২৮ নভেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:৫৪:১০ পূর্বাহ্ন


ভিসা সংকট ও ট্রাম্প প্রশাসনের দমননীতির বড় প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে তীব্র ধস
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-১১-২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে তীব্র ধস প্রতীকী ছবি


যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা খাতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে এ বছর নজিরবিহীন ধস নেমেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর অভিবাসন নীতি বিশেষ করে, ছাত্রভিসা প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও সাক্ষাৎকার স্থগিতকরণ, বিদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রমুখী প্রবাহকে ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে। ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন (আইআইই)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালের ফল সেমিস্টারে নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে ১৭ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে মহামারির বাইরের সবচেয়ে বড় পতন। আইআইই-এর প্রাথমিক তথ্য বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সামগ্রিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সংখ্যা কমেছে ১ শতাংশ। এর মধ্যে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি ১২ শতাংশ হ্রাস পেলেও স্নাতক স্তরে ২ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে। ৮২৫টি প্রতিষ্ঠানের ওপর পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, অর্ধেকের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ই নতুন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভর্তিতে পতন রিপোর্ট করেছে।

নাফসার প্রধান নির্বাহী ফান্টা আও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর আগের মতো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রথম পছন্দ নয়। তার ভাষায়, ভিসা প্রক্রিয়ার জটিলতা যুক্তরাষ্ট্রকে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় কম সক্ষম করে তুলেছে। আইআইইয়ের মতে, জরিপে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতাকেই আন্তর্জাতিক ভর্তি কমার প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছে।

যদিও ভিসা প্রত্যাখ্যান বা বিলম্বের সমস্যা ট্রাম্প প্রশাসনের আগেও ছিল, তবে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে ২০২৫ সালের মে মাসে নতুন ছাত্রভিসার সাক্ষাৎকার স্থগিত করার সিদ্ধান্তের পর। এর ফলে দীর্ঘ ব্যাকলগ তৈরি হয় এবং হাজারো শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে ব্যর্থ হন। আগের বছর ৭ শতাংশ ভর্তি হ্রাসের পেছনেও ভারত ও সাব-সাহারান আফ্রিকার শিক্ষার্থীদের উচ্চ ভিসা প্রত্যাখ্যান হারকে দায়ী করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

ভর্তির এ ধস যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। নাফসার সর্বশেষ অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার কারণে ২০২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ক্ষতি হয়েছে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছিলেন প্রায় ৪২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার এবং সমর্থন করেছিলেন ৩ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি মার্কিন কর্মসংস্থান।

নাফসার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি তিনজন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত একটি চাকরি সৃষ্টি করে বা সমর্থন করে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় টিউশন ফি নয়, বরং বাসা ভাড়া, স্বাস্থ্যবীমা, পরিবহন, খাদ্য, পর্যটনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যয় করেন, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভিসা প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না হলে আগামী বছরগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আকর্ষণে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। যখন কানাডা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়ার কিছু দেশ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য নানামুখী সুবিধা দিচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর নীতি তার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার অবস্থানকে দুর্বল করছে। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা ও অর্থনীতির জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই নীতি ও ভিসা ব্যবস্থাপনায় দ্রুত পরিবর্তন না আনলে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব গুরুতর হতে পারে এমন সতর্কবার্তাই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

শেয়ার করুন