২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৬:৪৪:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিএনপিকে উপজেলা নির্বাচনে টানতে মরিয়া আওয়ামী লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৩-২০২৪
বিএনপিকে উপজেলা নির্বাচনে টানতে মরিয়া আওয়ামী লীগ


বিএনপিকে উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণ করাতে আগ্রহী আওয়ামী লীগ। এব্যাপারে বিএনপির ওপর রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপ দেয়ার পাশাপাশি নানান ধরনের কৌশলও হাতে নিয়েছে। উপজেলা নির্বাচন অংশ নেয়া হলে বিএনপির নেতাদের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধারও প্রলোভন দেয়া হচ্ছে। এসব খবর মিলেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সূত্র থেকে।

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না আ.লীগকে

চলতি বছরে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২২৩টিতে জয় পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা, তারা পেয়েছেন ৬২টি আসন। জাপা পেয়েছে মাত্র ১১টি আসন। কিন্তু এই নির্বাচন নিয়ে নানান বির্তক পিছু ছাড়ছে না আওয়ামী লীগকে। বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ৮ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টেমন্ট তাদের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। একই দিনে যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও)ও পৃথক বিবৃতি দেয়। বাংলাদেশের এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়নি বলে অন্য পর্যবেক্ষকদের প্রতিক্রিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র একমত বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ’গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে বিশ্বাসযোগ্য, মুক্ত ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদন্ড ধারাবাহিকভাবে মেনে চলা হয়নি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার টার্ক এই প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গ্রেফতার এবং আটকাবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন। তিনি প্রকৃত অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের জন্য সরকারকে গতিপথ পরিবর্তন করার আহবান জানিয়েছেন। নির্বাচনের আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ নির্বাচন করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছিলো। 

এজন্যই উপজেলায় বিএনপিকে দরকার

এর পরেও ৭ জানুয়ারির নির্বাচনটি হয়ে গেছে সেই তৃপ্তি নিয়ে থাকলেও আ.লীগ মোটেই স্বস্তিতে নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দলটির সরকারকে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রশ্নে বির্তক পিছু ছাড়ছে না। আর জন্যই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক ও প্রশ্ন থেকে পার পেতে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিক এটা মনে প্রাণে চায় আওয়ামী লীগ। 

কিন্তু কিভাবে সম্ভব?

প্রশ্ন দেখা দিয়েছে দ্বাদশসহ অতীতে বেশ কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ডাক যেমন দিয়েছিল তেমনি ২০২৪ সালেও বর্জন করেছে বিএনপিসহ সমমনাদলগুলি। ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে বা সরকারের কৌশলে মার খেয়েছে-এমন বির্তক চলছে পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনে। এমন প্রশ্নের সুরাহা না হতেই দেশের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে উপজেলা নির্বাচন। প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৮ মে। তবে সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। কারণ কারো কারো মতে ধারণা করা হচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়া হলে বিএনপির আপোষহীন রাজনীতির কবর রচনা হবে। আবার বিএনপির একটি অংশ মনে করে সরকারের বড়োই নড়বড়ে। মুখে হাকডাক দিলেও তাদের টিকে থাকা ভবিষ্যতে কঠিন। এমন অবস্থায় বিএনপি তার একদফা আন্দোলন থেকে পিছুটান দিলে দলটি পুরো নেতৃত্বের যোগ্যতা দূরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে। অন্যদিক ৭ জানুয়ারি বর্জনের পর সেই একিই সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচন অংশ নেয়া হলে কতটা লাভবান হতে সে-ই ব্যাপারটিও চলে আসছে হিসাব-নিকাশে। অন্যদিকে মাঠের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সমমনারা দেশে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের টার্গেট নিয়ে মাঠে নামার গুঞ্জন আছে। এই দাবিতে আন্দোলন করেই তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতেই এখন মরিয়া-এনটাই শোনা যাচ্ছে। সেসময় বলা না হুট করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে দলের ভেতরে বাইরে এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি ইমেজ সংকটে পড়বে। আর সেকারণে উপজেলা নির্বাচনও বর্জনের পথে হাঁটতে রাজনৈতিক কৌশল বিএনপির। এমন মতে বিশ্বাসী বিএনপিকে উপজেলা নির্বাচন আনতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী এখন বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজের কথা বলেছে বলে শোনা যাচ্ছে। জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় সদ্য বিজয়ী আওয়ামী লীগের পাশাপাশি স্বতন্ত্রদের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নেয়ার ভান করে তাদেরকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়াতে রাজি করাতে। শোনা গেছে, এইভাবে আপোষে না এলে তাদের ওপর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ এমনকি এলকার ছাড়ার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দেয়া হতে পারে। আরেকটি সূত্র জানায়, এব্যাপারে আন্তর্জাতিক লবিকেও কাজে লাগানো হচ্ছে এই বলে যে নির্বাচনী ব্যবস্থায় আস্থা দেখাতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আর সেটি প্রমাণেতো বিএনপি’কে অংশ নিতে হবে। তা না হলে শুধু বর্জন করে গেলে কিভাবে এই সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন হচ্ছে না তা কি করে বিএনপি প্রমাণ করতে পারবে? এমন বুঝ দিয়ে বিএনপি’র ওপর আন্তর্জাতিক লবিকে ব্যবহার করছে। 

ইমেজ সঙ্কট থেকে রেহাই

আর এভাবে যদি বিএনপিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ানো যায় তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের জন্য হবে বিরাট প্লাস পয়েন্ট। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণ হয়ে গেল স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনটিকে পুজি করেই দেশে-বিদেশে এটাকে অংশগ্রহণমূলক দেখিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগের) নেতিবাচক ইমেজ দূর করতে চায়। কারণ ২০২৪ সালের নির্বাচনের ব্যাপারে দেশে বিদেশে প্রচার আছে যে এটা একটি ডামি ও একতরফা নির্বাচন। এই একতরফা’ ও ‘ডামি সংসদ নির্বাচনের দুর্নাম গোচাতে তারা এখন উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’কে চায়। আর অনেকের মতে সেজন্যই দলীয়ভাবে মনোনয়ন না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

শেয়ার করুন