ্ঠান তার বন্ধুদেরকে নিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান।

ঢাকা কলেজের ৮৫’ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর বলেন, হাজী আসমত আলী এতিম মহিলা শিশু পরিবার একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি এখানে এতিম মেয়েদের ১ম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষাও দেয়া হয়ে থাকে। এর ব্যবস্থাপনা উন্নতমানের এবং আধুনিক। ২০২৪ সালে ৮ মার্চ আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বাদ যাবে না কোনো মেয়ে’। এখানকার সকল মেয়েদের মানসিক, শারীরিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য সমাজের প্রতিটি শ্রেণী পেশার মানুষের এগিয়ে আসার আহবান জানাই।

এদিকে নভেল অর্গানাইজেশন ফর রুরাল রিফর্মস (নর)-এর নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ টুটুল এই প্রসঙ্গে বলেন, এধরনের শিশু পরিবারে থেকে, খেয়ে, পড়াশোনা করার পাশাপাশি কারিগরী শিক্ষা নিয়ে ওরা এখন বড় হচ্ছে। ওরা যাতে নিজের শিক্ষা কে কাজে লাগিয়ে নিজের ও পরিবারের ভরণপোষণে স্বাবলম্বী হতে পারে, এখন আমাদের সেই প্রচেষ্টা চলমান। আশা করি সমাজের অন্যান্য সামর্থ্যবানেরাও আমাদের এই উদ্যোগে শামিল হবেন। কেননা দেশে অনেক বিত্তবান আছেন যারা যান এসব পিতামাতাহীন অসহায় শিশুদেরদের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদীহীতার প্রশ্নে। সেক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদীহীতার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার কেনো অবকাশ নেই বলৌ তিনি মত দেন ।

পাশে দাঁড়ালো ডিসি কেইভ ৮৫’

ঢাকা কলেজের এইচ এস সি’র ৮৫ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্রদের নিয়ে গঠন করা ডিসি কেইভ ৮৫ এর অন্যতম সদস্য, নভেল অর্গানাইজেশন ফর রুরাল রিফর্মস (নর)এর নির্বাহী পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ টুটুলের নেতৃত্বে ২৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এতিমখানাটি পরিদর্শনে যান গত শনিবার। সেখানে গিয়ে শুরুতেই এতিমখানার আবাসিক ভবন, এতিমদের পড়াশোনার জন্য হাজী আসমত আলী গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস, তাদের চিকিৎসার জন্য প্রতিষ্ঠিত হাজী আসমত আলী মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে ঢাকা কলেজ ৮৫ কেইভ সদস্যরা বন্ধু ইমতিয়াজ আহমেদ টুটুলের এমন মহতী কাজের প্রশংসা করেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তাকে বন্ধুরা বলেন, ’আমরা বাংলাদেশের বহু জায়গা পরিদর্শন করেছি, বহু অনাথ আশ্রমেও গিয়েছি কিন্তু ভৈরবে এই এতিমখানায় এসে তাদের আবাসিক ব্যবস্থা, পড়ালেখার নিয়মকানুন, চিকিৎসা ব্যবস্থা, পরিস্কার পরিছন্নতা দেখে আমরা অভিভূত। এতিম শিশুদের অনেকের সাথেই আমাদের কথা হয়েছে,আমরা মনে করি প্রকৃত অর্থেই ওরা এখানে মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার জন্য লেখাপড়াসহ অন্যান্য আধুনিক মানসম্মত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে। ডিসি কেইভ-৮৫ এর ব্যাচেরই এই বন্ধুরা পিতা-মাতা হারা শিশুদের জন্য গড়া প্রতিষ্ঠানটির জন্য সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 

এদিকে ভৈরবে অবস্থিত হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশুপরিবারে প্রাঙ্গনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে এতিমখানায় বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা কলেজ '৮৫ কেইভ-এর সার্বিক সহযোগিতায় ও নভেল অর্গানাইজেশন ফর রুরাল রিফর্মস (নর)-এর আয়োজনে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে দেশের সর্ববৃহৎ মেয়েদের এতিমখানা হাজী আসমত আলী এতিম বালিকা শিশু পরিবারের ৪০০ শত এতিম বালিকা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশু পরিবারের শিক্ষার্থী আশিকা আক্তারের পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। নভেল অর্গানাইজেশন ফর রুরাল রিফর্মস (নর)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পাপিয়া সিদ্দিকী স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু সংক্ষিপ্ত আলোচনায় উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা কলেজ ৮৫ কেইভের সদস্যদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব (বেজা. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) সালেহ আহমেদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড হেলথ প্রমোশন ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর, বুয়েটের প্রধান প্রকৌশলী একেএম জাহাঙ্গীর আলম (নাসিম) পিএইচডি, নিউরো সাইন্স হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. খুরশীদ মাহমুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফখরুল আলম ফারুক, নরসিংদী রায়পুরা সরকারি আদিয়াবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুর শাখাওয়াত হোসেন নীরু, মাতুয়াইলে অবস্থিত আইসিএমএইচের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার মো: আবদুল গনি, কুমিল্লার লালমাইয়ের উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: জাফর-আল-সাদেক, ব্যবসায়ী শাহেদ আলী রিন্টু, স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বর্তমানে ব্যবসায়ী জিয়াউদ্দিন ফারুক, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান, ব্যবসায়ী মো: শামীম আহসান খান, মকসুদুর রহমান অংশু (চাকুরি), মো: জাহাঙ্গীর আলম (চাকুরি), আনিস (চাকুরি) এবং সুদূর ফিনল্যান্ড থেকে ছুটে আসা আলমগির কবির খান প্রমুখ।

শেয়ার করুন