বিশ্বের দুটি শক্তিশালী দেশের বিরুদ্ধে অত্যন্ত গর্বভরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দৃঢ় ভূমিকা রেখেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস’ কারো প্রশংসাই পেলেন না। স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি বলে পরিচিত বাম, ডান, উদার গণতান্ত্রিক মতাদর্শে বিশ্বাসী কোনো পক্ষই প্রধান উপদেষ্টার সাহসী ওই কাজকে এখন পর্যন্ত সম্মান বা ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য-বিবৃতিও দেননি। বিষয়টি নিয়ে সর্বমহলে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
কী সেই সাহসী ভূমিকা :
ঘটনা এক
চলতি মাসে মিশরের রাজধানী কায়রোতে ডি-৮ সম্মেলন চলছিল। এর ফাঁকে একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সঙ্গে এই বৈঠকটি ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে। বলা যায়, একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ মাত্র। সেখানে থাকবে শুধু সৌজন্য বিনিময়, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই সৌজন্যতার খাতিরেই। কিন্তু বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ও বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসই নিজেকে সেই সৌজন্যতাকে এখানেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। বলেই ফেল্লেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফকে, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো মীমাংসা করার জন্য। জানালেন, ‘বিষয়গুলো বারবার আসছে। আসুন, আমরা সামনে এগিয়ে যেতে সেই বিষয়গুলোর ফয়সালা করি।’
এর জবাবে শাহবাজ শরিফ সেই অতীতের ভূমিকাই নিলেন..। সব সময় যে সব ঠিক হয়, সব ঠিক হয় বলে চেপে যেতে চাইলেন। শাহবাজ শরিফ বলেন, ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারত বিষয়গুলো মীমাংসা করেছে, কিন্তু যদি অন্যান্য অমীমাংসিত সমস্যা থাকে, তবে সেগুলো দেখতে পেলে তিনি খুশি হবেন।’ শাহবাজ শরিফের এমন জবাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূস খুশি হননি। আবারও দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দিলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিষয়গুলো চিরতরে সুরাহা করে ফেলা ভালো হবে।’ তার অর্থ হলো পাকিস্তানকে সাফ বুঝিয়ে দিলেন যে, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো মীমাংসা না হলে দেশটির প্রতি বাংলাদেশের ঘৃণাই চলমান থাকবে..।
ঘটনা দুই
সম্প্রতি হয়ে গেলো ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের ২৮ জন রাষ্ট্রদূত বৈঠক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন মাইকেল মিলার। সেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের দেশগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় কিংবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি জানান, 'ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করায় অনেক শিক্ষার্থী দিল্লি গিয়ে ইউরোপের ভিসা নিতে পারছেন না। ফলে তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বাংলাদেশের শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। ভিসা অফিস ঢাকা অথবা প্রতিবেশী কোনো দেশে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই উপকৃত হবে।
নীরবই থেকে গেল এমন ভূমিকা
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ও বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন সাহসী কণ্ঠস্বর ভূমিকা নিরবই থেকে গেল। কারো কণ্ঠে বা লেখনীতেও উঠে আসেনি ওপরের এমন দুটি সাহসী বক্তব্যের বিষয়টি। কেউ একটিবারও প্রশংসা করে রাজপথে অভিনন্দন জানায়নি। অথচ গত ১৭ বছর ধরে থাকা মুক্তিযুদ্ধে মহা সপক্ষের দাবিদার বলে পরিচিত আওয়ামী সরকারও পাকিস্তানকে কখনো এই ভাষায় কথা বলেনি। বরং মুক্তিযুদ্ধের মহাস্বপক্ষের শক্তি দাবিদার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারই শাসনামলে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহবাজ শরিফের জন্য ১ হাজার ৫০০ কেজি বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মৌসুমি আম শুভেচ্ছাস্বরূপ প্রেরণ করে দলের ভেতরে-বাইরে ব্যপক প্রশংসা(?) কুড়িয়েছিলেন বলে শোনা যায়।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ওই শুভেচ্ছা উপহার নাকি পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ধন্যবাদের সঙ্গে গৃহীত হয়। পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. রুহুল আলম সিদ্দিকী এক বিবৃতিতেও বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উপহার ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং পারস্পরিক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করবে।’ কিন্তু সেদিন ওই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটিবারই বলেননি যে পাকিস্তানকে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত সমস্যাগুলো মীমাংসা করার জন্য।
আবার কখনো বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপের দেশগুলোর ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে সরিয়ে ঢাকায় কিংবা প্রতিবেশী অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের অনুরোধও করেননি বা সাহসই হয়নি, যা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দাবি করে দেখিয়ে দিয়েছেন। অথচ এসব বিষয় নিয়ে এখনো পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দিল্লীর আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের অকুতোভয় সৈনিক দাবিদাররা নিরব। এমনকি বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে যুগপৎ এ আন্দোলনে থাকা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের রাজনৈতিক দলগুলিও এনিয়ে কোনো প্রশংসাসূচক বক্তব্য-ও দেয়নি, যা সর্বমহলেই আলোচিত হচ্ছে। আলোচিত হচ্ছে দেশের অকুতোভয় স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক বলে দাবিদার এসব রাজনৈতিক দলগুলো আসলে সত্যিকার্থে কি সাহসী? তারা কি আসলেই মুক্তিকামী? নাকি তারা যুগযুগ ঘরে জন্ম থেকেই শিখে আসা দাসত্বকেই বরণ করে নেবে? তা না হলে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ও বিশ্ব বরেণ্য অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস একযোগে ভারত-পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাটিং করেও কেনো সে-ই সাহসী সন্তানদের তালিকায় স্থান পাচ্ছে না? অথচ দেশের ভেতরে বাইরে একটি মহল শক্ত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের ৭১-এর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাংলািেদশে প্রতিষ্ঠা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আবার এমন অভিযোগ উঠেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছেন? এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সব মহলে আলোচিত হচ্ছে।