২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৫৮:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইইউ
প্রত্যাশার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৩-২০২৩
প্রত্যাশার সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কীভাবে?


মার্চের মাঝামাঝি এখন। ডিসেম্বর আসতে আর কত বাকি? খুব একটা সময় হাতে নেই। নির্বাচনের বছর। এরই মাঝে পবিত্র রমজান শেষ হতে এপ্রিল চলে যাবে। এর পর এসএসসি ও এর পর এইচএসসি পরীক্ষা। এ দুই পরীক্ষা শেষ হবে বছরের একেবারেই শেষ লগ্নে। এরই মাঝে নির্বাচনি প্রক্রিয়া সম্পাদন, বিরোধীদলের দাবি মানা না পূর্বের ন্যায় নির্বাচন অনুষ্ঠান বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন এ নিয়ে যথেষ্ট ধোঁয়াশা বিরাজ করছে। সব মিলিয়ে কীভাবে কী হবে সেটা এখনো অনিশ্চিত ঠেকছে সবকিছু। গত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো পরিস্থিতি হলে চিন্তার কারণ হতো না। কিন্তু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এখন অনেক দেশের মাথাব্যথা। বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগী প্রায় সব দেশই বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান দেখতে ব্যাকুল তারা। সমস্যার মূল এখানেই। আগের দুই বারও অমন আবেদন থাকলেও বিএনপি ও তার সমমনাদের সে দাবি আমলে নেয়নি ক্ষমতাসীন দল। 

এবারও তারা সে প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নিরলস কাজও করছে ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু উন্নয়নসহযোগীদের দৃষ্টিকোণ থেকে যদি নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য না হয় এবং ওই নির্বাচনে যদি বিএনপিসহ বিরোধীপক্ষ অংশ না নেয় তাহলে কী হবে? সমস্যা ও দুশ্চিন্তা সেখানেই। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে অনেক প্রভাবশালীরা বলতে শুরু করেছেন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে বন্ধুত্বে ঘাটতি দেখা দেবে। যা বাংলাদেশের জন্য মোটেও সমীচিন নয়। বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা গো ধরেই বসে রয়েছে। তারা স্পষ্ট করে বলছে যে এসরকারের অধীন তথা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না তারা। এভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অর্থ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধীদলের সঙ্গে যা ব্যবহার হয়েছে, সেটা হবে এবারও। ফলে এমন নির্বাচনে অংশ নেয়ার অর্থ হয় না। উন্নয়ন সহযোগীদের শর্ত অবশ্যই সব দলের অংশগ্রহণে ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তাহলে গ্যাপটা কী। যা মানতেই নারাজ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 

এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বহুবার বলে আসার পর এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও বলছে। সর্বশেষ, গত ১২ মার্চ রোববার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূতরা বলছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইইউ। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে সংস্থাটি। এক বৈঠকে বিএনপিকে ইইউ বলেছে, নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় তারা। এ কারণে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আগামী জুন-জুলাই মাসে নির্বাচন-পূর্ব পর্যবেক্ষক দল ঢাকা আসবে। গুলশানে ইইউ ডেলিগেশন প্রধানের বাসভবনে ঐদিন বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেড় ঘণ্টার বৈঠকে রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন ও জার্মানির রাষ্ট্রদূতরা অংশ নেন। সেখানে তারা বিএনপির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজ অবস্থান তুলে ধরে ঢাকার ইইউ ডেলিগেশন প্রধান চার্লস হোয়াইটলি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউর কাছে অগ্রাধিকারে রয়েছে বাংলাদেশ। আমরা নির্বাচনের আগে ১২ পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে থাকি, যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়। আর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হলে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলোর ভূমিকা থাকতে হবে। এ বিষয়টি আমরা বৈঠকে জানিয়েছি।

জানা গেছে ঐ বৈঠকে, বিএনপি তার আগের অবস্থান তুলে ধরেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়েছে। তারা গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি, বিরোধীদের রাজনৈতিক স্বাধীনতাসহ আগের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে। বৈঠকে তাদের প্রধান বিষয় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান, যা ইইউ রাষ্ট্রদূতদের কাছে নতুন কিছু নয়। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও আলাপ করেছেন তারা। একই সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকেও বারবারের মতো এবারও উইরোপীয়ান ইউনিয়নকে আশ্বস্থ করা হয়েছে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির ব্যাপারে। সরকারের অমন আশ্বাসে তারা সন্তুষ্টও। তবে কিছুটা সন্দিহান পূর্বের দুই নির্বাচনের কারণে। 

দ্বাদশ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যা বললেন 

কাতার সফর শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলেন, সামনে নির্বাচন। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, ’৭৫ সালের পর থেকে যে সমস্ত নির্বাচন হয়েছে, আর আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে নির্বাচন হয়েছে, অন্তত সেই ধরনের চুরি, ভোটকেন্দ্র দখল করা, কারচুপি করার সুযোগ তো এখন নেই। এখন ছবিসহ ভোটার তালিকা, আইডি কার্ড হয়ে গেছে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আছে, সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলার সুযোগ নেই। বিএনপির আমলে করা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারও ভোটার তালিকায় এখন আর নেই। নির্বাচন কমিশনের স্বতন্ত্রতা বজায় রেখে আমরা একে সম্পূর্ণ অবাধ নিরপেক্ষ করে গড়ে দিয়েছি, যাতে জনগণ নিজেদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। তিনি বলেন, জনগণ যাকে খুশি ভোট দেবে-এটা আমাদেরই স্লোগান। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো’-আমরা যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করেছি, তার লক্ষ্য ছিল জনগণের ভাতের অধিকার, নিরাপত্তা, জীবনমান উন্নত করা। সেই ভোট-ভাতের আন্দোলন কিন্তু আমাদেরই করা। 

বিরোধীদল, তথা বিএনপির সঙ্গে সংলাপ 

১৩ মার্চ সোমবারের ওই সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সংলাপ কার সঙ্গে করবো? ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমি সংলাপ করেছি, তার রেজাল্টটা কী? নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আরও কিছুই করেনি। বিএনপি ৩০০ আসনে ৭০০ নমিনেশন দিয়ে টাকা খেয়ে নিজেরাই নিজেদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আর এদের (বিএনপির) সঙ্গে কীসের কথা বলবো, কীসের বৈঠক করবো। অনেক কিছুই মুখ বুঝে সহ্য করেছি শুধু দেশের মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে। যারা একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে, বোমা পুঁতে রেখে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে, আমার মা-বাবার খুনী- তাদের সঙ্গে সংলাপে বসেছিলাম শুধু দেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে। তিনি এ সময় খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা যাওয়ার পর একজন ছেলেহারা মাকে সান্ত¦না দিতে গেলে চরম অসৌজন্যতা করে মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেয়ার পরও জিয়া পরিবারের ঘনিষ্টজনদের অনুরোধে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে চিকিৎসার সুযোগ শুধু মানবিক কারণে দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। 

সর্বশেষ :

দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও উন্নয়নশীল সহযোগীদের অবস্থানের মুখে কোন পথে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি এটা নিয়ে এখন জনমনে নানা কথা। দেশ সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সবকিছু হোক এ প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব তার সমাধানের কোনো লক্ষন নেই। এ সমস্যার সমাধন কীভাবে হবে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

শেয়ার করুন