২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:৫০:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দেখেশুনে এগোতে চায় বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৪
দেখেশুনে এগোতে চায় বিএনপি


টানা চতুর্থবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির মারপ্যাঁচে বহুদূরে চলে গেছে বিএনপি। অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতা অক্ষত রেখেছে আওয়ামী লীগ। আসলে এমন কথা নিরর্থক। রাজনীতিতে অনেক কিছুই হয়, হবেও। দিন শেষে সফলতাই বড় কথা। আওয়ামী লীগ সেই সফলতার স্বর্ণশিখরে। আর সে মসনদে উঠতে যেসব পিচ্ছিল সিঁড়ি তারা অতিক্রম করেছে, ওটাই তাদের কৌশল। ভারতের সহযোগিতা না রাশিয়া, চীনের সহযোগিতা ওইসব বলে কয়ে কোনো লাভ নেই। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রসহ বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহকে আয়ত্ত করাটাই একটা রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলের অংশবিশেষ। এ পর্যন্ত ওই কৌশলে ব্যর্থ বিএনপি। ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির এখানেই কূটনৈতিক ব্যর্থতা। বহির্বিশ্বে তারা এমন বন্ধু তৈরি করতে পারেনি, যার মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরতে একটা অবলম্বন খুঁজে পাবেন তারা।

আন্তর্জাতিক বিশ্বে সবাই কিছু না কিছু সমস্যায় জর্জরিত। কেউ রাজনৈতিক, কেউ ভৌগোলিক, কেউ অর্থনৈতিক বা কেউ অভ্যন্তরীণ। এটা সবারই প্রবলেম। এরপরও সে সব বন্ধুদের হাতের নাগালে নিয়ে আসতে পারাটাও বড় বিষয়। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক এ সম্পর্ক বরাবর দুর্বল বলে অনেকে ধারণা পোষণ করতেন। কিন্তু এক্ষেত্রে এবার যা তারা করেছে, তাতে ওই দুর্বলতা যে তাদের নেই, তার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে। দেশের একটা প্রধান ও জনপ্রিয় দলকে অনেকটাই কারাগার বন্দি করে, পাশাপাশি বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমাদের দীর্ঘ প্রত্যাশা, আদেশ নিষেধ সাইট করে একটা নির্বাচনের মাধ্যমে যেভাবে ক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন শেখ হাসিনা সেটাও তার প্রিপ্ল্যান রাজনীতিতে দক্ষতার প্রমাণ মেলে। 

শেখ হাসিনার এমন একপেশে কৌশলে চরমভাবে মার খেয়েছে দেশে আওয়ামী বিরোধী পক্ষ। শুধুই যে বিএনপি তা নয়, জামায়াতসহ অন্যান্য বিরোধীদলসমূহ এ ধারায় কুপোকাত! 

এ মুহূর্তে নিজেদের মধ্যে প্রচণ্ড আস্থার অভাব দেখা যায় এসব বিরোধীদলসমূহের মাঝে। কিন্তু পিঠ ঠেকে গেছে দেওয়ালে। ইতিমধ্যে সংসদে দাবি উঠেছে, বিএনপির নিবন্ধনই বাতিলের। কানাডার আদালত বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলেছিল বলে কথিত আছে। তাই বিএনপির মতো সন্ত্রাসী সংগঠন কেন রাজনীতি করবে বাংলাদেশে এ দাবি আওয়ামী লীগের সাংসদ ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের। উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে বিএনপির কর্মকাণ্ডে সে দাবি বাহাউদ্দিন নাছিমের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এত সাহসের উৎস কোথায়? 

নির্বাচনের পর বিএনপি বড় কোনো কর্মসূচিতেই যায়নি। কালো পতাকা মিছিল করেছে মাত্র। এতেই দলটির বিরুদ্ধে এতো কথার নিগূঢ় রহস্য কী সেটাই প্রশ্ন। অবশ্য বিএনপির বিশাল জনসমর্থন রয়েছে বটে, কিন্তু নেতৃত্বে দুর্বলতা রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। বিদেশে বসে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দক্ষ হাতে দল পরিচালনা করছেন ঠিকই। বিএনপির এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না, কিন্তু বিএনপির বিরোধী যারা তাদের তাতে বেশ সমস্যা। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভীষণ অসুস্থ। ডাক্তারের পরামর্শে চলছে তার দিনকাল। রাজনীতির খবরটুকু রাখেন বটে, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত তিনি দিতে পারছেন না। ফলে তারেক রহমানই সব। এছাড়া দেশে রয়েছে একঝাঁক নেতৃত্ব। যাদের অনেকেই কারাগারে। এদের অন্যতম দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ২৯ অক্টোবর পুলিশ নিজ বাসা থেকে আটক করে সে থেকেই তিনি কারাগারে। দলের দাবি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি প্রায় ২৫ হাজারের মতো নেতাকর্মী আটক কারাগারে। ফলে এমতাবস্থায় বিএনপি কার্যত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ধীরে চলা নীতিতেই হাঁটছে। 

তাছাড়া সামনেই পবিত্র মাহে রমজান আসছে। এগুলোও বিবেচনায় নিয়ে কিছুটা দেখেশুনে কর্মসূচি দেবে, যা আবার তৃণমূল থেকে ধীরে ধীরে এগোবে বলে জানা গেছে। 

মূলত বিএনপির মূল নজর দেশের অর্থনীতির দিকে। পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রসমূহের পদক্ষেপ বা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তাদের নীতি কী স্থির হয় সেটাও বিশ্লেষণ করতে চায় দলটি। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রায় বছরখানেক আগ থেকে কিছুটা নিরুপায় হয়েই অহিংস আন্দোলনে মনোনিবেশ করে। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর সেটা আর ছিল না। দিয়েছে তারা হরতাল অবরোধ কর্মসূচি। কিন্তু তাতে রাজনীতির মাঠ তেমনটা উত্তপ্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের একগুঁয়েমি মনোভাবের কাছে নত হয়ে নির্বাচন বর্জন করেই ক্ষ্যান্ত দেয়। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে লিফলেট বিতরণ নিয়েই ছিল ব্যস্ততা। তবে দলের সিনিয়র বহু নেতা নির্বাচনের আগ থেকেই কিছুটা গা-ঢাকা দিয়েছেন। বিশেষ করে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে। ফলে হাতেগোনা কয়েকজন মাঠে ছিলেন অ্যাকটিভ। অন্যরা আড়ালেই ছিলেন। এখনো সেসব নেতা গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠেনি। কবে নাগাদ তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসবে সেটাও ঠাহর করা যাচ্ছে না। 

অভিযোগ আছে বিএনপির আন্দোলনের গতিবিধি নিয়েও। কঠোর আন্দোলনে দলটি যায়নি কখনোই। এটাতেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা কিছুটা বিস্মিত। তাদের অভিন্ন বক্তব্য তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই বেশি নির্যাতিত। সে তুলনায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বেশ সুখেই। ফলে তাদের এ গা-ছাড়া ভাবের কর্মসূচি দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারকে টলানো যাবে না, এটা তারা আগেই ঠাহর করেছিল। কিন্তু কেন্দ্র যদি সোচ্চার না হয়, তাহলে তৃণমূলের তো কিছু করার নেই। তাছাড়া যেসব নেতা সংসদীয় এলাকার। যারা সুযোগ এলে ওইসব এলাকায় নির্বাচন করবেন, তারা তৃণমূলের খবরও রাখছেন না দীর্ঘদিন থেকেই। কর্মীরা কেমন আছে, কোনো বিপদ-আপদে রয়েছেন কি না, তাদের সহায়তা প্রয়োজন কী কোনো কিছুতেই খবর নেই। নানা কারণে তৃণমূলের ক্ষোভও রয়েছে। ফলে এসব দিকেই এখন নজরদানের চিন্তা চলছে বলে জানা গেছে। এবং সবকিছুর সমন্বয় ঘটিয়ে সবাইকে আশ্বস্ত করেন ও সুন্দরভাবে বুঝিয়ে আবারও আন্দোলনমুখী করার প্ল্যান দলটির বলে জানা গেছে।

শেয়ার করুন