দেশজুড়ে আনাচ-কানাচে আলোচনা সংস্কার শেষে নাকি সংস্কার ছাড়া কাক্সিক্ষত নির্বাচন শেষে কখন আসবে নতুন সরকার? জুলাই-আগস্ট আন্দোলন শেষে ১০০ দিন পেরিয়ে গাছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো হয়েছে কি, খারাপ হয়েছে সেটি পোড় খাওয়া সাধারণ জনসাধারণ টের পাচ্ছে। দীর্ঘদিনের আধিপত্যবাদী শাসন শেষে জমে থাকা জঞ্জাল পরিষ্কার করে দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে সেটি কেউ ভাবে না। কিন্তু অনির্দিষ্ট সময় লক্ষ্যহীন যাত্রায় দেশ চলুক সেটিও কাক্সিক্ষত নয়। বৈষম্যহীন ছাত্র-জনতা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নে আত্মাহুতি দিয়েছে তার মূলে রয়েছে পরিবর্তিত সামাজিক ব্যবস্থা।
সর্বজনীন ভোটের অধিকার, সর্বক্ষেত্রে বৈষম্যহীন সামাজিক অবস্থান, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের পরিবেশ। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৬টি বিশেষ খাত চিহ্নিত করে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। ডিসেম্বর ৩১ নাগাদ কমিশনগুলো সুপারিশমালা করবে। সরকার রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজসহ সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে সম্মত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের পথ নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি সদ্য পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধন সংযোজন শেষে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে। বর্তমান সরকার যদি নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখে নির্মোহভাবে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যায়, তাহলে সাধারণ বিবেচনায় ২০২৫ শেষদিকে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব বলেই মনে হয়।
সাধারণ দৃষ্টিতে ওপরের কাজগুলো বাস্তবসম্মত মনে হলেও বিদ্যমান পরিস্থিতি কিন্তু জটিল। দেশে আইনের শাসন দারুণভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ বাহিনী এখনো অগোছালো, আস্থাহীন। বিভিন্ন সংগঠন নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়কে অচল অবস্থা সৃষ্টি করছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিল্পাঙ্গনে অস্থিরতা নিরসনের ক্ষমতা দক্ষতা বিশেষ অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আশা সরকারের ক্ষমতার অতিরিক্ত। উপরন্তু সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু মহল অকারণে কিছু প্রসঙ্গ তুলে সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
কিছু বিষয় যে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ, সংবিধান পরিবর্তন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার সমর্থক কিছু মহলের মতপার্থক্য পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলার আগেই ন্যূনতম সংস্কার সম্পাদন করে নির্বাচনী পথ পরিকল্পনা ঘোষণা অপরিহার্য।
গণতান্ত্রিক দেশে মত, পথের পার্থক্য থাকবেই। সব মত-পথের শান্তিপূর্ণসহ অবস্থানের নাম গণতন্ত্র। সত্যিকার অর্থে সেই গণতন্ত্রের স্বপ্ন বাংলাদেশের থাকলেও স্বাধীনতা অর্জনের ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশ অর্জন করতে পারেনি। নানা গুজবম নানা ষড়যন্ত্রের কারণে ১৯৭১ ও ১৯৯০ লক্ষ্য অর্জন হয়নি। একইভাবে ২০২৪ আত্মত্যাগ ব্যর্থ হোক সেটি আদৌ কাঙ্ক্ষিত নয়. মূল লক্ষ্য যেহেতু গণমানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা, তাই অচিরে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে জনআকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে স্বচ্ছ দায়িত্বশীলভাবে দেশ পরিচালনা করুক সেটি সবাই চায়। আশা করি, সরকার অবিলম্বে নির্বাচনী ট্রেন কবে নাগাদ শেষ স্টেশনে পৌঁছবে তার ইঙ্গিত দেওয়া প্রাসঙ্গিক হবে। সম্মত সংস্কারগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকবে নির্বাচিত সরকারের ওপর। তবে সব রাজনৈতিক দলকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম অনুমোদনের অঙ্গীকার করতে হবে, কাউকে বাদ দিয়ে নয়, সব দলকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।